পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] “জরৎকারু ত্যাগ করিলে পর মনসা কৈলাসে প্রস্থান করেন, সেখানে আস্তীক ভূমিষ্ঠ হন। সেই পুত্র মাতৃগর্ভে নিবাসকালে পঞ্চাননের মুখোচ্চারিত মহাজ্ঞান শ্রবণ করিয়াছিলেন। আন্তীক ভূমিষ্ঠ হইলে মহাদেব আন্তীকের জাতকৰ্ম্মাদি সম্পন্ন করাইলেন, বেদাধ্যয়ন করাইলেন। আস্তীকের কল্যাণের জন্ত মহাদেব তিন লক্ষ কোটি রত্ব এবং পাৰ্ব্বতী এক লক্ষ গেী ও বহুতর রত্ন ব্রাহ্মণকে দান করেন। তার পর মনসা পুত্র সহ কশ্বপাশ্রমে গমন করেন। কশ্যপ সানন্দে তাহাদিগকে গ্রহণ করিয়াছিলেন ।” ( প্রকৃতি খণ্ড, ঘট্‌চত্বারিংশ অধ্যায় ) সাম-বেদোক্ত বলিয়া ব্ৰহ্মবৈবৰ্ত্ত-পুরাণের মনসার যে ধ্যান উদ্ধৃত হইয়াছে তাহীতেও দেবী মহাজ্ঞানযুক্তরূপে বর্ণিত হইয়াছেন। জানি না সামবেদে কিরূপ ধ্যান লিখিত আছে, এবং সায়ণ তাহার কি অর্থ করিয়াছেন । মহাজ্ঞান সম্বন্ধে আমাদের ধারণা অন্যরূপ । হিন্দুদের ব্ৰহ্মজ্ঞানের কথা চির-প্রসিদ্ধ, দিব্যজ্ঞান এবং তত্ত্বজ্ঞানও আমাদের অপরিচিত নহে, কিন্তু মহাজ্ঞান বোধ হয় বৌদ্ধদেরই নিজস্ব সম্পত্তি। বৌদ্ধ-শাস্বমতে ইহার অপর নাম “প্রজ্ঞাপারমিতা”-—ময়নামতীর গানে আড়াই অক্ষর মহাজ্ঞানের উল্লেখ আছে । মনসাদেবী চাদ সওদাগরের নিকট হইতে যে মহাজ্ঞান হরণ করেন তাহাও আড়াই অক্ষরে রচিত ছিল। ইহার স্বরূপ “হুং” বলিয়া মনে হয় । যাহা হউক আমাদের তেত্রিশ কোটি দেবতার মধ্যে অনেকেরই “উংকৃষ্ট জ্ঞান অতিশয় গোপ্য” হইলেও এবং মৃত মনুষ্যকে জীবিত করিবার ক্ষমতা থাকিলেও হিন্দুশাস্ত্রে এক মনসা ভিন্ন অপর কেহই মহাজ্ঞান-যুত বলিয়া বর্ণিত হন নাই । দৈত্যগুরু শুক্রের নিকট হইতে প্রাপ্ত কচের সঞ্জীবনী-বিদ্য ইহা হইতে পৃথক বলিয়াই মনে হয়। ইহার আর একটি বিশেষত্ব—একজনকে দান ৯রিলে এই মন্ত্র পূর্বাধিকারীর নিকট আর ফলপ্রদ হয় না, মঙ্গল-কাব্যে চাদ-সওদাগর তাহার প্রমাণ । মঙ্গলকাব্যে বর্ণিত আছে—চম্পাধীশ্বর চন্দ্রধর সওদাগর (চাদবেণে ) যে চারিটি মূল্যবান সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন (মহাজ্ঞান, গন্ধেশ্বরী, নাখড়া-বন, হেঁতাল-লড়ি )—মহাজ্ঞান তাহার অন্যতম। চাদকে ( Ջաած: মনসা ছলনা করিলেন । 8や《r AeAMAeAMA SAMA AMA AMAAA AAAA AAAA AAAA AAAAeAAAS কোনো রকমে জবা করিতে ন পারিয়া মনসা একদিন নেতধোপানীর পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিলেন। নেত ধোপার মেয়ে হইলে কি হয়, সচিব হিসাবে মনসার তিনি সৰ্ব্ব কার্য্যে সহায় ছিলেন, এবং মন্ত্রণায় তাহার স্বনাম ছিল। নেত মন্ত্রণা দিলেন— “যে কাটিতে পারে নাথড়ার এক পাত । সেই কাটিতে পারে চাদবেশের মাথ ॥” মনসা সাঙ্গোপাঙ্গ সহ নাখড়ার বন কাটিতে গমন করিলেন, বন প্রায় নিৰ্ম্মল হইবার উপক্রম হইল। “বাগানী” গিয়। চাদকে সংবাদ দিল,—“রাজা তোমার দেশে বড় দুরাহি পড়িল হে, নাখড়া গোল কাটিলেক সকল ।” রাজা বলিলেন—“অৰ্দ্ধেক ষখন কাটা হুইল তখনো কেন সংবাদ দিলি না ? যাউক যে বন কাটিতেছে তাহাকে কেমন দেখিলি ?” “বাগানী” বলিল— “সে কক্স মনুষ্য নয়, সে কন্যা দেবরূপী হয়। সে কন্যা উতু ক’রে বাধে ঝুটি, পরিধানে নেত ধটি, হান হান বলিছে ঘনে ঘন।” শুনিয়া রাজা “গন্ধেশ্বরীর বারি” হাতে করিয়া হুহুঙ্কার ছাড়িলেন। অম্‌নি নাখড়ার বনে কাটা গাছে সহস্র ডাল গঙ্গাইয়া উঠিল। মনসা ভগ্নমনোরথ হইয়া ফিরিলেন । অতঃপর তিনি মানবী-মুক্তিতে চন্দ্ৰধরকে পরিচয় দিলেন, “আমি তোমার রাণী সনকার কনিষ্ঠা কনক, বাল্যকাল হইতে শ্বশুরালয়ে ছিলাম, স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় স্বামী তাড়াইয়া দিয়াছে, তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি।” সওদাগর সুন্দরী শু্যালিকার মোহে ভুলিয়। তাহাকে “মহাজ্ঞান মন্ত্র” এবং ’গন্ধেশ্বরীর স্নবর্ণ-নিৰ্ম্মিত “বারি" চিরতরে দান করিলেন। মহাজ্ঞান অপহৃত হওয়ায় অবসাদে আচ্ছন্ন হইয়া সওদাগর যখন শু্যালিকার উরুদেশে মস্তক রাখিয়া নিদ্র। যাইতেছিলেন, সেই অবসরে দেবী অন্তহিত হইলেন। এইবার নাখড়া-বন সমূলে বিনষ্ট হইল, সওদাগরের সর্বনাশের স্বত্রপাত হইল। চাদ তথাপি চ্যাংমুড়ি কাণীর পূজা করিলেন না, শেষ সম্বল হেঁতালের লড়ি গ্রহণ করিয়া দেবীর বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলেন। ইহা হইতে বুঝিতে পারা যায় দান না করিলে মহাজ্ঞান অপহৃত হইত না, এবং দান করিয়াছিলেন বলিয়া মন্ত্র আর ফলপ্রদ হয় নাই।