পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজমাতা শ্রীরামপদ মুখোপাধ্যায় > জেল কোর্টের নামজাদ মুহুরী হরিশবাবু যেদিন এ পৃথিবীর হিসাব-নিকাশ শেষ করিয়৷ উৰ্দ্ধ জগতে উচ্চতর পদের জন্য সহস প্রয়াণ করিলেন, তখন র্তাহার বিধবা অনেকগুলি পুত্ৰকতা ও যৎসামান্ত অর্থ লইয় সত্যই জগং অন্ধকারময় দেখিলেন । সাত পুত্র ও চার কন্ত। সৰ্ব্বজ্যেষ্ঠ পুত্রের বয়স কুড়ি, এবং একমাত্র আশার বিষয় এই যে, সৰ্ব্বকনিষ্ঠ কহু ব্যতীত আর সকলেই বিবাহিত। বড়টি বিবাহ শেষ করিয়া বৈধব্য আশ্রয় করিয়াছে এবং মায়ের কাছেই বাস করিতেছে। দূর এবং নিকট সম্পর্কের জ্ঞাতি-কুটুম্ব অনেকেই আছেন ; কিন্তু শ্রাদ্ধশাস্থির পূৰ্ব্বে যেরূপ উষ্ণ নিঃশ্বাস ও সঞ্জল সহায়ুভূতির অভিষেকে সহায়হীন বিধবার অন্তরে ক্ষীণ আশার সঞ্চার করিয়াছিলেন, কাজকৰ্ম্ম চুকিয়া গেলে তেমনি একযোগে অন্তৰ্দ্ধান করিয়৷ জানাষ্টয় দিয়াছিলেন যে, ধথার্থই জ্ঞাতি র্তাহারা। সুখ-সম্পদের মধ্যে চিরকাল পাশে দাড়াইতে সক্ষম হইলেও, দুঃখ ঝঞ্চায় মাথা পাতিবার সহিষ্ণুতা তাহদের নাই । প্রতিবাসীর সান্থন দিল, “ওপর পানে চেয়ে বুক বাধ মা, তিনিই এদের মানুষ করে দেবেন। যেটের সাতটি ছেলে ম": মুহূম হয়ে উঠুক—তোমার ভাবন কিসের ? ছিলে রাজরাণী, হবে সাত বাজার ম৷ ” যে তৈলবিন্দু সঞ্চয় করিয়া সংসার-চক্র নিঃশব্দে স্বশস্থলে চলে—অভাব শুধু তাহারই । কৰ্ত্ত স্থবিবেচনা করিয়া কংেক বিঘা জমি রাখিয়া গিয়াছেন—তাহতে মোট ভাত, মোটা কাপড়ের দুঃখ নাই ; কনিষ্ঠা কন্যার বিবাহও ৮১০ বৎসর পরে দিলেই চলিবে ; কিন্তু ভাবী রাজমাত হইতে হইলে সন্তানদের বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সে অর্থ আসে কোথা হইতে ? জ্যেষ্ঠ পুত্র কমল মাকে বলিল, “বি-এ-ট। আর দিতে পারলুম না, মা। চাকুরীর চেষ্টাই দেখি ।” মা একবারমাত্র ক্ষীণ আপত্তি করিয়া বলিলেন, “আর দুদিন না-হয়—” পুত্র বলিল অবস্থা তুমিও জান— আমিও জানি। আর পাশ করেই বা লাভ কি ? সেই তে চাকরী গজে মরতে হবে।”—বলিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল । জননীও দীর্ঘনিঃশ্বাসে সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন । মেজ শিশিরের পড়াশুনায় কোনকালেই মনোযোগ ছিল না। খাতা পেন্সিল বই বহিয়, শুধু বাপের তাড়নায় স্কুলে হাজির দিত। এক্ষণে মাথার উপর শাসনের বেত্রখানি অস্তহিত হইতেই ঘরের একপ্রান্তে বইথাত ফেলিয়া মাকে আসিয়া জানাইল,—ওসব কার্য্য তাহার দ্বারা হইবে না। সে বরং কোন দোকানে থাকিয়া ব্যবসার মূলসূত্র অনুসন্ধান করিবে । জননী কোন উত্তর না দিয়া চৌদ্দ বৎসরের পুত্র অরুণের মুখের পানে হতাশাভরে চাহিলেন । অরুণ তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, “বড়-দাত চাকুরী করবে মা, আমি পড়বে, দোহাই তোমার, স্কুল ছাভিয়ে দিয়ে না।” ম কোন উত্তর না দিয়া তাহাকে সস্নেহে বুকে চাপিয়া ধরিয়া ললাটে স্নিগ্ধ চম্বন জাকিয় দিলেন। আর চারিটি নিতান্ত ছোট। কেহ পঞ্চম শ্রেণীতে, কেহ সপ্তম শ্রেণীতে, কেহ বা স্বরবর্ণের এবং সৰ্ব্বকনিষ্ঠটি মায়ের কোল পূর্ণ করিয়া অাদরআবারের,-পাঠ লইয়া থাকে। তাহীদের পানে চাহিয়া ভাবী রাজমাতা একটি ব্যথাক্তর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিলেন । কমল অনেক চেষ্টা করিয়া, সৌভাগ্যক্রমেই বলিতে হইবে, একটা মাৰ্চেণ্ট আপিলে অল্প মাহিনীর একটি চাকুরী পাইয়াছে। নিজের খরচ চালাইয়াঙ্গামে মাসে সে পনেরটি টাকা বাটী পাঠাইয়া দেয়। শিশির কিছুদিন দোকানে যাতায়াত করিয়া ব্যবসায়ের