পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেঙ্গল একাডেমীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের প্রতিবাদের উত্তর { আমরা এই প্রত্যুত্তরটি খুব সংক্ষিপ্ত করিয়া দিলাম। এ বিষয়ে আর বাদামুবাদ ছাপা হইবে না।—প্রবাসীর সম্পাদক ] ঐযুক্ত নন্দরাণী দেবী রেজুনের বেঙ্গল একাডেমীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের যে প্রতিবাদ করিয়াছেন, তাহার উত্তরে আমার কিছু বলিবার আহে । লেখিকা প্রসন্নকুমার মজুমদার মহাশয়ের বিরুদ্ধে এরূপভাবে কেন লিথিয়াছেন তাহ বুঝিতে পারিলাম না। বস্তুতঃ প্রসন্নবাবুই বেঙ্গল একাডেমীর প্রথম ও প্রধান উদ্যোক্তা । তাহারই পরিশ্রম ও যত্নে এই বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন হয়। প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার সন্মান একমাত্র প্রসন্নবাবুরই প্রাপ্য, এ কথা স্বীকার না করিলে সত্যের অপলাপ করা হইবে। সত্যের খাতিরে বলিতে বাধ্য হইলাম, শশীবাবুকে বড় করিয়া প্রসন্নবাবুকে লোকচক্ষে হীন করাই লেখিকার উদেষ্ঠ । এরূপ পরীকাতরতা যেন আমাদের অস্থিমজ্জাগত হইয়া গিয়াছে । * * * প্রসন্নবাবু স্কুলের সাহায্যপ্রায়ী হইয়। কখনও একাকী, কখনও বন্ধুবান্ধবসহ ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সকলের স্বারে দ্বারে উপস্থিত হইয়াছিলেন যলিয়াই yশশীভূষণ নিয়োগী ও জ্যষ্টস্ দাশ প্রভৃতি মহৎ লোকের স্কুলের সাহায্য করিয়াছিলেন। একনিষ্ঠ কৰ্ম্মী প্রসন্নবাবু স্বীয় কৰ্ম্মকুশলতা ও সততা দ্বারা এ সব দানের সদ্ব্যবহার করিয়াছিলেন বলিয়াই স্কুলের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দয়ালু দাতাদের দানের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল এবং সেইজন্তই বিদ্যালয় সামান্ত অবস্থা হইতে বৰ্ত্তমান অবস্থায় উপনীত হইয়াছে । ডাঃ ঘোষ স্কুলে কাজ করিবেন বলিয়৷ ডাক্তার নিযুক্ত হইয়াছিলেন কিন্তু কাজও করেন নাই, টাকাও পান নাই, সুতরাং দানও করেন নাই । ডাঃ বিশ্বাস সবেমাত্র কাজ আরম্ভ করিয়াছেন। আশা করি, লেখিকা পৌষ মাসের প্রবাসীতে মিঃ বি, কে, হালদার মহাশয়ের নাম দেখিয়াছেন । *. এক কথায় বলিতে গেলে, প্রসন্নবাবু এই বিদ্যালয়টিকে মায়ের মত বুকে, করিয়া আপদে বিপদে রক্ষা করিয়াছেন এবং ইহাকে প্রতিপালন করিতে জাষ্টিস্ দাশ পিতার স্থায় নানারূপে সাহায্য করিয়াছেন। স্বগীর শশীভূষণ নিয়োগী মহাশয় অর্থসাহায্য করিয়া ইহার উন্নতিসাধন করিয়াছেন। খ্ৰীযুক্ত শশীভূষণ চক্রবর্তী মহাশয়ের দ্বার স্কুল আরম্ভ করার সময় বিশেষ সাহায্য হইয়াছিল। শ্ৰীমৃণালবালা দেবী বৈজু বাওরা • ১৩৩৬ সনের ফাঙ্কন সংখ্যার প্রবাসীতে বৈজু বাওরা শীর্ষক প্রবন্ধের লেখকের মতে বৈজু বাওরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর চতুর্থ পাদে বর্তমান ছিলেন। আমরা কিন্তু দেখিতে পাই, বৈজু বাওরা ছিলেন হুমায়ুনের রাজত্বকালে । হুমায়ুনের রাজত্বকাল ১৫৩০ হইতে ১৫৪৯ খ্ৰীষ্টাব্দ পর্য্যন্ত । ভগৎখণ্ডে মহাশয়ের মত, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালেও বৈজু বাওরা বর্তমান ছিলেন । ইহা অসম্ভব বলা চলে না, কারণ হুমায়ুন মাত্র দশ বৎসর রাজত্ব করেন, পরে তৎপুত্র সুপ্রসিদ্ধ আকবর সম্রাট হন। বৈজু যে হুমায়ুনের রাজত্বকাল হইতে আরম্ভ করিয়া আকবরের রাজত্বকাল পৰ্য্যন্ত জীবিত ছিলেন তাহ খুবই সস্তব। স্বগীয় রাধামোহন সেন প্রণীত সঙ্গীত-তরঙ্গ’ নামক প্রাচীন পুস্তকে দেখিতে পাই, সম্রাট আলাউদ্দীনের সভায় নায়ক গোপাল ও আমীর থস্ক্ল নামক দুইজন গুণী ছিলেন । তাহ হইলে নায়ক গোপাল সম্রাট আলাউদ্দীনের রাজত্ব কালের আর বৈজু বাওর। সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্ব কালের । ১২৯৫ খ্ৰীষ্টাব্দে আলাউদ্দিন খিলিজি সিংহাসন আরোহণ করেন। তবেই বুঝা গেল, নায়ক গোপাল ও বৈজুর মধ্যে প্রায় দেড় শত বৎসরের ব্যবধান । বৈজু বাওরার কতকগুলি গানে গোপাল নায়ককে সম্বোধন করা আছে, যথা—“কহে বৈজু বাওর, শুনহে গোপাল নায়ক।" শ্রন্ধেয় হরিনারায়ণবাবু বোধ হয় ইহা হইতে সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, গোপাল ও বৈজু সমসাময়িক । তাহ। যদি হইত তবে গোপাল নায়কের কোন-নাকোন গানে বৈজু বাওরার নাম থাকিত। গোপাল নায়ক যখন বৈজুকে গুরু বলিয় (?) স্বীকার করিতেন না (হরিনারায়ণবাবুর মতে ), তখন দুই একটা গান বৈজুকে কটাক্ষ করিয়া রচনা করা বিশেষ বিচিত্র ছিল না, বরং ইহাই স্বাভাবিক, কারণ তথাকথিত নায়ক গোপাল চরিত্রে উদার ছিলেন না বলিয়াই প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে। বস্তুতঃ বৈজুর গানে গোপাল নায়কের নামের উদেখ আর কিছুই নয়, কেবল গুণশ্রেষ্ঠ মহতের নাম শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ সন্নিবিষ্ট করা । হরিনারায়ণবাবুর উল্লিখিত “খরজ কাহানস" ও “মেইকি স্বর থরজ" গান দুইটি একদিনে গোপাল ও বৈজুর প্রশ্নোত্তর প্রতিপন্ন করিবার যুক্তি কি ? সম্পূর্ণ গান দুইটি প্রবাসীতে তুলিয়া দিলে উহাদের মৌলিকত্ব সম্বন্ধে বিচার করা যাইত । ঐআশুতোষ ঘোয