পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᏬ হিমানীরা আমাদের স্বজাত। আমি মতলব করেছি তাকে বিয়ে করে একদিন দুৰ্ম্ম করে দু-জনে বাড়ীতে গিয়ে হাজির হবো । ছেলের বউকে তো আর বাপ মা ফেলে দিতে পারবে না । ঠিক ! মনে হ’ল চাদমুখের প্রভাব মতিলালের সাংসারিক-বুদ্ধিকে এখনও মান করতে পারেনি । আমরা তাকে উৎসাহ দিলুম–লাগিয়ে দাও বিয়ে— আমরাও যাব তোমার সঙ্গে । আমাদের উৎসাহে হিমানী ও মতিলাল দু-জনেরই উৎসাহ গেল বেড়ে। অনেক দিন পরে আবার একটা নতুন উত্তেজনা পেয়ে আমরা মেতে উঠলুম। মতিলাল কোথা থেকে পুরোহিত জোগাড় ক’রে আনলে। বরকর্তা ও কন্যাকৰ্ত্তার শূন্ত আসন শাস্ত্রের মস্ত্রে পূর্ণ হয়ে উঠল। টাকাকড়িরও বিশেষ অভাব হ’ল না। নিৰ্ম্মলের ছিল সোনার হাতঘড়ি, আর আমার ছিল সোনার বোতাম ও আংটি। তা ছাড়া দু-চারখানা বইও হকারের দোকানে চলে গেল । শুভ দিন-ক্ষণে হিমানীর সঙ্গে মতিলালের বিয়ে হ’য়ে গেল। মতিলাল তার বাবাকে চিঠি লিখলে—হিমানী এখন আমার স্ত্রী, আপনার পুত্রবধূ। তাকে গৃহে স্থান দিতে আশা করি আপনাদের কোনো আপত্তি হবে না । আমরা শীগ গীরই বাড়ী যাব । দিন-পনেরো চলে গেল, কিন্তু মতিলালের চিঠির কোনো জবাব এল না। চিঠির জবাব না আসাতে মতিলাল ও হিমানী দুজনেই মুষড়ে পড়তে লাগল। সেই কঠোর দারিদ্র্য বোধ হয় আর তাদের সহ্য হচ্ছিল না। আরও দিন-পনেরো কেটে যাবার পরও যখন তার বাবার কাছ থেকে কোনো উত্তর এল না তখন একদিন মতিলাল বললে—না আস্থক জবাব—চল বেরিয়ে তো পড়া যাক, তারপরে যা হবার তাই হবে। আমরাও রাজি বেনারস কলেজের সঙ্গে ফুটবলের ম্যাচ আছে ব’লে বাড়ী থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে একদিন রাত্রি সাড়ে নটার গাড়ীতে মতিলাল ও হিমানীকে নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়া গেল । / প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ૭૦મ છis, sઃ হোতে বোধ হয় ঘণ্টাখানেক দেরী। ভোর হওয়ার দর একখানা গাড়ী ভাড়া ক’রে মতিলালদের বাড়ীর উদেশে যাত্রা করা গেল। শহর ষ্টেশন থেকে মাইল চার-পাচ টিকোতে-টিকোতে প্রায় ঘণ্টাখানেক বাদে দুরে । গাড়ী গিয়ে তাদের বাড়ীর কাছে পৌছল। বাড়ীর দরজায় মতিলালের একটি বোন দাড়িয়েছিল। সে আমাদের দিকে কিছুক্ষণ অবাক হ’য়ে চেয়ে থেকে ছুটে বাড়ীর ভেতরে চলে গেল । হিমানীকে নিয়েই ভেতরে যাওয়া হবে কি না তারই পরামর্শ চলছে, এমন সময় বাড়ীর মধ্যে মতিলালের বাবার চীৎকার শুনতে পাওয়া গেল। আমরা স্থির করলুম আপাততঃ হিমানী গাড়ীতেই বসে থাক। ঝড়ের প্রথম ঝাপটাটা কেটে যাবার পর তাকে নিয়ে যাওয়া যাবে। গাড়ী থেকে নেমে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে পড়া গেল। আগে নিৰ্ম্মল, তার পরে আমি, তার পরে মতিলাল। কিন্তু বেশীদূর অগ্রসর হোতে হ’ল না। মতিলালের বাবা হন হন ক’রে বাইরের দিকে এগিয়ে আসছিলেন। র্তার পেছনে তার ভাইবোনের দল উৎসাহের আবেগে চঞ্চল হ’য়ে ছুটে আসছে—এই অবস্থায় দুই শোভাযাত্রায় সজঘর্ষ বাধ ল। মতিলালের বাবা বললেন—বেরিয়ে যাও আমার বাড়ী থেকে, আমন ছেলের মুখদর্শন করতে চাই না। ভদ্রলোককে আমরা বোঝাতে লাগ লুম, কিন্তু তিনি সে-সব কথা কানে না তুলে আমাদেরও গালাগালি দিতে আরম্ভ করলেন। তার এক কথা ! হিমানীকে ছেড়ে চলে এস—আমি মেয়ে ঠিক করেছি তাকে বিয়ে কর— তবেই এ বাড়ীতে তোমার স্থান হবে। মতিলাল একধারে মানমুখে দাড়িয়ে রইল। পিতার • সহস্ৰ কৰ্কশ কথার একটি জবাবও সে দিলে না। ভাইবোনেরা একে-একে তাদের রাবার পেছন থেকে এগিয়ে এসে তাকে ঘিরে গোল হ’য়ে দাড়াল। সব ছোটটি মতিলালের একটা আঙল ধরে নাড়তে আরম্ভ ক’রে দিলে । ঘণ্টাখানেক ধরে অবিশ্রান্ত গালাগালি শোনার পর মতিলাল ধরা-গলায় আমাদের বললে—চল যাই। মুন ট্রেন থেকে ষ্টেশনে নামলুম তখন রাত্ত্বি শেয়, , আমরা ফিরলুম। তার বাবা চীৎকার করে উঠলেন