পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8と8 বসিয়া তামাক টানিতেছিলেন। বীণা ধীরে ধীরে আসিয়া উভয়কে প্রণাম করিল । ইতিপূৰ্ব্বে কাহারও সম্মুখে আসিতে এত ভয় তাহার কোনো দিন হয় নাই। কেবলই মনে হইতেছিল যদি পছন্দ না হয় ! এতদিন পরে আবার ট্যারা চোখ টা সম্বন্ধে সে অত্যস্ত সচেতন হইয়া পড়িল । মুকুমারের পিতা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয়াছিলেন তাহাও সে দেখিয়াছিল, ডান চোখের তারাটিকে ঠিক চোখের মাঝখানে আনিবার জন্ত সে ক্রমাগত চেষ্টা করিতেছিল এবং এই অসন্তব-প্রয়াসে তাহার সমস্ত মুখ আরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। ব্ৰজদুলালবাবু বীণার অবস্থা বুঝিলেন, কিছু না জিজ্ঞাসা করিয়া একট। মৃদু আশীৰ্ব্বচনের সঙ্গে তিনি তাহাকে বিদায় দিলেন । বীণা চলিয়া গেলে রামহরিবাবুর সহিত স্বকুমারের মাতুলের যে কথাবাৰ্ত্ত হইল তাহাতে তিনি বুঝিলেন যে, তাহারা মেয়ে দেখানো নিয়ম রক্ষা করিতে আসিয়াছেন মাত্র-বিবাহ-বিষয়ে ছেলের মতই চরম এবং তাহাকে শীঘ্রই পত্র লেথা হইবে। ঘরের পিছনে বীণা দাড়াইয়৷ শুনিল এবং এই কথায় তাহার বুকের দুর্ভাবনার বোঝা নামিয়া গেল । * সেদিন দুপুর রাত্রি পর্য্যন্ত লিখিয়া বীণা অসমাপ্ত চিঠিখানা শেষ করিল। সুকুমারের পিতা আসিয়া যে তাহাকে দেখিয়া গিয়াছেন সে-কথার উল্লেখ করিতেও ভূলিল না। ు সেদিন স্বকুমারের অবকাশ আদেী ছিল ল । সন্ধ্যায় তাহাদের সমিতিতে বক্তৃতা দিবার কথা ছিল স্বকুমার তাহাই লিখিতেছিল এবং নৃপেন দত্ত ষ্টোভ ধরাইতেছিল। এই সময়ে ডাকের চিঠি আসিল । বীণার চিঠিখান খুলিয়া মুকুমার পড়িতে বসিল । সমস্তই পুরাতন কথা । সেই ভাল না লাগা দিবারাত্রি অস্বস্তিবোধ —প্রতি সন্ধ্যায় চোখের জল ফেলা—স্বযুমার পাতাগুলি একবার উলটাইয়া গেল। চিঠির শেষের দিকে একটা কথা ছিল, পড়িয়া সে একটু আশ্চৰ্য্য হইল, বীণা লিথিয়াছে, “শ্বশুর আমাকে দেখিয়া গিয়াছেন।” সেই সঙ্গেই আর প্রবাসী—মাঘ, ১৩৩৭ ['৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড একছত্রে লেখা আছে, “বলিয়াছেন তোমার মতেই তাহাদের মত।” চিঠিখান ফেলিয়া রাখিয়া দ্বিতীয় পত্র পড়িতেই স্বকুমারের মাথা খারাপ হইবার উপক্রম হইল । চিঠিখান তাহার মায়ের। সে—চিঠিতে রামহরিবাবুর সহিত তাহার পিতার সাক্ষাতের কথা এবং রামহরিবাবুর অনুরোধে তাহার কন্যাকে দেখার বিশদ বিবরণ লেখা ছিল । তৃতীয় পত্র রামহরিবাবুর। তিনি লিথিয়াছেন যে, হুকুমারের কথাতে ভরসা পাইয়া তিনি ব্ৰজদুলালবাবুকে কন্যা দেখাইয়াছেন । যে-মাসে তাহার পড়াশুনার বিঘ্ন না হয় সেই মাসেই শুভকৰ্ম্ম সম্পন্ন করিবার ইচ্ছা । সুকুমারের পত্র পাইলেই ইত্যাদি। এই পর্য্যন্ত পড়িয়াই হুকুমার তারস্বরে চীৎকার করিয়া উঠিল, 'ননসেন্স’ । নৃপেন দত্তের হাত হইতে ডিমের প্লেট পড়িয়া গেল, সে কহিয়া উঠিল, “ব্যাপার কিহে সুকুমার ” কতকগুলি ইংরেজী ভাষায় গালাগালি বকিতে বকিতে স্বকুমার চিঠি তিনখানা মুঠ করিয়া নৃপেন দত্তের দিকে ছুড়িয়া দিল । নৃপেন ধীরভাবে চিঠিগুলি পড়িয়া কহিল, "এতদূর এগিয়েছ যখন—” হুকুমার রুখিয়া উঠিল, কহিল, “কি বলছ বিয়ে করব!” নৃপেন মুচকিয়া হাসিয়া কহিল, “অগত্য ! ত। নইলে গায়ে কাদা মাখলে কেন, বল ?” হুকুমার রুক্ষস্বরে কহিল, “দোষ করি ? ফড়িং আগুনে ঝাপ দিয়ে পাখনা পুড়িয়েছে, দোষ কি আগুনের ? বেশ বলচ ? তুমি আমার হয়ে মাকে চিঠি লিখে দাও আমি বলে যাচ্ছি।” নৃপেন দত্ত কহিল, “ও সব ক'রোনা সুকুমার । তার চেয়ে অশ্বথমা হত ইতি ক’রে একটা চিঠি লিখে পশ্চিমে বেরিয়ে পড়। আস্তে আস্তে বেচারী সব ভুলে যাবে ।” মুকুমার কহিল, “তুমি জান না তাকে, হয়ত বাপের সঙ্গে এসেই পড়বে। সে এক কেলেঙ্কারী ! মুখ দেখাতে পারব না । তার চেয়ে যা বলছি তা-ই কর। ছেড়া ন্যেকৃড়ার আগুন নিবিয়ে দাও । আজকের মিটিংটাই মাটি হ’ল দেখছি!” বলিয়া স্বকুমার চিঠির কাগজ বাহির করিল। নৃপেন নিজ নামে স্বকুমারের পরামর্শ মত স্বকুমারের মায়ের