পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( २२ ) বধূকে লইয়া সে রওনা হইল। শ্বশুর প্রথমটা আপত্তি তুলিয়াছিলেন–নিয়ে তো যেতে চাইচ বাবাজী, কিন্তু এখন নিয়ে গিয়ে তুলবে কোথায় ? চাকরী-বাকুরী ভাল করে, ঘর দোর ওঠাও, নিয়ে যাবার এত তাড়াতাড়িটা কি ? সিড়ির ঘরে অপর্ণার মা স্বামীকে বলিলেন-হঁ্যাগা, তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেয়ে যাচ্চে দিন দিন—না কি ? জামাইকে ৪-সব কি কথা বলেচে ? আজকালকার ছেলেমেয়েদের ধরণ আলাদা, তুমি জান না । ছেলেমানুষ জাম ই, টাকাকড়ি চাকুরী-বাকুরী ভগবান যখন দেবেন তখন হবে । আজকালের মেয়েরা ও-সব বোঝে না, বিশেষ করে তোমার মেয়ে সে ধরণেরই নয়, ৪র মন আমি খুব ভাল বুঝি। দাও গিয়ে পাঠিয়ে ওকে জামাই-এর সঙ্গে—ওদের মুখ নিয়েই সুখ । উৎসাঙ্গে অপুর রাত্রে ঘুম হয় না এমন অবস্থা । কাল সারাদিন অপর্ণকে লইয়া রেলে ষ্টীমারে কাটানো—উঃ ! .. শুধু সে আর অপর্ণা, আর কেউ না। রাত্রে অস্পষ্ট আলোকে অপর্ণাকে ভাল করিয়া দেখিবারই সুযোগ হয় না, দিনে দেখা হওয়া এ বাড়ীতে অসম্ভব-কিন্তু কাল সকাল টি হইতে শুধু তাহারা দুজনে—মাঝে আর কোন বাধা ব্যবধান থাকিবে না। কিন্তু ষ্টীমারে অপর্ণ রহিল মেয়েদের জায়গায়। তিন ঘণ্টা সে ভাবে কাটিল। তার পরেই রেল। এইখানে অপু সৰ্ব্বপ্রথম গৃহস্থালী পাতিল স্ত্রীর সঙ্গে । ট্রেনের তখনও অনেক দেরী । যাত্রীদের রান্না খাওয়ার জন্য ষ্টেশন হইতে একটু দূরে ভৈরবের ধারে ছোট ছোট খড়ের ঘর অনেকগুলি-তারই একট চর আনায় ভাড়া পাওয়া গেল। অপু দোকানের খাবার আনিতে যাইছেছে, বধু বলিল—তা কেন ? এই তো এখানে উকুন আছে, যাত্রীরা সব রোধে খায়, এখনও তো তিন চার ঘণ্টা দেরী গাড়ীর, আমি রাধবো । অপু ভারি খুলী। সে ভারি মজা হইবে ! এ কথাটা এতক্ষণ তাহার যে কেন মনে আসে নাই ! মহা উৎসাহে বাজার হইতে জিনিষপত্র কিনিয়া আনিল। ঘরে ঢুকিয় দেখে ইতিমধ্যে কথন বধূ স্নান সারিয়া ভিজাচুলটি পিঠের উপর ফেলিয়া, কপালে সিন্দুরের টিপ দিয়া লাল-জরিপাড় মট্কার শাড়ী পরিয়া ব্যস্তসমস্ত অবস্থায় এটাওটা ঠিক করিতেছে। স্বামীকে দেখিয়৷ হাসিমুখে বলিল-বাড়ীওয়ালী জিগ্যেস করচে, উনি তোমার ভাই বুঝি ? আমি হেসে ফেলতেই বুঝতে পেরেচে, বল্‌চে,—জামাই ! তাই তো বলি —আরও কি বলিতে গিয়া অপূর্ণ লজ্জায় কথা শেষ করিতে না পারিয়া হাসিয়া ফেলিল । অপু মুগ্ধনেত্ৰে বধুর দিকে চাহিয়া ছিল । কিশোরীর তযুদেহটি বেড়িয়া ফুটনোন্মুখ যেীবন কি অপূৰ্ব্ব সুষমায় আত্মপ্রকাশ করিতেছে । সুন্দর নিটোল বাহু দুটি, চুলের থোপার ভঙ্গিটি কি অপরূপ। গভীর রাত্রে শেবার ঘরে এ-পর্যান্ত দেখাশোনা, দিনের আলোয় স্নানের পরে এ অবস্থায় তাহার স্বাভাবিক গতিবিধি লক্ষ্য করিবার সুযোগ কখনো ঘটে নাই—আজ দেখিয়া মনে হইল অপর্ণ সত্যই সুন্দরী বটে। কাচ কাঠ কিছুতেই ধরে না, প্রথমে বধূ, পরে সে নিজে, ফু দিয়া দিয়া চোখ লাল করিয়। ফেলিল । প্রৌঢ় বাড়ীওয়ালী ইহণদের জন্য নিজের ঘরে বার্টুন বাটিতে গিয়াছিল। ফিরিয়া আসিয়া দুজনের দুর্দশা দেখিয়া বলিল—*গো মেয়ে, সর বাছা, জামাইকে যেতে বল । তোমাদের ও কি কাজ মা ? সর আমি দি ধরিয়ে । বধূ তাগিদ দিয়া তাহাকে স্বানে পাঠাইল । নদী হইতে ফিরিয়া সে দেখিল ইহার মধ্যে কখন বন্ধু বাড়ীওয়ালীকে