পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] , কুঞ্জটিক ও কিরণ

  • වLඳ

লাগিলেন। শাপমন্নি, গালিগালাজ, শাসন-তিরস্কার, অকুনয়-বিনয়, ভয়-ক্ৰন্দন প্রভৃতি বিবিধ রসের বিস্তার করিয়া জানাইলেন, তাহার পুত্রবধুর গলার হার খোয়৷ গিয়াছে। কে লইয়াছে তাহাও তিনি বুঝিতে পারিয়াছেন, শুধু আত্মীয়তার খাতিরে এতক্ষণ পুলিশ ডাকেন নাই। যদি না সে হার বাহির করিয়া দেয় তো চক্ষু লজ্জার খাতির করিবেন ন—একথাও প্রবল কণ্ঠে বারংবার জানাইয়া দিতেছেন। প্রথম সারির তৃতীয় কক্ষখানিই তাহার তীক্ষদৃষ্টির লক্ষ্যস্থল। তাহার দৃষ্ট্রির অনুসরণ করিয়া মেজবে বলিল,— ওমা, কি ঘেন্না ! কি প্রবৃত্তি গো ! ছোটবোঁ আশ্বাস দিয়া কহিল,—ভয় কি মেজঠাকুরঝি, আমার ঘরে এসো । উনি এখনি গুণে গেঁথে বলে দেবেন, কোন চোরের | وکی پEfg.۔ অন্যান্য সকলে শতমুখে হায় হায় করিতেছিলেন। ছোটবৌয়ের কথা শুনিয়া যেন অকূলে কুল পাইলেন। একসঙ্গে প্রবল কলরব তুলিয়া কহিলেন,—তাই চল গো–তাই চল । ছোটকৰ্ত্ত যখন সাধুসন্ন্যাসীর ঠেয়ে এমন বিস্তেটা শিখে এসেছে, তখন পরখ করতে আপত্তি কি ? আপত্তি কাহারও ছিল না। অবিলম্বে ছোটকৰ্ত্তার ঘরে ভিড় জমিয়া গেল । তিনি খড়ি পাতিয়া, মেজদিদির হাতের রেখা কচলাইয়া, দুই চক্ষু উৰ্দ্ধে তুলিয়া বহুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন, পরে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া গম্ভীর কণ্ঠে কহিলেন,—সে আর শুনে কাজ নেই মেজদি । মেজদি চক্ষু ঘুরাইয়া কহিলেন,—তবু শুনি ?—ছোটকৰ্ত্তা আবার ধ্যানস্থ। নিৰ্ব্বাকৃ। বহুক্ষণ অনুনয়বিনয়ের পর কহিলেন,—নাম আমি বলবো না। তবে জেনে রাখ—এ তোমার আপনার লোকের কাজ । মেজদিদি শেষ পৰ্য্যস্ত না শুনিয়াই বোমাফাটার মত শামুখর হইয়া উঠিলেন,-থাক আর বলতে হবে না। আমি বুঝেছি—বলিতে বলিতে একরূপ ছুটিয়াই তৃতীয় কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সেজবৌয়ের হাত ধরিয়া একটা হেঁচকা টান দিলেন। এ্যা এত বড় আস পর্দা ! আমার বোয়ের গয়নায় হাত ! ছোট পুত্রটিকে ঘুম পাড়াইয়। সেজবোঁ সবেমাত্র জলযোগ করিতে বসিয়াছিল। মিষ্টিটায় একটা কামড় দিয়া জলের ঘটিটা এক হাতে তুলিবার উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময়ে এই প্রচণ্ড অাকর্ষণ । তৃষ্ণাৰ্ত্ত কণ্ঠ ছাপাইয়া ভয়াৰ্ত্ত করুণ স্বর বাহির হইয়া পড়িল,—মেজদি ! মেজদি ঝঙ্কার দিয়া উঠিলেন,—চোরের কান্না দেখে আর বঁচি না ! নে, ঢং রাখ, বার কর আমার হার । মেজবে গরীব কেরাণীর স্ত্রী। এতগুলি অতিথঅভ্যাগতের মধ্যে তার অবস্থা শোচনীয়, স্বতরাং চৌর্য্য যে একমাত্র তাহারই অপরাধ তাহ বলিতে ধনগৰ্ব্বিতার বাধিবে কেন ? যদিও সেজবৌয়ের ঘর মেজদিদির ঘরের পাশে নহে। তাহার দুই পার্থের ঘরে সেজদিদি ও মেজ-বেী বাস করিতেছে। কিন্তু অবস্থা উভয়েরই উন্নত। একজনের স্বামী ডেপুটী ম্যাজিষ্ট্রেট,— অন্যের পুলিশ ইনস্পেক্টর। সন্দেহের সাধ্য কি তাহার ধার ঘেষিয়াও চলে। তাই ইহাদের মধ্যে সবচেয়ে অপরাধী সেজবোঁকে দোষী সাব্যস্ত করিতে বড়মানুষ ননদের কিছুমাত্র বাধিল না। কারণ, সে আর যাহাই হউক—দরিদ্র । সেজবে কাদিতে কাদিতে তাহার ঘুমন্ত পুত্রের মাথায় হাত রাখিয়া বলিল,—আমি যদি নিয়ে থাকি মেজদি, তো একরাত্তির যেন— কে পিছন হইতে আসিয়া তীক্ষুকণ্ঠে বাধা দিয়া কহিল,—থাম সেজবৌদি, মা হ’য়ে আমন কঠিন দিব্যি করে না। পরে মেজদিদির পানে ফিরিয়া তেমনি তীক্ষুকণ্ঠে বলিতে লাগিল,—ছিঃ ! ছিঃ ! তোমার লজ্জাও হ’লো না মেজদি, এই এক বাড়ীর লোকের সামনে সেজবোঁকে চোর বলে শাসন করতে ! কি অপরাধ ওর ! গরীব বলে কি ও মানুষ নয়, না মানসন্ত্রম নেই ? সকলে মুখ ফিরাইয়া দেখিল, সদাহাস্যময়ী নদিদির মুখ বজ্রগর্ত মেঘের মত ভীষণ গম্ভীর। মেজদিদি ক্ষণকাল চুপ করিয়া কি যেন ভাবিয়া লইলেন ; পরে সহসা লুপ্ত বিক্রম জাগাইয়। হুঙ্কার দিয়া উঠিলেন,-বেশী বকিসনে