পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮌ8 ওপর রোগীর সেবা—তাতেও কারুর সহানুভূতি জাগে না । দিনের পর দিন যায়। সামান্ত তিনশে টাকার অভাবে প্রৌঢ় দ্বিতীয় পক্ষটিও বুঝি হাতছাড়া হয়ে গেল। সংসারে খেতেই কুলোয় না তো বিয়ের পণ আসবে কোথা থেকে ! পূর্বের ভিটেখানা থাকলেও রোহিণীর একট, কেন তিনটে মেয়েরই বিয়ে হয়ে যেতে পাবৃত বাড়ি বিক্ৰী ক’রে। কিন্তু রেস খেলে রোহিণী সে বাড়ী পূৰ্ব্বেই খুইয়েছে। মাত্র চল্লিশ টাকা পেনসনের ওপর নির্ভর ক’রে রোহিণীর সংসার চলে । ছেলে টিউশানি ক’রে পনের কুড়ি টাকা কোনো মাসে আনে কোনো মাসে আনে না— টিউশনি তে চিরস্থায়ী নয় । ম্যাটিক পাস ক’রে পয়সার অভাবে বিনোদের আর পড়া হয় নি । চাকরির জন্তে ঘুরে ঘুরে বেচারার তিনজোড়া জুতোই ক্ষয়ে গেল, তবু আজ ৪ একট। তিরিশ টাকা মাইনের কেরাণীগিরিও জুটলো না । কিন্তু শুনেছি ভাগ্য নাকি হঠাৎ সুপ্রসন্ন হন । হঠাৎ বেচারির ভাগ্যে বড়লোকের একটিমাত্র মেয়ে জুটে যায় কিংবা ডারবির টিকেট কিনে খোট। দরোয়ান মোটর স্থা কয় ! অবশ্ব বিনোদের ভাগ্যে ডারবির টাকা জোটেনি, ধনীর এক মেয়েও না । তা’র একটা চল্লিশ টাকা মাইনের মাষ্টারি জুটে গেল। তার একটু ইতিহাস আছে। একদিন সন্ধাবেলায় বিনোদ ছেলে পড়াতে বেরিয়েছে। নানা চিন্তায় রাস্তার দিকে তার খেয়াল ছিল না ; এমন সময় একটা মোটর হঠাৎ তার একেবারে গায়ের ওপর এসে পড়লো । ড্রাইভার ব্রেক না কসলে তার ভাগ্য সেদিন অন্য রকম হ’তে পাবৃত ৷ মোটরে ছিল বিনোদের স্কুলেরই একজন পুরানো সহপাঠী—অলোক মল্লিক। সে বিখ্যাত বড়লোকের ছেলে । অলোক যখন বিনোদকে চিনলে। তখন তা’র লজা রাখবার আর জায়গা নেই—শেষে পুরানো বন্ধুকেই চাপা ! আলোক বিনোদকে ছাড়লে না—অনেকক্ষণ তাকে নিয়ে মোটরে ঘুরলো। তার সাংসারিক অবস্থা জেনে নিল এবং শেষে নিজেরই একটি ছোট ভাইয়ের পড়ার ভার বিনোদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মাইনে ক’রে দিল চল্লিশ টাকা । বিনোদ বিস্ময়ে বিমূঢ় । মল্লিকদের বাড়ীর সে হবে মাষ্টার ? ওদের কে না চেনে । আর এই কি সেই স্কুলের অলোক ? বিনোদের মনে পড়ে ছেলেবেলায় অলোক কি ভীষণ দুর্দান্ত আর দাম্ভিক ছিল । বিনোদ গরীবের ছেলে, গোবেচারি-ফ্লাসে ভাল ছেলে ব’লে তার নাম, প্রবাসী—পৌষ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড স্বতরাং অলোকের সে ছিল চক্ষুশূল । কারণে অকারণে সে বিনোদের সঙ্গে ঝগড়া বাধাবার চেষ্টা করতো। আর আজ সেই অলোক বিনোদকে পাশে বসিয়ে অকৃত্রিম বন্ধুর মত ব্যবহার করছে! বিনোদ অলোকের পরিবর্তন দেখে বিস্মিত হ’ল । এক কথায় চল্লিশ টাকা ? এ যে কেরাণীর বাড়া । বিনোদ আনন্দে আত্মহারা । আলোকের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় বিনোদ ধরা-গলায় বললে—জানি, আমরা পেট ভরে থেতে পাইনে, আমার বাবা গরীব, আমার মা শয্যাগত, তিন তিনটে বোনের অামায় বিয়ে দিতে হবে তবু চল্লিশ টাকা যে বড় বেশী হ’ল অলোক, তুমি বরং আমায় তিরিশ টাকাই দিও। অলোক কোনে উত্তর না দিয়ে মোটরে বেরিয়ে গেল । বাবা মা প্রথমটা বিশ্বাস করতে চাইল না কিন্তু বিশ্বাস যখন করলে তখন পাগল হবার জোগাড় । বাত না থাকলে রোহিণী নাচতে নিশ্চয়ই । তারপর ঐ চল্লিশ টাকাকে কেন্দ্ৰ ক’রে তিনটি মাহুষের কত রকম জল্পনা কল্পনা । বিনোদ বললে{–এবার তোমার অসুখ নিশ্চয়ই সারবে মা । দেখে আসছে মাস থেকে কি রকম ভাল ভাল ওষুধ আর ডাক্তার আনবে। তোমার জন্যে । মা বললে – ভয় নেই আমি সেরে উঠবে বিহু । তুমি কিন্তু সেই ভবানীপুরের পাত্রটিকে ব’লে এসে বাবা, কিছুদিন অপেক্ষা করতে। ব’লে তিনশো টাকা আমরা তা’কে দেবে{ । রোহিণী বললে—গিয়ী, একটি স্বন্দর মেয়ে হাতে আছে, খোকার জন্তে দেখলে হয় না ? হাজারখানেকের কম কিন্তু রাজী হচ্ছিনে । গিল্পী হেসে বললে –আগে উমার বিয়েট তো হয়ে যাক্ । এমনি ধারা অলীক স্বল্পরচনা চলছেই। বিশেব ক’রে ভাইবোনদের মধ্যে যেন উৎসব লেগে গেছে, কারণ দাদা সেদিন কার কি জাম-কাপড় লাগবে তারই একটা লম্বা ফর্দ ক’রেছে। তবু টাকা এখনও হাতে আসেনি—তাতে কি ? দাদা কি একটা যে সে লোক ! মল্লিকদের বাড়ির মাষ্টার, হেঁ-হেঁ ! মল্লিকদের নিত্যনূতন ঘটনা নিয়ে বিনোদ উমার কাছে রোজ গল্প করে । বাল-ওরে ওর কি কম বড়লোক, জানিস্ ? ওদের মোটরই ন’ খান !...বাড়ি যে কতগুলো ত’ার হিসেব নেই, আর ছেলেমেয়েরা সব কেমন ফুটফুটে যেন মোমের পুতুল-বড়লোকদের চেহারাই আলাদা, বুঝলি উমা ? তারপর অলোক সম্বন্ধে নানা গল্প । তার ছেলে