পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘনীকৃত তৈল শ্রীরাজশেখর বসু চলিত কথায় তৈল বলিলে যে-সকল বস্তু বুঝায় তাহাদের কতকগুলি সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। সকল তৈলই দাহ, অল্পাধিক তরল এবং জলে অদ্রাব্য। তাপিন কেরাসিন ও তিল তৈলে এই সকল লক্ষণ বর্তমান। পক্ষান্তরে স্পিরিট তৈল নয়, কারণ তাহ দাহ ও তরল হইলেও জলের সহিত মিশে । কিন্তু তাপিন কেরাসিন ও তিল তৈলে কতকগুলি প্রকৃতিগত বৈষম্য আছে। তার্পিন সহজে উবিয়া যায়, কেরাসিন উবিতে সময় লাগে, তিলতৈল মোটেই উবে ন। তিলতৈলের সহিত সোডা মিশাইয়া সাবান করা যায়, কিন্তু তাপিন ও কেরাসিনে সাবান হয় না । আমরা মোটামুটি কাজ চালাইবার জন্য পদার্থের আপাতলক্ষণ দেখিয়া শ্রেণীবিভাগ করি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক তাহাতে সস্তুষ্ট নন। তাহার নানাপ্রকার পরীক্ষা করিয়া দেখেন কোন লক্ষণগুলি পদার্থের গঠন ও ক্রিয়ার পরিচায়ক, এবং সেইগুলিকেই মুখ্যলক্ষণ গণ্য করিয়া শ্রেণীবিভাগ করেন। শ্রেণীনির্দেশের জন্য বৈজ্ঞানিক নূতন নাম রচনা করেন, অথবা প্রচলিত নাম বজায় রাখিয়া তাহার অর্থ সঙ্কচিত বা প্রসারিত করেন। এজন্য লৌকিক ও বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগে অনেকস্থলে বিরোধ দেখা যায়। লোকে বলে চিংড়ি-মাছ, বৈজ্ঞানিক বলেন চিংড়ি মাছ নয়। লোকে কয়েকপ্রকার লবণ জানে, যথা—সৈন্ধব, লিভারপুল, করকচ, বে-আইনী ইত্যাদি । বৈজ্ঞানিক বলেন, লবণ তোমার রান্নাঘরের একচেটে নয়, লবণ অসংখ্য, ফটকিরি তুতেও লবণ। কবি লেখেন— তাল-তমাল। বৈজ্ঞানিক বলেন—ও দুই গাছে ঢের তফাৎ, বরং ঘাস-বঁাশ লিখিতে পার। কিমিতি-শাস্ত্র অনুসারে তাপিন কেরাসিন ও তিল তৈল তিন বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়ে । তাপিন, চন্দন ও নেবুর তৈল প্রভৃতি গন্ধতৈল প্রথমশ্রেণী। কেরাসিন, পেট্রল, ভাসেলিন, এমন কি কঠিন প্যারাফিন-যাহা হইতে বৰ্ম্মা-বাতি হয়, দ্বিতীয়শ্রেণী। তিলতৈল, ঘৃত, চৰ্ব্বি প্রভৃতি উদভিজ্জ ও প্রাণিজ স্নেহদ্রব্য তৃতীয়শ্রেণী । তৃতীয়শ্রেণীর সাধারণ ইংরেজী নাম fat ; আমরা এই শ্রেণীকেই তৈল নামে অভিহিত করিব । অপর দুই শ্রেণী এই প্রবন্ধের বিষয়ীভূত নয়। তৈল মানুষের খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান। ভারতের প্রদেশভেদে সর্ষপ তিল চীনাবাদাম ওনারিকেল তৈল রন্ধনে ব্যবহৃত হয়। স্কৃতের ত কথাই নাই, ভারতবাসী মাত্রই ঘৃতভক্ত। চৰ্ব্বির ভক্তও অনেক আছে। কাপাসবীজের তৈলও আজকাল রন্ধনে চলিতেছে, কোনো কোনো স্থানে তিসির তৈলও বাদ যায় না । মাদ্রাজ-প্রদেশে রেড়ির তৈলে উপাদেয় আমের আচার প্রস্তুত হয়। সাবানের উপাদান তৈল ও সোডা। তৈলভেদে সাবানের গুণের তারতম্য ভয় । চৰ্ব্বি ও নারিকেলতৈলের সাবান শক্ত, রেড়ি তিল চীনাবাদাম প্রভৃতি তৈলের সাবান নরম । লোকে নরম সাবান পছন্দ করে ন, সেজন্য অন্ত তৈলের সহিত কিছু চৰ্ব্বি ও নারিকেলতৈল মিশানো হয় । নারিকেলতৈলের বিশেষ গুণ— সাবানে প্রচুর ফেনা হয়। কোনো কোনো কাজে নরম সাবানই দরকার হয়, সেজন্য নারিকেলতৈল ও চৰ্ব্বি না দিয়া তরল উদভিজ্জ তৈল বা মাছের তৈল ব্যবহার করা হয় এবং সোডার বদলে আরাধিক পটাশ দেওয়া হয়। কিন্তু মোটের উপর কঠিন সাবানেরই আদর বেশী, সেজন্য চৰ্ব্বি ও নারিকেলতৈলের কাটতি ক্রমে বাড়িতেছে। তাতে বুনিবার পূৰ্ব্বে স্থতায় যে মাড় দেওয়া হয় তাহার একটি প্রধান উপকরণ চৰ্ব্বি । আমাদের দেশের তাতীরা নারিকেলতৈল দেয়, কিন্তু মিলে চৰ্ব্বিই প্রকৃষ্ট বলিয়া গণ্য হয়। এই কারণেও চব্বির মূল্যবৃদ্ধি হইতেছে।