পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৯ ) পরদিন বিবাহ। সকাল হইতে নানা কাজে সে বাড়ীর ছেলের মত খাটিতে লাগিল। নাটমন্দিরে বরাসন সাজানোর ভfর পড়িল তার উপর। প্রাচীন আমলের বড় জাজিম ও সতরঞ্জির উপর সাদ চাদর পাতিয়া ফরাস বিছান, কাচের সেজ ও বাতির ডুম টাঙানো, দেবদারু পাতার ফটক-বাধা, কাগজ কাটিয়া দম্পতির উদ্দেশে আশীষধাণী রচনা, সকাল আটট হইতে বেলা তিনট পর্য্যন্ত এসব কাজে কাটিল । সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে বর আসিবে বরের গ্রাম এই নদীরই ধারে, তবে দশ বারো ক্রোশ দূরে, নদীপথেই আসিতে হইবে। বরের পিতা ও অঞ্চলের নাকি বড় _Yঙ্গিয় তাহা ছাড়া বিস্তৃত মহাজনী কারবারও আছে । বেল পাচটা বাজিলে বরপক্ষের দুজন লোক আসিয়া পৌছিলেন। র্তাহারা জানাইলেন বরের নৌক৷ আসিতে একটু বিলম্ব হইতে পারে, সন্ধ্যার পরও হইতে পারে, নান। কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রওনা হইতে পারা যায় নাই, অন্য সব বন্দোবস্ত যেন ঠিক থাকে, প্রথম লগ্নে বিবাহ যদি না হয়, রাত্রি দশটার লগ্ন বাদ যাইবে না। ব্যাপার বুঝিয়া অপু বলিল—রাত তো আজ জাগতেই হবে দেখচি, আমি এখন একটু ঘুমিয়ে নি ভাই, বর এলে আমাকে ৬েকে তুলো এখন । প্রণব তাহীকে তেতলার চিলে কোঠার সুরে লইয়া গিয়া বলিল—এখানে হৈ চৈ কম, এখানে সুখ হবে এখন, আমি ঘণ্ট। দুই পরে ডাকৃবো । - ঘরটা ছোট, কি খ খুব হাওয়া, সারা দিনের শ্রাস্তিতে সে শুইতে না শুইতে ঘুমাইয়া পড়িল । 敦 * 米 কতক্ষণ পরে সে ঠিক জানে না, কাহীদের ডাকাডাকিতে তাহার ঘুম ডাঙিয়া গেল। সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল, বর এসেচে বুঝি ? উঃ রাত অনেক হয়েচে তো! কিন্তু প্ৰণবের মুখের দিকে চাহিয়া তাহার মনে হইল একটা কিছু যেন ঘটিয়াছে, সে বিস্ময়ের স্বরে বলিল,—কি— কি—প্রণব - কিছু হয়েচে নাকি ? উত্তরের পরিবর্কে প্রণব তাহার বিছানার পাশে বসিয়া পড়িয়া কাতর মুখে তাহার দিকে চাহিল, পরে ছল ছল চোখে তাহার হাত দুট ধরিয়া বলিল,—ভাই, আমাদের মান রক্ষার ভার তোমার হাতে আজ রাত্রে, অপর্ণাকে এখুনি তোমায় বিয়ে কৰ্বে হবে, আর সময় বেশী নেই, রাত খুব অল্প আছে আমাদের মান রাগো ভাই । আকাশ হইতে পড়িলে অপু এত অবাক হইত না । প্রণব বলে কি !...প্রণবের মাথা খারাপ হইয়া গেল না কি ? না-কি সে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখিতেছে! . এই সময় দু'জন গ্রামের লোকও ঘরে ঢুকিলেন, একজন বলিলেন—আপনার সঙ্গে যদিও আমার পরিচয় হয়নি, তবুও আপনার কথা সব পুলুর মুখে শুনেচি—এদের আজ বড় বিপদ, সব বলচি আপনাকে, আপনি না বঁাচালে আর উপায় নেই— ততক্ষণ অপু ঘুমের ঘোরটা অনেকটা কাটাইয়৷ উঠিয়াছে, সে না-বুঝিতে-পারার দৃষ্টিতে একবার প্রণবের, একবার লোক দুইটির মুখের দিকে চাহিতে লাগিল। ব্যাপারখানা কি ? ব্যাপার অনেক । সন্ধ্যার ঘণ্টাখানেক পরে বরপক্ষের নৌকা আসিয়া ঘাটে লাগে। লোকজনের ভিড় খুব, দু-তিনখান গ্রামের প্রজাপত্র উংসব দেখিতে আসিয়াছে। বরকে হাঙ্গরমুখে