পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রসঙ্গ নারীর উপর অত্যাচার জগতের সভ্যতম দেশসকলেও মানুষ অনেক বিষয়ে বর্বরতার অবস্থা অতিক্রম করিতে পারে নাই। একটি বিষয় এই যে, দুই জাতির মধ্যে যুদ্ধ হইলে উভয় পক্ষের সৈন্যেরাই সুবিধা পাইলেই শত্রু জাতির স্ত্রীলোকদের উপর অত্যাচার করে। ইউরোপে গত মহাযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্র যে যে দেশে অবস্থিত ছিল, সেখানেই স্ত্রীলোকদের উপর পাশব আচরণের বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। যুদ্ধের সময়েই হউক, কিম্বা শাস্তির সময়েই হউক, নারীর উপর এইরূপ অত্যাচার যখন আর হইবে না, তখন বুঝা যাইবে, যে, মানুষ পশুত্বের অবস্থা অতিক্রম করিয়া মানবত্ব লাভ করিয়াছে । বস্তুতঃ, নারী যে-দেশে, অরক্ষিত অবস্থাতেও, যত নিরাপদ, সেই দেশকে তত সভ্য বল। যাইতে পারে। নারীর নিঃশঙ্ক অবস্থায় কালযাপন সভ্যতার একটি মাপকাঠি । - আমাদের দেশে একদল লোক আছেন, যাহার আমাদের জাতির কোন দোষের আলোচনা করিলেই পাশ্চাত্য দেশসকলে সেই দোষ বা তাহার-মত অন্য কোন দোষের অস্তিত্ব প্রমাণ করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করেন, এবং মনে করেন, যে, তাহার দ্বারা প্রমাণ হইয়। গেল, যে, আমরা খুব ভাল। কিন্তু যদি কোন দোষ পৃথিবীর সকল দেশে থাকে, তাহ হইলেও তাহ দোষ ; এবং তাহা আমাদের মধ্যে থাকিলে, তাহা দূর করিবার জন্য সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক । আমাদের দেশে আগে আগে যখন যুদ্ধ হইয়াছে, তখন নারীর উপর অত্যাচার হইয়াছে। আধুনিক সময়েও মোপলা-বিদ্রোহের সময় এই প্রকার অত্যাচার হইয়া গিয়াছে। তা ছাড়া, আমাদের দেশে হিন্দুমুসলমানের দাঙ্গা প্রভূতিতেও নারীর উপর অত্যাচার হয়। পুলিসের দ্বারা এরূপ অত্যাচার বিরল নহে। ডাকাইতরাও কখন কখন এইরূপ অত্যাচার করে। নারীর উপর আর-একপ্রকার অত্যাচার আমাদের দেশে শাস্তির সময়ে হয়, যাহ অন্ত কোন সভ্যদেশে হয় কি না জানি না। হুইলেও তাহার দ্বারা এ দেশের অত্যাচারী পুরুষদের পশুত্ব এবং লাঞ্ছিত নারীদের অত্মীয়স্বজন ও সধৰ্ম্মীদের কাপুরুষতা প্রশংসনীয় গুণ বলিয়া প্রমাণিত হইবে না। বঙ্গে অনেক দুৰ্ব্বত্ত লোক ভয় দেখাইয়া ও বল প্রয়োগ করিষা অনেক বিধবার সৰ্ব্বনাশ করে। কখন কখন আদালতের বিচারে এই নরপশুদের শাস্তি হয় ; কিন্তু তাহাতে এই প্রকার পাপাচার কমিয়াছে বলিয়া মনে হয় না। দুৰ্ব্বত্ত লোকেরা পশিব আচরণে যেরূপ কুসাহস দেখায়, সং লোকেরা তাহা দমনে ও নিবারণে তাহ অপেক্ষ বেশী, অন্ততঃ তাহার সমান, সৎ সাহস না দেখাইলে ইহার প্রতিকার হইবে না । সমাজের মধ্যেও নূতন করিয়া প্রাণ সঞ্চার করিতে হইবে। এখন যে-সব দুৰ্ব্বত লোক এই-সব কাজ করে, তাহারা সমাজে পতিত হয় না, কিন্তু লাঞ্ছিত। নারীরা সমাজকর্তৃক পরিত্যক্ত হন। যে-সব দুৰ্ব্বত্ত লোক এইরূপ কাজের জন্য রাজদ্বারে দণ্ডিত হয়, তাহারা পৰ্য্যন্ত বুক ফুলাইয়া সমাজে দশজনের সহিত অবাধে মেলামেশা করে। সমাজ-দেহে প্রাণ থাকিলে লাঞ্ছিতারা পতিত বা পরিত্যক্ত হইতেন না, জ্বরাচার পশুরাই পতিত ও বহিষ্কৃত হইত। একদিকে অস্থরত্ব ও পিশাচত্বের এবং অন্যদিকে কাপুরুষতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বার বার পাওয়া •যাইতেছে। পতিগৃহ হইতে, পতির ও আত্মীয়স্বজনের সম্মুখ হইতে, জোর করিয়া স্ত্রীকে ধরিয়া লইয়া গিয়৷ তাহার সৰ্ব্বনাশ সাধনের দৃষ্টান্ত আর কোন সভ্যদেশে পাওয়া যায় কি না, জানি না। এইরূপ ঘটনার বৃত্তাস্ত