পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓፃ8 , প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩e [ २०° उ**, sञ थ७ বিদায়-বরণ স্বামী-গৃহের সহিত পরিচিত হইবার পূৰ্ব্বেই একদিন স্বামী একটা ট্রাঙ্ক ও একটি হাত-বাক্স দেখাইয়া বলিলেন —“এ সব এখন তোমারই । হাত-বাক্সের উপর যে নামটা লেখা আছে,—সেট তুলে ফেলে’ তোমার নাম লিথিয়ে দেবো।” উত্তরে আমার অন্তরাত্মা নীরবে কাদিয়া উঠিয়াছিল,-“তোমরা এমনি পাষাণই বটে। যাহাকে একদিন আদরে আহলাদে বোধ হয় মাথায় তুলিতেও দ্বিধা কর নাই, বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাহার স্মৃতিটাকেও তোমরা এমুনি করিয়াই তোমাদের কঠিন বুক হইতে নিশ্চিহ্ন করিয়া মুছিয়া ফেলিয়া দ্যাও । নহিলে মাত্র দুই মাস হইল যাহার স্ত্রী-বিয়োগ হইয়াছে, আমি আজ তাহার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী।” শ্রাবণের নিঃস্তন্ধ দ্বিপ্রহরে সারা বাড়ীখন যেন কৰ্ম্মক্লাস্ত হইয়া আলস্যে বিশ্রাম করিতেছিল। ক্ষণকাল পূৰ্ব্বে এক পসলা বৃষ্টি হইয়া থামিয়া গিয়াছিল। একটা ভাঙ্গ টিনের কোঁটার উপর ছাদের নালি হইতে তালে তালে বিন্দু বিন্দু জল পড়ার শব্দ ঠিক দূরাগত ধাদ্যের মতই শুনাইতেছিল। নিঃসঙ্গ গৃহে আমি তখন ভাবিতেছিলাম-নিজের অদৃষ্টের কথা। প্রথম যেদিম “রৌদ্রদগ্ধ শুষ্ক মলিনমুখে আমার দরিদ্র পিতা গৃহ-প্রবেশ করিয়া একটা হতাশের দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া বসিয়া পড়িলেন, সেই প্রথম বুঝিলাম — আমি সে বাড়ীর কত বড় একটা গলগ্ৰহ হইয়া পড়িয়াছি। গ্রামস্থদ্ধ ইতর ভদ্র স্ত্রী-পুরুষের বদ্ধমূল ধারণা ছিল,— আমার বিবাহের জন্ত আমার বাবাকে কিঞ্চিংমাত্র বেগ পাইতে হুইবে না ; এবং সকলেই একবাক্যে প্রচার করিতেও ভুলিত না, যে, সে বিবাহে এক কপদক ব্যয়ও হুইবে না,—জামি নাকি এমনই স্বন্দরী। এই আশ্বাসের উপর নির্ভর করিয়া বাবা নিশ্চিন্ত ছিলেন কি না জানি 'না, কিন্তু আমার বিবাহের বয়স প্রায় উত্তীর্ণ হইতে চলিল, অথচ উপযাচক হইয়া কেহই আমার ‘রূপ’ & ভিক্ষা করিল না দেখিয়া অগত্যা তিনি একরূপ আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়াই আমার জন্য পাত্র অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন । এই সন্ধানের ফলে তিনি বুঝিলেন —দেশ কেবল মাত্র রূপের মর্ধ্যাদা রাখিতে স্বীকৃত নহে, যদি তৎসঙ্গে বেশ কিঞ্চিৎ রূপার দক্ষিণার ব্যবস্থা না থাকে । পনর বৎসরে পদার্পণ করিলাম। বাবা কস্তাদায় হইতে মুক্ত হইবার জন্ত সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকা সত্বেও মা অষ্টপ্রহর তাহাকে উৎপীড়ন উদ্বাস্তু করিতে লাগিলেন। একদিন সামান্ত কথাস্তরে বাবা মার উপর ক্রুদ্ধ হইয়। অসময়ে অনাহারে গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন ; এবং প্রতিজ্ঞা করিয়া গেলেন—“আমাকে পার করার ব্যবস্থা না করিয়া তিনি গৃহে ফিরিবেন না। ক্ষণকালের জন্য সমস্ত বাড়ীখানা নীরব স্তন্ধ হইয়া গেল। চতুর্দিকে অণুপরমাণু যেন ঘৃণায় বিরক্তিতে বিদ্রুপ-দৃষ্টিতে আমাকেই লক্ষ্য করিতে লাগিল,- এ অশাস্তি উদ্বেগের একমাত্র কারণ এই কালামুখী । মা বস্ত্রাঞ্চলে চক্ষু মুছিতে মুছিতে বলিতে লাগিলেন– “কি অশুভক্ষণে মেয়ের জন্ম হয়েছিল, পোড়াকপালীর জালায় জলে’ ম’লাম ।” আমি যে পিতামাতার কতবড় গুরুভার জঞ্জাল, তাহা ভাবিতেও আমার দুই চক্ষু ভরিয়া জল আসিল। সকলের দৃষ্টির সস্থ হইতে নিজেকে গোপন রাখিবার জন্য নির্জন গৃহে চলিয়া গেলাম । দেশের উপর অভিমান করিয়া, সমাজকে বিদ্রুপ করিয়া “স্নেহলতা দিদি" যে পথ নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন, আমিও কেন সেই পথ অনুসরণ করিয়া পিতামাতাকে এ দায় হইতে মুক্ত করিয়া দিই না ! এ চিস্তাতেও আমি শিহরিয়া উঠিলাম। অনাহারে দ্বিপ্রহর উত্তীর্ণ হইয়া গেল, কেহ আমার সন্ধানও লইল না। উপুড় হইয়া মুখ গুজিয়া অভিমানে ফুপাইয়া ফুপাইয়া কাদিতেছিলাম । কাহার স্নেহ-কোমল করম্পর্শে মুখ তুলিলাম । মা