পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や8 প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৭ { ৩০শ ভাগ, ২য় খণ্ড উপায় নেই। ছিল জীর্ণ একতালা, হয়েচে তিন-মহলা ত্রিতল । সরযু তার ছেলে-বয়সের সাথীগুলির কথা জানতে চাইল। শাখারীদের রাণু, বোষ্টমপাড়ার দুষ্ট কমূলী, বাড়ুৰ্য্যেদের রাখালী ? উম! যথাসাধ্য সংবাদ দিলে । ‘আসবার দিন কম্লীর সঙ্গে দেখ, তোর কথা জানতে চাইলে । সেই হাড়-বেরকরা কম্লীট। কি ধুমশোই হয়েছে ভাই ! এইখানেই ওর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মনে ওর এতটুকু সুখ নেই, দু’টি ছেলে হয়েছিল, কলেরায়—’ “দু’জনেই গেল বুঝি ?” “তাই। বললে হাসতে ভুলে গেছি ভাই, শাশুড়ীর মুখ-নাড়া আর সহ হয় না। ছেলে দুটো গেল সে যেন আমারই দোষ ! উনিও আর ভাল ক’রে কথা ক’ন না। শুনছি আবার বিয়ে করবেন ।” “তার রাণু ?” “ওর সঙ্গে দেখা হয়নি—শ্বশুরবাড়ীতে আছে । একটা মাতালের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল, মাস-তাষ্ট্রেক পরেই বিধবা হয়েছে । ওর মার কাছে শুনলুম !” সরযুর যেন শ্বাস রোধ হয়ে আস্ত ! যে-পৃথিবীতে ওরা এককালে ছুটোছুটি করে বেড়িয়েছে সে যেন আর নেই। কোথায় গেল সেই নিরুদ্বেগ দিন-রাত্ৰি ; সংসার কেন এমন হয় ? বিকেলে চিলা দেখতে যাবার কথা । বিজন এসে বললে, “দিদি আপনাকেও যেতে হ’বে ।” সরযু হাস্থলে, বললে, “ওর আর নতুনত্ব নেই, দেখে দেখে চোেখ পচে গেল।” “ত হোক, আমাদের জন্যে না-হয় আরও একটু যাবে। উঠল।” - সরযু আপত্তি করতে পারলে না, উঠতে হ’ল হাতের কাজ ফেলে রেখে । এমন কি রমেশ পর্য্যস্ত আজ বেরিয়ে পড়ল, ছোট ছেলেমেয়েগুলিও । সূৰ্য্য অস্ত গিয়েছে, কিন্তু রক্তরাগ আকাশ থেকে মুছে যায়নি ; ছোট ছোট ঢেউগুলির উপর তা’র অভি এসে পড়েছে । জলের মাঝে মাঝে উঠেছে ছোটখাট পাহাড়, তীরে সারি সারি মাছ-ধর নৌকা বাধা । অনেক বলে-কয়ে তাদেরই একটা ভাড়া নেওয়া হ'ল। মাঝে মাঝে দুই একটি লঘু, শ্বেত-পক্ষ পাখী উড়ে যাচ্ছিল, খানিক দূরে অন্ধকার নামছে—সেদিকটা অস্পষ্ট, কুয়াসাময়। বিজন চতুৰ্দ্দিকে ভাল ক’রে দৃষ্টিপাত ক’রে নিয়ে ব’লে উঠলে, “আমার একটু বেয়াদপি করতে সাধ যাচ্ছে ; দিদি যদি ক্ষমা করতে রাজী থাকেন – ” সরযু হেসে জানাল, বে-আদপি যত গুরুতর হোব ন। কেন, ক্ষমা করতে সে প্রস্তুত । অল্পকাল পরেই বোঝা গেল, অন্যায়ট আদৌ ক্ষমার অযোগ্য নয় । বিজন গান মুরু করে দিলে । নৌকা চলেছে—অলস, একটান গতি । তাঁর থেকে অনেকখানি এগিয়ে এসেছে—অস্থরবির আলে, কখন মিলিয়ে গেল । সন্ধ্যার অনতি-নিবিড় অন্ধকার ছায়ার মধ্যে বিজনের গলার সুর যেন শব্দময় প্রার্থনার মত শূন্যের উদ্দেশে ভেসে যাচ্ছিল । কেউ কথা বলছে না, ছেলেগুলো পৰ্য্যন্ত কান্না-ভয় ভুলে গেছে। সরযুর চোখের কোলে যে অকারণে একটি ক্ষীণ আশ্ররেখা জেগে উঠেছে, সে-কথা ও নিজেই জানত না ! ওর সমস্ত মন যেন হ্রদের মত ব্যাপ্ত, গম্ভীর হয়ে উঠেছিল । গান থামৃতে রমেশ প্রায় চীৎকার করে বললে,— “চমৎকার, চমৎকার! এক কলকাতায় থাকৃতে ইয়ের মুখে শুনেছিলাম--তারপর-হো’কু, আর একট। হো’ক্‌ - ” বিজন বললে, “একজনের ওপর সমস্ত ভার চাপিয়ে দিলে মাধুর্য্যের হানি হয়। এইখানেই আরও একজন রয়েছেন, তিনি বড় কম যান না।” বিজন উমাকে ইঙ্গিত করলে । বস্থল । “কে, উমার কথা বলচেন বুঝি ? তা বেশ ত—কিন্তু উনি কি আপনার স্বমুখে—” রমেশ প্রায় উঠে