পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8や প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড পরাজয় অনিবার্ধ্য হইয় উঠে । তারাইনের যুদ্ধের বিবরণ পড়িয়া বুঝা যায় যে, সম্মুখ যুদ্ধে ঝড়ের মত আক্রমণে পৃথ্বীরাজ খুব ওস্তাদ ছিলেন, কিন্তু দীর্ঘকাল স্থায়ী যুদ্ধ পরিচালনায় যে মস্তিষ্ক, চিন্তাশক্তি, স্থব্যবস্থা ও কৌশল দরকার হয়, হয়ত পৃথ্বীরাজের তাহা ছিল না। যুদ্ধকালে ঘোরী ছল বল কৌশল তিনেরই প্রয়োগ করিতেন, পৃথ্বীরাজ বুঝিতেন কেবল বল। ঘোরী ছিলেন অসাধারণ দৃঢ়সঙ্কল্প কঠোর প্রকৃতি পুরুষ, আর পৃথ্বীরাজ ছিলেন সংগ্রামে বীর, বিরামে বিলাসী ব্যসনী পুরুষ। যুদ্ধকৌশলী সেনাপতি জানেন, যুদ্ধে হার জিত দুই-ই আছে, তাই এক যুদ্ধে হারিলে আবারও যাহাতে যুদ্ধ চলিতে পারে তাহার ব্যবস্থা রাখিয়৷ তিনি যুদ্ধে অগ্রসর হন । এই আমলের হিন্দু নায়কগণের মস্তিষ্কে যেন এই কথাটার উদয়ই হর নাই। এক যুদ্ধে তাহারা সৰ্ব্বস্ব পণ করিয়া বসিতেন। তারাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে ঘোরীর ছলে এবং সেনাপতিত্ব কৌশলে পৃথ্বীরাজ যখন পরাজিত হইলেন, তখন ঘোরীকে বাধা দিবার মত আর কেহ রহিল না। দিল্লী আজমীর অঞ্চল অনায়াসে ঘোরীর অধিকারে আসিয়৷ গেল। এইরূপে এক যুদ্ধে সৰ্ব্বস্ব পণ করার ফলেই পাচ শত বৎসর পরে তালিকোঠার যুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের সমৃদ্ধ বিজয়নগর সাম্রাজ্য ধূল্যবলুষ্ঠিত হইয়া গিয়াছিল। প্রাকৃতিক প্রভাবে,এমন কি দীর্ঘকালব্যাপী পরাধীনতায়ও যে ভারতবাসী অমানুষ হইয়া যায় নাই এবং সমতল গরম দেশের অধিবাসীও যে পাৰ্ব্বত্য দুৰ্দ্ধৰ্ষ জাতিকে দমনে রাখিতে পারে, পৃথ্বীরাজের পতনের ৫০০ শত বৎসর পরেও পঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহের সেনাপতি হরিসিং তুলিয়া তাহা দেখাইয়াছিলেন । ( ২ ) পাঠ্যপুস্তকগুলির অপর একটি বিষয় যাহার বিচার আবশ্বক, তাহা এই যে, এই দেশের আয়তন অতি বিশাল এবং ইহার উন্নত পৰ্ব্বত ও বিস্তৃত নদীগুলি ভারতীয়গণকে একতাবদ্ধ হইতে দেয় নাই। কিছুদিনের জন্ত একতাবদ্ধ হইলেও অবিলম্বে দেশ নানা রাজ্যে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে এবং ঐ রাজ্যগুলি পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহে মাতিয়া রহিয়াছে - সকলেই জানেন যে, রুশিয়া দেশটি বাদ দিলে ইয়ুরোপ যতটা বড়—এক ভারতবৰ্ষই ততটা বড়। ইয়ুরোপের রুশিয়া-বজ্জিত অংশে অনেকগুলি স্বাধীন রাজ্য আছে, যথা—জাৰ্ম্মেনী, ফ্রান্স, অষ্টিয়া, স্পেন, ইটালি, ইত্যাদি। আবার খুব ছোট ছোট স্বাধীন দেশও ইহাদের মধ্যে আছে—পর্তুগাল, হল্যাও, বেলজিয়ম, নরওয়ে, স্বইটুজরল্যাণ্ড, ইত্যাদি। ইহাদের প্রায় সমস্তগুলি রাজ্যই রোমান অধিকারকালে রোমান সাম্রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল । উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভেও ইহাদের অনেকগুলি রাজ্য মিলাইয়া নেপোলিয়ন এক সাম্রাজ্য গঠিত করিয়াছিলেন । এই সকল রাজ্য ধৰ্ম্মে এক, সভ্যতায়ও এক । ভারতীয় প্রাদেশিক ভাষাগুলির সহিত সংস্কৃতের যে সম্বন্ধ, এই ইয়ুরোপীয় রাজ্যসমূহের ভাষাগুলির সহিত ল্যাটিন ভাষারও সেই সম্বন্ধ । রোম সাম্রাজ্য ভাঙিয়া এইস্থানে যদি এতগুলি স্বাধীন রাজ্য গড়িয়া উঠিতে পারে এবং পরস্পরের মধ্যে ঘন ঘন যুদ্ধ-বিগ্রহ চালাইয়াও স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখিয়া চলিয়া আসিতে পারে, ঐতিহাসিকগণ যদি ইহাতে আপত্তি করিবার কিছুই না দেখেন, তবে ইহাদেরই মিলিত আয়তনের সমান ভারতবর্ষের বেলায়ই যত আপত্তি উঠে কেন ? ভারতের কোনো সাম্রাজ্যই দীর্ঘকাল টিকিতে পারে না, উহা ভাঙিম! বিভিন্ন রাজ্যে পরিণত হইবেই। ইহাই স্বাভাবিক। মধ্যে মধ্যে সমরবিশারদ অসাধারণ বীর সম্রাটগণ দেশটাকে একচ্ছত্র করিয়াছেন বটে, কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য, সমুদ্রগুপ্ত,এমন কি হৰ্ষবৰ্দ্ধনের মত অসাধারণ প্রতিভাশালী যোদ্ধা কোনে। দেশের ইতিহাসেই সুলভ নহে। তাহারা যে স্বীয় প্রতিভা ও বীর্য্যবলে উত্তর-ভারত একচ্ছত্র করিতে পারিয়াছিলেন ইহাতে এই বুঝা যায় যে, ':' + s", জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ন ইত্যাদি ইয়ুরোপীয় বীরগণের সহিতই তাহদের আসন । ইহাদের লৌহমুষ্টি শিথিল হইবামাত্র যে ভারতবর্ষ স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত হইয়া গিয়াছে, তাহার জন্য ভারতের উন্নত পৰ্ব্বতসমূহ ( পেশাওয়ার হইতে চাটগা পৰ্য্যস্ত উত্তর-ভারতে বিশেষ কোনো উন্নত পৰ্ব্বতের অস্তিত্ব যদিও দেখা যায় না ) এবং বিস্তুত নদীসমূহকে গালি পাড়িবার