পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b" নিমাই মাতুলের পদধূলি লইয়৷ তুমি অসময়ে যে । —অসময় আবার কি রে ? তোদের জন্য মনটা কেমন করছিল তাই দেখতে এলাম। তারপর ভালভাবে বসিয়া কহিলেন—একছিলিম তামাক খাওয়াতে পারিস বাবা ? ইয়া, তোর মামীম বেশ ভাল আছে তো ? বালক হাসিয়া বলিল—ভাল আছে বৈকি। আমি মামীমাকে খবর দি । পণ্ডিত মহাশয় আশ্বস্ত হইয়া কহিলেন–দিলেই হবে, এত ভাড়াতাড়ি কিসের । সে বোধ হয় রান্না-বান্না করছে, না রে ? আচ্ছা, এবার যদি তোদের নিয়ে যাই—কেমন হয় ? এক এক তোদের ভারী কষ্ট হয়, কি বলিস্ ? সেখানে তোরা বেশ থাকৃবি–বড় ইস্কুলে তোকে ভৰ্ত্তি করে দেব— পড়াশোনা তোর ভালই হবে সেখানে । এখানে তো দেখবার শেনিবার লোক নাই । নিমাই আগ্রহভরে বলিয়া উঠিল—সে বেশ হয় মাম । তুমি এখানেই বস না হয়—আমি তামাক সেজে আনি । পণ্ডিত উদারভাবে বলিলেন—থাক্ থাক, তামাক একটু পরে পেলেও চলবে—তোর সাথে একটু গল্পই করি । আচ্ছা, তোর মামীম আমাকে দেখলে কি বলবে রে ? বিরক্ত হবে না কি ? আচ্ছা, আমার কথা তোকে কিছু বলতে না সে ? বালক একটু পড়ছে না । পণ্ডিত মহাশয় বোধ করি একটু ক্ষুন্ন হইলেন, কহিলেন–ছ । ত বলবারই বা কি আছে। মনে মনে নিশ্চয়ই-– । তার পর কি মনে করিয়া নামিয়া গিয়া বলিতে লাগিলেন—এবার সবশুদ্ধ যাওয়াই যাক, কি বলিস ? এক এক তোদের এখানে ফেলে রাখা অামার ভাল বোধ হয় না । নিমাই বুদ্ধি কবিয়া কহিল—তাই কি আর হয় মামা । আমাদের নিয়েই চল । পণ্ডিত উৎসাহিত হইয়া বলিলেন—তাই যাব । আর দুঃস্বপ্ন দেখে মনটা আমার এমনি বিগ রে গেল যে, দৌড়ে আসতে পথ পাইনে । এরকম বার-বার হ’লে কি কহিল-ইঁ্যা মামা । ভবিয়া কহিল—কই মনে তো প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ [ ৩•শ ভাগ, ২য় খণ্ড আর ছুটি পাব । আচ্ছা, তোর মামীম যেতে চাইবে তো ? বালক কহিল—ত আর চাইবে না–তুমি যে কি বল মামা । স্বপনের কথা কি বলছিলে যে ! দুঃস্বপ্নের কথাটি এই দ্বাদশবর্ষীয় বালকের নিকট বলা যায় কি না পণ্ডিত মহাশয় ভাবিতে লাগিলেন । এমন সময় অদূরে বাসন্তীর গলার স্বর শোনা গেল—‘কার সাথে বসে বসে গল্প হচ্ছে নিমাই’ এবং সঙ্গে সঙ্গেই চণ্ডীমগুপে আসিয়া স্বামীকে দেখিয়া কহিল-ওম, তুমি এমন অসময়ে যে ! পণ্ডিত মহাশয় একটু লজ্জিত হইলেন, তবু মুখে কহিলেন – বাড়ী আসবে তার আবার সময় অসময় কিসের । মন ভাল লাগছিল না—ছুটি নিয়ে এলাম চলে । ই রে নিমাই, এইবার তামাক খাওয়া দেখি বাবা । নিমাই উঠিয়া যাইতেই পণ্ডিত মৃদু হাসিয়া কহিলেন —মুখে বলতে লজ্জা হয় বটে, কিন্তু না বলেও পারিনে— তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার অসম্ভব । বুঝতে পারি একটু বয়স হয়েছে, উতলা ভাবও দেখানো ষায় না, লোকে হাসবে,কিন্তু মনকে স্বস্থির রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও তো মনকে বুঝিয়েই রেখেছিলাম--ফ্যাসাদ ঘটলে একটা স্বপ্ন দেখে । উঃ, কি স্বপ্ন বাবা, ভাবতে গেলেও গায়ে কাটা দেয় ! তাই ছুটে এলাম তোমাকে দেখতে । বাসস্তী ভাবিল - বুড়ে বয়সে কত ঢংই দেখবো । কিন্তু মুখে কহিল— বেশ তো পণ্ডিত উৎসাহিত হইয়া কহিল – এবার সঙ্গে করেই নিয়ে যাব তোমাদের । ভোলা-সা বাড়ী দিয়েছে একটা ঠিক করে। আর এই বয়সে কে-ই বা দেখাশোনা করে আমার—এক এক ভারী কষ্ট হয়। সেদিন ছেদ বালিশের তুলোয় সারা মাথা একাকার হয়ে গিয়েছিল দেখে হেডমাষ্টারের কি ঠাট্ট ! আমার হয়েছে সবদিকে মুস্থিল কি না! আচ্ছ, সব কথা পরে শুনো এইবার তোমার কাপড়খান দেখ পছন্দ হয় কি না । এই বলিয়া তিনি ব্যাগ খুলিয়া নীলাম্বরীথনি বাহির করিলেন ।