পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

చిళిg প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৩৭ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড বসিয়া ভোজন করেন না, বাবচ্চির রান্না ছাড়া মুখে তুলেন না। স্ত্রীর হি দুয়ানী প্রথম প্রথম একটু একটু ছিল। কিন্তু পাহাড়ে গোময় গঙ্গাজলের অভাবে সেটুকু বহুদিন হইতেই ধুইয়া মুছিয়া নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে। একটি মাত্র কন্যা আঠারয় পা দিয়াছে। এতদিন পৰ্য্যন্ত কেহ বিবাহের নামগন্ধও উত্থাপন করেন নাই । সর্দা বিল সম্বন্ধে ডাঃ মিটারের কি অভিমত ঠিক বুঝা ন। যাইলেও বিবাহের বয়স আরও বুদ্ধি করা উচিত, তাহা তাহার আচরণ হইতে অল্পমান করা যায়। চতুর্থ ঘরে জব্বলপুরের সিনিয়র উকীল এল-এন, মিত্র বাস করিতেছেন । ইনি ষষ্ঠভ্রাতা । সরস্বতীর কুপার আধিক্য থাকিলেও লক্ষ্মীর অনুগ্রহে ইনি বঞ্চিত । কোনক্রমে স্ত্রীপুত্র লইয়া বিদেশ-বাসের ব্যয়-সঙ্গুলান করিয়া থাকেন। হাতে উদ্ধৃত্ত যাহা কিছু থাকে স্ত্রীর অলঙ্কার প্রসাধনেই ব্যয়িত হইয়া যায়। ফলে, তাহার আট-দশ বৎসরের পুরাতন চাপকান, গরম স্কুট, সামলা বনিয়াদী চাল বজায় রাখিলেও বহুদূর হইতে মাত্র পশ্চাদ্ভাগ দেখিয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বলিতে পারে—ঐ রে নরেন উকীল যাচ্ছে । স্ত্রী নবীন কালী— নব নব সখে মাতিয়া ও পুত্রকন্যাদের মাতাইয়া সদাসৰ্ব্বদা ইহার হাড় ও মাংস ভাজা ভাজা করিয়া থাকেন । সপ্তম ভাই-সাত বৎসর পূৰ্ব্বে বিবাহ ও ম্যাটিক ফেল, দুই কাৰ্য্যই একযোগে সমাধা করিয়া হরিদ্বার অভিমুখে সরিয়া পড়েন। বৎসরখানেক কোন সাধুর আশ্রমে থাকিয়া যোগযাগ ভজনপূজনের সারতত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করিয়া গৃহীর শ্রেষ্ঠ যোগ কৰ্ম্মমার্গে প্রত্যাবর্তন করিয়াছেন । পিতৃপিতামহের জমিজমার কিছু কিছু অংশ পাইয়াছিলেন, সাধুর আশ্রমে থাকিবার কালে কিছু মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুক ও ছাইভন্মের শিকড় সংগ্ৰহ করিয়াছেন এবং অবসরমত বাংলা হোমিওপ্যাথি পুস্তক কিনিয়া চিকিৎসা-শাস্ত্রের দুরূহ তত্ত্বও কিছু কিছু আয়ত্ত করিয়াছেন। এখনও তিনি গেরুয়া পরেন নাই, ছাই না মাখিলেও মাথা রক্ষ—চুলে জট ধরিয়াছে, চক্ষুর দৃষ্টি তীক্ষু, বাহুতে ও কণ্ঠে রুদ্রাক্ষের মালা বিলম্বিত, এবং চিত্ত-একাগ্রতার জন্য প্রত্যহ সকালসন্ধ্যায় ছোট কলিকার ধূমপান করিয়া থাকেন। স্বতরাং সংসারযন্ত্র তাহার নিকট অচল নহে। অমূৰ্ত্তের আলোক অনুসন্ধান করিলেও ইহলোক সম্বন্ধে মোটেই অচেতন নহেন। পাচটি পুত্রকন্যা প্রতিনিয়ত র্তাহাকে সংসার সম্বন্ধে সচেতন করিয়া রাখে। পঞ্চম ঘরখানিতে তিনি অস্থায়ী ংসার বাধিয়াছেন । ষষ্ঠ ঘরে ছোট বোন কনকলতা বহুদূর হইতে আসিয়া বিশ্রাম লইতেছেন। স্থদুর দক্ষিণে কোনো দেশী রাজার অধীনে ইহার স্বামী চাকুরী করেন। একটি মাত্র পুত্র, বছরখানেকের হইয়াছে। মাকে মা ও বাবাকে বাবা ছাড়া আরও অনেক অস্পষ্ট ভাষা সে উচ্চারণ করিতে শিখিয়াছে। তাহার অর্থবোধ লইয়া স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রত্যহ তৰ্কযুদ্ধ চলিয়া থাকে। খোকা হাসিয়া, হাত পা ছুড়িয়া, মায়ের মুখে ও বাপের গালে চুমা দিয়া সেই সব তর্কের সুমীমাংসা করিয়া দেয়। অর্থবান, স্বাস্থ্যবান এই দম্পতি ভালবাসার পথ ধরিয়া সুখ-স্বর্গের অভিমুখে চলিয়াছে । অভাবের তীব্র তাড়ন। সে পথে কণ্টকগুন্মে বাধা জন্মাইয়া তাহীদের স্বচ্ছন্দ গতিকে ব্যাহত করিতে পারে নাই । প্রেমের স্পর্শ তাহদের দুটি হৃদয়ের পারাবারে—চিরমিলন পূর্ণিমার আলোয় স্ফীত হইয়া উঠিয়াছে। জীবনস্বর্গে তাহারা সুরসম্রাট ইন্দ্র ও শচী। উপরের ত্রিতল কক্ষে বড় ভাই মণিমোহন ও তাহার পাশ্ববর্তী কক্ষ সকলে খুড়তুত, জাঠতুত প্রভৃতি তুত’ সম্পর্কীয়ের আশ্রয় লইয়াছেন। ইহাদের বিস্তৃত ইতিহাস এই সবেরই পুনরুক্তি মাত্র। বাঙালী সংসারের অভাবঅনটন বা বিলাসবাহুল্য অথবা পরিমিত চাল-চলনের ভগ্নাংশ লইয়া ইহারা গঠিত। সকলেরই স্বামী পুত্র কন্য। পৌত্রের সমষ্টি-সীমায় এক একটি গওঁী ঘেরা। সংসার ঐ গণ্ডীর মধ্যেই আবদ্ধ। বর-বিদায়ের দিন বাড়ীতে খুব একটা হৈ চৈ উঠিল। মেজদিদি র্তাহার বিশাল বপু আন্দোলন করিয়া ও কাংস্ত-বিনিনিত কণ্ঠ উচ্চগ্রামে তুলিয়া অতবড় বাড়ীখন দলিয়া চম্বিয় বেড়াইতে