পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ৷ মেয়ের মান কিরণ কিন্তু বাপের গলায় ছুরি না দিয়াই বছর দুই পরে পার হইয়া গেল। দ্বিতীয় পক্ষের বর একটি জুটিয়া গেল। নিজের যোগ্যতা সম্বন্ধে সে ব্যক্তির উচ্চ ধারণা ছিল না এবং ঘরভরা ছেলে মেয়ে অসামাল হইয়া উঠিয়াছিল, কাজেই দেনাপাওনা লইয়া কোনো গোলমাল না করিয়াই সে বিবাহ করিয়া বসিল । গঙ্গাচরণ এইবার নিশ্চিস্ত হইলেন । দুই বোন চলিয়া যাওয়ায় অনঙ্গমোহনের আদরধত্বের একটু ক্রটি হইতে লাগিল। ইহাতে সে বিষম চটিয়া গেল । মাকে গাল দিল, ঠাকুরমার শনের কুড়ির মত চুল ধরিয়া টানিয়া বুড়ীকে অস্থির করিয়া তুলিল । বই শ্লেট সব নর্দমায় ফেলিয়া দিয়া রাগ করিয়া পাচ ছয় দিন আর স্কুলেই গেল না । গঙ্গাচরণ ছেলেকে শাসন করিতে আসিয়া শুনিলেন, স্কুলের সময় থোকাকে খালি ডাল আর মাছ ভজা দিয়া ভাত দেওয়া হইয়াছিল বলিয়া সে স্কুলে যায় নাই । গঙ্গাচরণ রাগিয়া বলিলেন, “চব্বিশট ঘণ্ট বসে বসে কি কর বলতে পার? একট। ত ছেলে, তাকেও ঠিক সময় খেতে দেবার ক্ষমতা নেই ? সে-ই যদি না খেল, তবে রাধ কিসের জন্যে ? নিজের শওর-পেটে গিলবে ব’লে ?” - স্বরবালা দোষ মানিয়া লইলেন । আজ হঠাৎ তাহার চিরকালের অনাদৃত। মেয়ে দুইটির জন্য মন কেমন করিয়া উঠিল । তাহারা থাকিতে কোনোদিন কাজে এদিক-ওদিক হয় নাই । বেশীর ভাগ কাজ ত তাহারাই করিত, তিনি শুধু উপর উপর তত্ত্বাবধান করিভেন। বাছার কোনোদিন একটা কথা মুখ ফুটিয়া বলে নাই, চিরদিন নীরবে গঞ্ছনা লাঞ্ছনা সহ করিয়া গিয়াছে। মনে মনে বলিলেন, “ছেলেকে ত সবাই মিলে মাথায় তুলে রাখছি, ছেলে স্বগ গে বাতি দিবে।” কিন্তু মনের কথা মনেই রহিল, মুখ ফুটিয়া বলিবার ভরসা ছিল না। ছেলের সেবার যাহ্বাতে ক্রটি ন হয়, সেদিকে বেশী করিয়া দৃষ্টি রাথিলেন। . অনঙ্গমোহনের রূপ ছিল যথেষ্ট, বুদ্ধিও কিছু কিছু আছে দেখা গেল। পড়াশুনার উংপাত তাঙ্গার ছিল না বলিলেই চলিত, কিন্তু ক্লাসে সে পড়িয়া ধুতি না ।

গঙ্গাচরণ তাসের আড়ায় গৰ্ব্ব করিতেন, “ছে Tছ। যদি দিনে এক আধ ঘণ্টাও পড়ত, তাহলে তার ফাষ্ট হওয় আটকায় কে ? একেবারে বই হাতে করে না, তবু ক্লাস প্রোমোশন ত পেয়ে চলেছে।” কথাগুলা অনঙ্গমোহনের কানে কোনোমতে পৌছিয়াই গেল, নিজের সম্বন্ধে ধারণা তাহার আরও দুই ধাপ উপরে উঠিয়া গেল । ইহার পর দিন কাটিয়া চলিল। দুই চারিট সংসারিক ঘটন ভিন্ন গঙ্গাচরণের পরিবারে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না । বৃদ্ধ মাতা মারা গেলেন, কিরণ বিধবা হইয়া বাপের বাড়ি ফিরিয়া আসিল এই পৰ্য্যস্ত । অনঙ্গের স্বভাবচরিত্র বা চেহারার বিশেষ কিছু বদল হইল না । কোনোমতে বই-বিশেষ হাতে না করিয়াও, সে দ্বিতীয় বিভাগে মাট্রিকুলেশন পাস করিয়া গেল । ইহার পর কলেজে পড়ার পাল । অনঙ্গ জেদ ধরিল সে কলিকাতার মেসে থাকিয়া পড়িবে । গঙ্গাচরণ কলিকাতার আপিসে কাজ করিয়া চুল পাকাইলেন, কিন্তু হাওড়া ছাড়য় কলিকাতায় বাইবার মতলব কোনোদিন র্তাহার হয় নাই । বাড়ি ভাড়াটা কম, আর এই বাড়িতে তাহার পিতা আমরণ বাস করিয়া গিয়াছেন, ইহাই ছিল বাড়িটার প্রধান গুণ । সুতরাং অতখানি পথ যাওয়া-আসা করা যতই কষ্টকর হোক, তাহার বিরুদ্ধে মনে মনেও তিনি আপত্তি করেন নাই। কিন্তু নূতন রাজার, নূতন ব্যবস্থা । অনঙ্গ মুখে বলিল, “অতটা পথ রোজ যাওয়া আসা করা আমার দ্বারা হবে না। ঐ রকম সাড়ে আটটায় খেয়ে বেরতে হ’লে ছুদিনে আমি মারা যাব।” গঙ্গাচরণ বলিলেন, “তা বলতে পারে, ওর অভ্যেস্ত নেই ? অামাদের কষ্টের শরীর সয়ে গেছে।” ** স্বরবালার ছেলে সম্বন্ধে ধারণ তত উচ্চ আর ছিল ন। মাকালফলের রূপ ধতই মনোহর হউক, তাহার ভি স্তরের খবর চিরকাল চাপ থাকে না । বিধবা কিরণের সঙ্গে ছেলে কুব্যবহার করিত, ইহাও মাঝে মাঝে র্তাহার অসহ লাগিত। স্বামীর কথায় তিনি বিরক্ত হইয়৷ বলিলেন, “তোমার যা সয়েছে, ছেলেরও তা সইরে। মেসের খরচ তার আসবে কোন চুলোর থেকে ?”