পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা } কবীর সাহেবের জীবনী ও বাণী আচার সম্প্রদায়ের চতুর্থ ( কারে কারো মতে ৫ম বা ৬ষ্ঠ ) গুরু ষ্টম রামানন্দ । ১৪ • • খৃষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনে সময়ে প্রয়াগে দবিড়ী ব্রাহ্মণবংশে রামানদের জন্ম হয় ; উপর পিতৃদত্ত নাম ছিল রামদত্ত ; গুরুদত্ত নাম রামাননা ... গুরু রামানন্দ তার শিষ্যদের নাম রাথলেন "অবধূত" অর্থাৎ সংস্কারমুক্ত। গুরু রামানন্দ বাস্তবিক গুরু নামের যোগ্য ; তিনি সত্যভ্রষ্ট পতিতপাধন ছিলেন এবং গুরু রামানদের নীচ জাতীয় শিষ্যগণ থ শ্ব জ্ঞান ভক্তি ও চরিত্রের দ্বারা ভারতবর্ষকে পধিত্র ক'রে রেখেছেন । গুরু রামান্য এইরূপে ভারতে জাতীয় একতার মূল ভিত্তি স্থাপন ক'রে গেছেন । রামানদের শিষ্যদের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা বিখ্যাত হয়েছেন কবীর । কবীরের জন্ম সম্বন্ধে নামা কিম্বদন্তী আছে। তন্মধ্যে বহুপ্রচলিত জনশ্রুতি এই—কবীর কাশীর এক বিধবা ব্রাহ্মণকস্তার পুত্র ব্ৰাহ্মণকম্বা আপনার কলঙ্কচিহ্ন সদ্যজাত পুত্রকে কাশীর লহর তালাব নামক পুষ্করিণীতে একটি পদ্মপাতায় শুইয়ে ভাসিয়ে দেন। প্রভাতে নিমানাম্নী একটি জোল-জাতীয় স্ত্রীলোক ও তার স্বামী নির বা মুর আলা ঐ স্থান দিয়ে বিবাহের নিমন্ত্রণে যাচ্ছিল । নিম তুষ্ণাৰ্ত্ত হয়ে ঐ সরোবরে জলপান করতে গিয়ে দেখলে কমলপত্রে কোন কলঙ্কিনীর লক্ষ্মী ও স্নেহবেদনার ধন সদ্যজাত শিশু ভাস্ছে । শিশুর "সুন্দর হরত মোহন মুরত কমল-নৈন" ( সুন্দর শ্ৰী মোহন মূৰ্ত্তি ও কমল-নয়ন) দেখে যুগ্ধ ও স্নেহদ্র হয়ে নিঃসস্তান নি। ঐ শিশুকে তুলে নিয়ে স্বগৃহে প্রস্ত্র্যাবৰ্ত্তন করেন ।-- ১৪৫৫ সংবতে ( ১৩৯৮ খৃষ্টাব্দে ) জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের সোমবারে পূর্ণিমা তিথি বর্ষাকালে প্রকট হয়েছিল, ভখন মেঘ ডাকৃছিল, বিদ্যুৎ ১থক;চ্ছিল, বৃষ্টি পড় ছিল, ঝড় হচ্ছিল । এমন সময়ে লহর-পুষ্করিণীর গলে প্রফুল্ল কমলের মধ্যে কবীর-ভাকু প্রকাশিত হয়েছিলেন । লৈহর তালাল-মে কমল খিলে তাছ) কবীর-ভান প্রকাশ ভয়ে ৷ ...জোলা-দম্পতী শিশুকে গৃহে এনে নিজের পুত্রবৎ পালন করতে লীগ লেন । তারা শিশুর নামকরণের জন্ত একজন কাজীকে ডেকে আনলেন । কাজী এসে কোরান খুলতেই তার দৃষ্টি পড়ল কবীর শব্দের উপর। শিশু সেই নামেই পরিচিত হলেন । কবীর আরবী শৰ্ম্ম : তার অর্থ মহান, বৃহৎ বা ব্রহ্ম, পরমেশ্বর। কাশী হিলুপ্রধান স্থান। কবীরের পালক পিতা নির সেথের প্রতিবাসী প্রায় সকলেই ছিল হিন্দু। বালক কবীর হিন্দু বালকদের সঙ্গেই খেলা করতেন। উার খেলা ছিল ভগবৎপূজন ও ভগবানের নাম কীৰ্ত্তন। হিন্দু বালকদের সংসর্গে তিনি ভগবানের ভারতবীর ভাষার নামই কীৰ্ত্তন ফরতেন ।.. কবীর জগতে জোল লে লোকে উাকে উপহাস করত । তার উত্তরে কবীর বলেছিলেন কবীর তেরে জাত কো সব-কোই হাসনহার বলিহারী ওয়া জাত কে ক্তে সিময়ে স্বজনহয় । ওরে কবীর, তোর জাতের জন্তে সবাই তোকে উপহাস করে। বলিহারী ঐ জাতের যে সৃষ্টিকৰ্ত্তাকে স্মরণ করে। কারণ স্বয়ং ভগবান একজন মহাষ্ঠাতী— ধরণ আকাশ-কী কারগাহ বানায়ী । हन्म ट्रब्रछ छूझे नाल काशाशैौ ॥ কষ্টিপাথর—কবীর সাহেবের জীবনী ও বাণী لا لا لا ধরণ ও আকাশকে কারখানা বানিয়ে তিনি চন্দ্ৰস্থৰ্য্য দুই মাকু হরদম চালাচ্ছেন --- . . কবীর প্রত্যহ একখানি মাত্র বস্ত্র বয়ন করতেন। এবং সেই কষ্ট্র বিক্রয় করে যা পেতেন তা থেকে নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদলের উপযুক্ত অর্থ রেখে বাকী অর্থ দরিদ্র সেবায় দান করতেন --- কবীর সহজ ভক্তি ও নির্ভুক্ত জ্ঞান লাভ করলেও একজন সৎগুরু লাভের জন্ত ব্যাকুল হলেন ।-- কবীর রামানঙ্গেয় থ্যাতি শুনেছিলেন। হলেন - •• ব্রাহ্মণ রামাননা স্বচ্ছদে মুসলমানকে শিষ্য বলে স্বীকার কয়েছিলেন একথা মেনে নিতে ছুৎমাগী জাতওয়ালাদের মনে লাগে । তাই তারা গল্প রচনা করেছে যে রামানন্দ কবীরকে মন্ত্রীক্ষা দিতে অস্বীকার করেন। কবীর অগত্য গভীর রাত্রে রামানন্দের বাড়ীর দরজায় গিয়ে শুয়ে রইলেন ; প্রতুলে রামানন্দ গঙ্গাস্নানে যাবার জন্ত বাহিরে প। দিতে গিয়ে কবীরের গায়ে পদার্পণ করেন । অজ্ঞাতসারে একজন লোকের গায়ে পা দিয়ে সঙ্কোচে রামানঙ্গ বলে ওঠেন "রাম রাম ” এই গাত্রম্পর্শপুৰ্ব্বক রাম-নাম উচ্চারণকেই কবীর রামানলের মন্ত্রীক্ষা বলে মেনে নিয়েছিলেন । কবীর ভগবানকে রাম ( আনন্দময় ), প্রভু, সাই ( স্বামী), আল্লা, খোদা ( স্বধী বা আত্মপ্রতিষ্ঠ ), পুরা সাহব (অর্থাৎ পূৰ্ণব্ৰহ্ম ), অনগঢ়িয়া কবীর তার শরণাপন্ন দেবী (অগঠিত বা স্বয়স্তু দেবতা) প্রভৃতি নামে করেছেন । যিনি নাম-রূপের অতীত সকল নাম রূপ তারই এ-কথা ক বুঝেছিলেন।... তাই কবীর বারম্বার বলেছেন— ***من , -- y অলখ ইলাহী এক হ্যায়, নাম ধরায় দোয় । ی ؟ - ... রাম রহীমা এক হ্যায়, নাম ধরায়া দোয় । কুষ্ণ করীমা এক হ্যায়, লাম ধরায় দোয় । কাশী কাবা এক হ্যায়, একৈ রাম রহীম । ময়দা এক, পকবান বছ. বৈঠি কবীর জীম ॥ অলথ ইলাহী, রাম রহীম, কৃষ্ণ করীম, কাশী কণব সব একএকেরই দুই নাম । যেমন ময়দা এক, কিন্তু ময়দা দিয়ে বহু পঙ্কান্ন প্রস্তুত করা হয়, তেমনি । এই কথা জেনে কণীর স্থির হয়ে বসেছেন ।... যো থোদায় মসজিদুমে বসতু হায় আউর মুলুক কেহি কেরা ? তীরথ মূর্ত রাম-নিবাসী বাহর করে কো হেরা ? যদি খেদি কেবল মসজিদেই বাস করেন, ভবে জন্ত দেশগুলো কার? তীর্থের মধ্যে ও মূৰ্ত্তির মধ্যেই কেবল আনন্দময় বাস করেন ? তবে বাহিরটাকে দেখে কে ?••• কবীর লেখাপড়া জানতেন না ; কিন্তু তিনি সহ জ জ্ঞানের ও মুক্ত বুদ্ধির বলে গভীর তত্ত্ব শাশ্বত সত্য ও মধুর কবিত্ব প্রকাশ করে গেছেন ।... কবীরের সময়ে হিন্দু মুসলমান পরস্পর প্রতিবেশী হওয়াতে পরস্পরের ধৰ্ম্মমতের প্রভাব পরস্পরের উপর পড়ছিল। কিন্তু মুসলমান তখন দেশের রাজা, উাদের ধৰ্ম্মবিশ্বাসের ও গোড়ামির জোর রাজশক্তির সাহায্যে অত্যন্ত প্রবল। কাজেই আত্মরক্ষার জন্ত ব্ৰাহ্মণগণ আপনাদের আচার ও সামাজিক বিধি দৃঢ়তর নিয়মে বন্ধ করতে চেষ্টা করছিলেন । এই অতি কঠোর নিয়মের গর্তীতে সমাজের প্রাণ ছাপিয়ে উঠছিল। এই সময় রামানন্দ ও তার শিষ্যগণ ধর্শ্ববিঘ্নৰ উপস্থিত ক'য়ে সৰ্ব্বধৰ্ম্মসমন্বয় কয়বার মহৎ চেষ্টা করেছিলেন।