পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ হবে না।” রমেশ রসিকতার চেষ্ট করে । “কিন্তু ভয়ের কিছু সত্যিই নেই ! যাই বল, বোনের প্রতি তোমার এই সদ্ভাবটুকু ইতিহাসে লিখে রাখবার মত ” 爾 সরযু উত্তর দেয় না, কিন্তু চোখ দুটি হঠাৎ মেঘময় হয়ে আসে। রুগ্ন, কালো মুখখানিতে ব্যথার আভাস ফোটে কিনা, সহজে তা বোঝবার উপায় নেই। ঘরের চতুর্দিকে চেয়ে উমার বিলাস-বিকীর্ণ সংসারশ্রীর কথা ভাবে। বাবাকে সরযুর মনে পড়ে না— মায়ের মুখে তার গল্পই কেবল শুনেছে। মাও আজ নেই। উমার দিদি হিসেবে তাকে মধ্যে মধ্যে নিয়ে আশাই হয়ত উচিত, কিন্তু জীবনের সমস্ত উচিতকে পালন করবার সৌভাগ্য হয় ক’জনের ? রমেশ কলের মানুষের মত খেটে চলে। খাটুনিতেই তার আনন্দ, ছুটি চাইলে পেতে পারে কিন্তু নেয় না। তাই বলে সরযুর প্রতি সে একেবারে উদাসীন নয়। “চল না দিনকয়েক কলকাতা থেকে ঘুরে আসি ” “থাক, কাজ কি ?” “তোমাদের দেশেও একবার ঘুরে আসা যাবে। কতদিন ত যা ও নি ।” “তা বটে। কিন্তু গিয়েই-বা লাভ কি ? লোকে হয়ত চিনতে ৪ পারবে না।” “তাও সত্যি ! অনেকদিন হ’য়ে গেল নয় ? মনে আছে, একবার একরাত্রের জন্তে সেখানে গিয়েছিলাম । অন্ধকারে যা ৪য় এবং সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে ফিরে আসা । —কিছুই মনে পড়ে না । তোমার কিছু মনে পড়ে না ?” “উহুঃ ! সে কি আজকের কথা !” রমেশ তা স্বীকার করে । বলে, “উপায়ই বা কি বল ! সংসারে ত আর একট। লোক নেই যে দেখে শুনে— ক'ট দিন চালিয়ে নেবে। নইলে তুমিই না হয়—” সরযু স্নান হামি হেসে বললে, “আমি কি তোমায় বলেছি যে, তোমায় দেখলে আমার জর আসে, এখান প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ "সে আমি জানি । তার জন্যে তোমায় ভাবতে থেকে দিনকয়েক হাওয়া খেতে না গেলে আমি [ ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড বঁচিব না ?” রমেশ গৰ্ব্ব অমুভব করে।—“আশ্চৰ্য্য তোমাদের মন । ছেলেবেলার দেশে ফিরে যেতে একবার ইচ্ছে করে না ? সন্ধ্যার সময় সরযু কোনদিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্ধার তীরে ঘুরে আস্ত, অন্ধকার খুব বেশী গাঢ় হ’বার আগেই ফিরে আসতে হ’ত। রাত্রে জগন্নাথের মা রুটি বেলুতে ব'সে তার জীবনের সহস্ৰ কোটি ঘটনার ইতিহাস বর্ণনা করতে করতে অতিষ্ঠ করে তুলত। কিন্তু বলাই বা যায় কি ! ওই এখানে সরযুর একমাত্র সঙ্গিনী, সরযুকে সে মেয়ের চেয়ে বেশী স্নেহ করত। যেকাহিনীগুলি বহুবার শুনে পুরান হ’য়ে গিয়েছে, তাও শুনতে হ’ত । কত হাসি,কত কান্নায় মধুময় সেই দিনগুলি ! এমনি দীর্ঘকাল ! বৈচিত্র্য নেই, উত্তেজনা নেই! বাহিরে যে প্রকাণ্ড পৃথিবীতে মাহুযে মানুষে লড়াই বাধে, স্বার্থের সংঘাতে রক্তস্রোত ছোটে, যে-পৃথিবীতে দম্ভদৃপ্ত রাজশক্তি নিমেযে ধূলিচুম্বন করে, বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের প্রতিভার প্রতিযোগিতা চলে—তার সঙ্গে সরযুর পরিচয় অল্প। রথযাত্রার সময় এই দিকটায় যাত্রীদের যাতায়াত একটু বাড়ে ; কতলোক কতদূর থেকে আসে শ্ৰীক্ষেত্র দেখতে । বালুবেলার কূলে অকূল, নীল সমুদ্র । এখান থেকে মোটেই দূর নয়, কিন্তু এ পর্য্যস্ত সরযুর আর সেখানে যাওয়া হয়নি। রমেশ অবশ্য অনেকবার বলেছে, জগ’র মাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে ; কিন্তু ছেলেদের ভারই বা নেয় কে, রমেশের খাওয়ার ব্যবস্থাই বা হয় কোথেকে ? যাবে যাবে করেও কোনবারই যাওয়া হয় না । এবারও হ’ল না ! যাত্রীদল ফিরে গেল, বমেশের কাজের ভিড় এল কমে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এই ছোট্ট সংসারটিকে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠতে হ’ল । সংবাদ এল উমা আর বিজন আসছে—উমা আর উমার বর ।