পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] মহামায়া రిసి) করিল, “পিসীমা, আমি মায়ার সঙ্গে একবার দেখা করতে পারি কি ? আমাকে চিনতে পারে বলেই মনে হয়। গ্রামের সেই স্কুল করার বিষয় বুঝিয়ে বললে হয়ত বুঝতে পারবে। আমি ত বেশী দিন শুধু শুধু এখানে বসে থাকতে পারব না,মায়া যদি থানিকট বুঝেও জিনিষটাতে মত দেয়, তাহলে আমি ফিরে গিয়ে কাজ আরম্ভ করতে পারি। টাকাকড়ির কথা অবশু সব কাকাবাবুর সঙ্গেই বলতে হবে ।” ইন্দু কঠিনম্বরে বলিল, “মেজদাকে জিগ গেষ না করে দেখা করতে যাওয়া ঠিক হবে না । যা অবস্থা হয়ে আছে, এতে কখন কিসে কি হয়, তার ঠিকান নেই। একে ত বিপদ রাখবার জায়গা নেই, তার উপর যদি আবার বেড়ে যায়, তাহলেই গেছি।” প্রভাস ক্ষুণ্ণভাবে বলিল, “থাক্ তাহলে, দরকার নেই। নামিয়। যাইবার আগে সে একবার মায়ার ঘরের দরজার দিকে চাহিয়া দেখিল । মনে হইল কপাটের আড়ালে মায়া দাড়াইয়া আছে, তাহার পরণের লালপেড়ে শাড়ীর একটা অংশ দেখা যাইতেছে। হয়ত উহাদের কথা শুনিবার জন্যই দাড়াইয়া আছে । ইন্দু পাহারা দিয়া দাড়াইয়াছিল, পাছে প্রভাস কোনো কথা মায়াকে লক্ষ্য করিয়া বলে বা দেখা করিবার চেষ্ট করে । মায়া পোড়ারমুখীর যা মনের ভাব, সে যে তাহ হইলে কি কাণ্ড বাধাইয়া বসিবে, ঠিকানা নাই । তাহ হইতে সে দিবে না । কিন্তু প্রভাস নীরবেই নামিয় গেল । ( 8० ) মায়ার মনোজগতে এই সময়টা কি যে ঘটিতেছিল ব। না ঘটিতেছিল তাহা সে নিজে ভিন্ন বড় কেহ একটা বুঝিতে পারিত না । বাহির হইতে যতদূর বুঝা যাইত, সে আবার তাহার বালিকা জীবনে ফিরিয়া গিয়াছিল, সেই মতামত, সেই শিক্ষাদীক্ষা, সেই অপরিণত বুদ্ধি । বয়সে সে তরুণী, কিন্তু মনের দিক দিয়৷ তেরো চোঁদ বৎসরের মেয়ের মতই তাহাকে বোধ হইত। একটা জিনিষ কিন্তু নিরঞ্জন বা ইন্দু কেহই বুঝিতে পারেন নাই। সেটা মায়ার হৃদয়াবেগের বিকাশ । স্মৃতিলোপ হইবার পূৰ্ব্বে তাহার জীবনে প্রেমের স্পর্শ ভাল করিয়াই লাগিয়াছিল । দেবকুমারের জন্য সে সবকিছু বিসর্জন দিতে প্ৰস্তুত হইতেছিল । তাহার ভালবাসা বালিকার চপল ভালবাসা ছিল না, নারীর পরিণত মনের সৰ্ব্বত্যাগী প্রেমই ছিল । দারুণ রোগের কবলে পড়িয়া সে দেবকুমারকে ভুলিল বটে, কিন্তু এই ভালবাসার বীজ তাহার মনে খানিকটা থাকিয়াই গেল । ভালবাসা কখনও অবলম্বনহীন হইয়! থাকিতে পারে না। মায়া যাহাকে ভালবাসিয়া, ভালবাসার অর্থ বুঝিতে শিখিয়াছিল, তাহাকে এই বিস্মৃতিসাগরে হারাইয়া ফেলিল, কিন্তু তাহার হৃদয় ব্যাকুল হইয়া আশ্রয় খুজিতে লাগিল । নিজের আত্মীয়স্বজন, যাহাদের সে চিনিতে পারিতেছিল, তাহাদের ভালবাসিয়া সে তৃপ্তিলাভ করিতে পারিল না। নিজের অপরিস্ফুট চেতনার সাহায্যেই সে বুঝিল কি সে চায় । কিন্তু যাহাকে চায় কোথায় সে ? ভাগ্যদোষে ধ্রুবতারা তাহার আঁধারে ডুবিয়া গেল, এখন আকুল আগ্রহ লইয়৷ ছুটিল সে আলেয়ার সন্ধানে । প্রভাসকে সে চিনিতে পারিয়াছিল। তাহার মাত! সাবিত্রী বাচিয়া থাকিতে, মায়ার সঙ্গে প্রভাসের বিবাহ দিতে যে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছিলেন, তাহা সে ভাল করিয়াই জানিত । বিবাহ হইয়াও যাইত, যদি সাবিত্রী লুকাইয়৷ বিবাহ দিবার প্রস্তাব না করিতেন । ইন্দুর অস্থখের সময় মায়া যখন আবার গ্রামে ফিরিয়া গেল, তখন বহু বৎসর পরে আবার তাহার প্রভাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। তখন সে প্রভাসকে ভালবাসিয়৷ বসে নাই বটে, কিন্তু প্রভাস-সম্বন্ধে অনেক চিন্তাই করিয়াছে। কাছাকাছি থাকিলে এবং প্রভাসের দিক হইতে সাড়া পাইলে, কালে এই ভাবটাই ভালবাসায় পরিণত হইতে পারিত । কিন্তু মায়া অল্পদিনের মধ্যেই ফিরিয়া আসিল এবং দেবকুমারের ভালবাসায় একেবারে নিজেকে হারাইয়। ফেলিল । তাহার পর এই আকস্মিক দুর্ঘটনা । এখন সে হঠাৎ প্রভাসকেই যেন মনের মধ্যে বরণ করিয়া লইতে চাহিল। এই অৰ্দ্ধত্মাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যেও