পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০২ প্রবাসী-ன், ১৩৩৭ [ ৩৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড ক'রে ওদের ইষ্টশনে নিয়ে যাই, সেদিন ভাই, বললে ন৷ পেত্যয় যাবি—মেয়েটার কি হালি ! সে হাস শুনলে অবাক হ’য়ে যেতে হয় ! - যতনচন্দ্রের অক্রোশ অতি প্রবল। সে চীৎকার করিয়া সকলকে জানাইয়া দিল যে, ঐ হাসি সে একদিন বন্ধ করিয়া দিবে। তাহীদের সমাজের অল্পবয়সী বিধবা মেয়ে—তাহাকে কি ন মা-ভাই হইয়া সহরে পাঠানো ! মজাটি টের পাইবে তাহারা—যাহারা তাহাকে সহরে লইয়া গিয়াছে এবং যাহারা তাহাকে জানিয়া শুনিয়া সহরে পাঠাইয়াছে। সহরে কি আর চরিত্তির ঠিক থাকে ? গুপীদাস অত্যন্ত গম্ভীর প্রকৃতির লোক। সে যতনচন্দ্রের আস্ফালন থামাইয়া দিল ; বলিল,—যা না, ঐ শশীকে ধ’রে নিয়ে আয় না! ওর সঙ্গে গোটাকতক কথা আছে । ইহারা যেন এই আদেশের প্রতীক্ষা করিতেছিল। সলম্ফে হিরণদের উঠানের উপর পড়িয়া দাওয়ার উপরে যেখানে শশী কঁাপিতেছে, সেইখানে সশব্দে উঠিয়া আসিয়া শশীকে চ্যাংদোলা করিয়া উঠাইয়া লইয়া । একেবারে গুপীদাসের পায়ের কাছে নামাইয়া দিল । রুগ্ন শশী ইহাদের জানিত । ইহাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা তাহার ক্ষমতার বাহিরে। সে ভাবিল ইহীদের কথায় সায় দিয়া যাওয়াই তাহার পক্ষে মঙ্গল। অদৃষ্ট খারাপ, দেহও বিকল—অগত্য কেহ কিছু বলিবার পূর্বেই কেউ কেউ করিয়া কঁাদিতে কঁাদিতে যাহা বলিল, তাহার মৰ্ম্মার্থ এই যে, তাহার নিজের এ-বিষয়ে বিশেষ আপত্তি ছিল। কৰ্ত্তাঠাকুর ক্ষমতাশালী লোক—তাহার উপর তিনি তাহাকে কিছু টাকা কােজ দিয়াছেন। হিরণ র্তাহার বাড়ীতে দাসীবৃত্তি করিলে তাহার পারিশ্রমিক হইতে ঋণটা শোধ যাইবে । সেইজন্তই হিরণের যাওয়াতে আপত্তি থাকিলেও তাহাকে বাধ্য হইয়া যাইতে দিতে झेश्i८छ्’ । গুপীদাস ঈধং হাসিয়া বলিল,—ওসব আমরা শুনতে চাই নে। তোকে আমরা একঘরে করলাম। হুকোনাপিত-ধোপা সব বন্ধ। --দোহাই দাদা, একঘরে করে না। তোমরা যা’ বলব, তা-ই করবো। ছকে-নাপিত বন্ধ করে না দাদা-—দোহাই দাদা !” শশী পড়িয়া পড়িয়া আবার কেউ-কেউ করিতে লাগিল। গুপীদাস, যতনচন্দ্র ও নিধিরামে আবার পরামর্শ চলিতে লাগিল । শেষে গুপীদাস বলিল—আচ্ছ, তুই দশট টাকার সিন্নি দে—কালই দিতে হবে । নইলে তোকে জাতে উঠতে দেওয়া হ’বে না। বুঝলি রে ? শশী সবই বুঝিল—টীকা কোথায় ? আবার কালই দিতে হবে—কাজেই সে আবার কেউ-কেউ করিতে করিতে লাগিল। যতনচন্দ্র প্রস্তুত হইয়াই ছিল । বলিল—কেন, টাকার জন্যে ভাবনা কি তোর ? কৰ্ত্তঠাকুরকে ধর না । শশী,—মরণাপন্ন রুগ্ন শশী তাহতেই স্বীকার অাছে বলিয়া লাঠি ধরিয়া ধীরে ধীরে বাড়ী আসিয়া বিছানার আশ্রয় লইল । শ্রান্তিতে বিরক্তিতে রোগের যন্ত্রণায় সে অবসর হইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিল। একখানি পড়ো বাড়ী। সহরের একটি সংকীর্ণ রাস্তার মাঝামাঝি জায়গায় একটি ভাঙা প্রাচীরবেষ্টিত খানিকটা জমির উপর বাড়ীখানি। প্রাচীরের গায়েই একটি শীর্ণ পেয়ারা গাছ-কয়েকটি কাটাল গাছ তাহদের ঘন সবুজ পল্লব-পৱবহুল শাখাবাহু বিস্তার করিয়া স্থানটিকে একটি স্নিগ্ধ ছায়ায় ভরিয়া রাখিয়ছে। ছুটির দিন দ্বিপ্রহরে এই গাছ-তলে ছেলেদের মেলা বসে। কেহ বা পেয়ার গাছে উঠিয়৷ পেয়ারাগুলি না পাকিতেই তাহাদের সদব্যবহার করে। অপর কেহ কাঠাল গাছের প্রসারিত শাখার নীচে গাৰু কাটিয়া মাৰ্ব্বল খেলিতে ব্যস্ত থাকে। বাড়ীখানির দক্ষিণ দিকে—ঠিক সদর দরজার সম্মুখে একখণ্ড পতিত জমির উপর অজস্র কৃষ্ণচূড়ার গাছ। ফাঙ্কনের আবির্ভাবে সব গাছগুলি ফুলে ফুলে ভরিয়া উঠিয়া স্থানটিকে নানা অদ্ভুত ধরণের মৌমাছির গুঞ্জনে মুখর করিয়া রাখিয়াছে। আজ আর সেখানে ছেলেদের মেলা বসে নাই । পেয়ার গাছের খুব উচু ডালে বোধ হর দুই একটি পেয়ার তখনও অবশিষ্ট ছিল। গাছটির নীচে দাড়াইয়া নীরদ সতৃষ্ণনয়নে পেয়ার দুটির দিকে তাকাইয়া দাড়াইয়াছিল। ।