পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চীনযুদ্ধে দফাদার হরিনারায়ণ বসু ডাক্তার পান্নালাল দাস, জয়পুর, রাজপুতান ১৯০১ সালের চীনযুদ্ধে পুরস্কৃত শ্ৰীযুক্ত হরিনারায়ণ বস্থ মহাশয় এখনও ৭৩ বৎসর বয়সে রাজপুরে ( দেরাদুন ) স্ব-অজিত বিশ্রাম লাভ করিতেছেন। ১৮৫৭ সালের ভীষণ সিপাহী-বিদ্রোহের সময় ইহার পিতা ৮স্বৰ্য্যকুমার বস্ব ঝাসি জিলায় ডাকবিভাগের সুপারিন্টেগুেণ্টের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্রোহী সিপাহীগণ ডাক লুণ্ঠন ও ডাক-বিভাগের কৰ্ম্মচারীদের প্রাণবধ করিবার ষড়যন্ত্র করে । তিনি তাহা অবগত হইয়া সপরিবারে আসন্নাপ্রসব স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে (শ্রযুক্ত হরিনারায়ণ বস্থর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা) লইয়। রাত্রিযোগে প্রাণভয়ে গোপনে ঝাসি পরিত্যাগ করেন। তখন সহর ছাড়া চতুৰ্দ্দিকই দুর্গম অরণ্যে আচ্ছন্ন ছিল । তিনি দাতিয়া ও ওরাই জিলার মধ্যবৰ্ত্তী জঙ্গলপথ দুরতিক্রম্য হইলেও নিরাপদ ভাবিয়া সেই পথই অবলম্বন করিলেন। সপ্তাহকাল এই অরণ্যপথ অতিক্রম করিবার পর হরিনারায়ণ বাবুর মাতার গর্ভযন্ত্রণা অনুভূত হওয়ায়, তাহারা সেই স্থানেই বিশ্রাম করিতে বাধ্য হন । অল্পক্ষণেই তিনি ওরাই জেলার বনে লোকাবাস হইতে বহুদূরে একটি পুত্ৰ সন্তান প্রসব করেন ( ৮ই নভেম্বর, ১৮৫৭ সাল ) । নবপ্রস্থত এই বালকটি আমাদের আখ্যায়িকার নায়ক। জনমানবশূন্ত বনে যদিও হিংস্র জন্তু হইতে রক্ষা পাইলেন কিন্তু তাহা হইতে ভীষণতর লুণ্ঠকদিগের কবল হইতে নিস্তার পাইলেন না। ভূমিষ্ঠ হইবার দুই দিন পরে কয়েক জন লুণ্ঠনকারী সৈন্য এই জঙ্গলপথ দিয়াই যাইতেছিল, তাহার গোযান দেখিয়া এই অসহায় বিপদগ্রন্থ রবারের সন্ধান পাইয় তাহদের সর্বম্ব লুঠ করিয়া গ্রীষ্ম ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া গেল। অষ্টের এই ভীষণ তাড়নাতেও স্থিরমতি স্বৰ্য্যকুমার বাবু, নিরাপদ ভাবিয়া যে জঙ্গলের আশ্রর লইয়াছিলেন তাহ ত্যাগ করিয়া, কানপুর অভিমুখে যাত্রা করিলেন, এবং নভেম্বর মাসের শেষভাগে অতিকষ্টে কানপুর পহুছিয়া এলাহাবাদে আসিলেন। বিদ্রোহ উপশমিত হইল, স্বৰ্য্যকুমার বাবু তথায় একটি বসতবাট ও কিছু সম্পত্তি ক্রয় করিয়া জীবনের অবশিষ্ট ভাগ অতিবাহিত করিতে স্থির করিলেন, কিন্তু কালের কুটিল গতির প্রভাবে দুইটি শিশু পুত্র বুদ্ধ মাতা ও স্ত্রীকে দুঃখসাগরে ভাসাইয়৷ ইহজগৎ পরিত্যাগ করিলেন । হরিনারায়ণ বাবুর বয়স তখন একবৎসর মাত্র। মাতা মাতঙ্গিনী বিবিধ অস্থবিধা ও কষ্টে পড়িয়াও সময়োপযুক্ত শিক্ষায় জন্য, যখন হরিনারায়ণ বাবুর বয়স ৫ বৎসর, তখন তাহাকে নিকটস্থ এক বাংলা পাঠশালায় এবং ১০ বৎসর বয়স্ক জ্যেষ্ঠ পুত্র রামনারায়ণকে বাঙ্গালীদের স্কুলে পাঠাইলেন। দুই ভ্রাতা সকালে বাংলা ইংরাজী পড়িয়া বিকালে মাদ্রাসায় উর্দু, শিক্ষা করিতে লাগিলেন। কিছু দিন পরে উভয় ভ্রাতাই বাংলা স্কুল ছাড়িয়া কাটুর মিশন হাই স্কুলে ভৰ্ত্তি হন। ১১ বৎসর বয়সে হরিনারায়ণ চার্চ মিশন স্কুলে প্রবেশ করেন। এই সময় তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা খাজাঞ্চীখানায় শিক্ষানবীশ নিযুক্ত হইলেন । চার্চ মিশন স্কুলটি তখন বর্তমান কায়স্থ পাঠশালার নিকট ছিল। ১৮৭৫ সালে এখান হইতে হরিনারায়ণ বাবু প্রবেশিক পরীক্ষোৰ্ত্তীর্ণ হইলে তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তাহাকে মাতুলালয় গোয়াড়ী-কৃষ্ণনগরে কলেজে পড়িবার জন্য পাঠান, কিন্তু তাহাতে অকৃতকাৰ্য্য হওয়াতে তিনি পাঠ ত্যাগ করেন, এবং কাহারও গলগ্ৰহ হইয়া থাকিতে না হয় এই উদেখে মাতুল মহাশয়কে একটি কৰ্ম্ম জোগাড় করিয়া দিবার জন্য অঙ্কুরোধ করিলেন। সৌভাগ্যক্ৰমে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে ৩• ত্রিশ টাকা বেতনে আধুস্তন শিক্ষকের পদ প্রাপ্ত হন ( ১৮৭৮ সাল । অন্ন দিনেই কিন্তু শিক্ষা কাৰ্য পরিত্যাগ করিয়া স্বাধীন