পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রধাণী—আধাঢ়, ১৩৩৭ ذيان স্বজনরা অবাক হইতেন, এবং তিনি যে কালে একজন অসামান্য ব্যক্তি হইবেন সেই বয়সেই তাহার আভাস পাওয়া যাইত। বিশ বৎসর বয়স উৰ্ত্তীর্ণ হইবার পূর্বেই অসাধারণ নৈয়ায়িক বলিয়। চারিদিকে জগন্নাথের খ্যাতি ছড়াইয়া পড়িল । স্মৃতিশাঙ্গেও তাহার গভীর জ্ঞান ছিল । কোনো সমস্যায় পড়িলে ওয়ারেন হেষ্টিংস, শোর, সদর দেওয়ানী ও নিজামং আদালতের রেজিষ্ট্রার হ্যারিংটন প্রভৃতি উচ্চ রাজকৰ্ম্মচারীরা তাহার পরামর্শ লইবার জন্য প্রায়ই ত্রিবেণীতে ছুটিতেন। জগন্নাথের অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য দেশের উচ্চনীচ সকলেই তাহাকে অত্যস্ত সম্মান করিত এবং অনেক ধনী জমিদারের নিকট হইতে তিনি ব্রহ্মোত্তর জমি পাইয়াছিলেন। শোভাবাজার রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা, মহারাজা নবকৃষ্ণের সভায় সে-সময়ে অনেক জ্ঞানী-গুণীর সমাবেশ হইত। পণ্ডিত জগন্নাথ ও এই সভা অলঙ্কত করিতেন । “মহারাজা নবকৃষ্ণ র্তাহাকে একখানি তালুক ও পাক বসতবাটি নিৰ্ম্মাণের উপযোগী অর্থ-সাহায্য করিয়াছিলেন। মহারাজা একবার তাহাকে বাংসরিক লক্ষ টাকা আয়ের একটি জমিদারী দিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু পণ্ডিত তাহা প্রত্যাখান করিয়া বলেন যে,তাহা হইলে তাহার বংশধরেরা বিলাসী হইয়া পড়িবে — ধনগৰ্ব্বে বিদ্যাচচ্চা বন্ধ করিয়া দিবে। মহারাজা নবকৃষ্ণের সুপারিশেই গভর্ণমেন্ট তাহাকে হিন্দু-আইন সঙ্কলনে নিযুক্ত করেন।”* জগন্নাথ অদ্ভুত শ্রুতিধর ছিলেন । র্তাহার স্মৃতিশক্তি সম্বন্ধে আজ ও অনেক গল্প শোনা যায় । তিনি অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে সংস্কৃত নাটক রামচরিত' উল্লেখযোগ্য । কিন্তু যে-কাজের দ্বারা তিনি দেশ ও দশের মঙ্গলসাধন করিয়া অমরত্ব লাভ করিয়াছেন, এইবার তাহারই আলোচনা করিব । বিবাদ-ভঙ্গার্ণব-রচনা হিন্দু ব্যবহারশাস্ত্র মতভেদ-সঙ্কল। পণ্ডিত জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন অসাধারণ পাণ্ডিত্যের সহিত বিভিন্ন মতের সামঞ্জস্ত করিয়া ‘বিবাদ-ভঙ্গীর্ণব’ রচনা করিলেন । এই

  • N. N. Ghose's Memoirs of Maharaja Mulkissen Bahrıdur, p. 18ö.

[ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড কাৰ্য্য তিনি একাই সম্পাদন করেন,—সময় লাগিয়াছিল তিন বৎসর। ১৭৯২,ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আটশত পৃষ্ঠাব্যাপী এই স্ববৃহৎ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি স্তর উইলিয়াম জোন্সের হাতে দেন । জোন্স আশা করিয়াছিলেন, শীঘ্রই তর্কপঞ্চাননসঙ্কলিত আইন-গ্ৰন্থখানি সংস্কৃত হইতে ইংরেজীতে অতুবাদ করিয়া ফেলিতে পারিবেন । ইহার ভূমিকার জন্য তিনি অনেক মূল্যবান উপাদান ও সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন । কিন্তু বিধি বাম হইলেন । ১৭৯৪, ২৭এ এপ্রিল নিষ্ঠুর মৃত্যু তাহার ইহলোকের সমস্ত আশা বিফল করিয়া তাহাকে লোকান্তরে লইয়া গেল। র্তাহার মৃত্যুতে জনসাধারণ এই আইন-সারসংগ্রহের জন্য প্রস্তাবিত, র্তাহার স্বহস্তে রচিত, ইংরেজী অনুবাদ ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভূমিকা হইতে বঞ্চিত হইল । কিন্তু জোন্সের সাধু ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে নাই। তাহার মৃত্যুর পর, গভর্ণর-জেনারেল স্তর জন শোরের নিৰ্দ্দেশে, মীর্জাপুর জিলা আদালতের জজ এইচ-টি-কোলব্রুক তর্কপঞ্চানন-সঙ্কলিত ব্যবস্থা-পুস্তকখানি Digest of Hindu Law on Contracts and Successions Rio ইংরেজীতে অতুবাদ করেন। ১৭৯৮ সালে ইহা কলিকাতায় মুদ্রিত হয়। এই অনুবাদ-কায্যে কোলক্রকের দুই বৎসরের কিছু অধিক সময় লাগিয়াছিল ( ডিসেম্বর ১৭৯৬ ) । পারিশ্রমিক-স্বরূপ তিনি সরকারের নিকট হইতে পনের হাজার টাকা পাইয়াছিলেন । তর্কপঞ্চাননের রচনা-সম্বন্ধে কোলব্রুক তাহার অনুবাদ গ্রন্থের ভূমিকায় লিপিয়াছেন,— “হিন্দু-আইনের অনেকগুলি সারসংগ্ৰহ, এবং টীকা হইতে চয়ন করিয়া বৰ্ত্তমান গ্রন্থ সঙ্কলিত হইয়াছে। গ্রন্থকর্তা ভক্তিভাজন জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন মহাশয় নিজে মূল স্বত্রগুলির যতপ্রকার সম্ভব ভাষ্য করিয়াছেন ।. আধুনিক হিন্দু-আইন-সারসংগ্ৰহ গ্রন্থগুলির মধ্যে এই কয়খনি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য —(১) হেষ্টিংসের আদেশে সঙ্কলিত বিবাদার্ণব-সেতু', (২) স্তর উইলিয়াম জোনসের অনুরোধে, মিথিলার আইনজ সৰ্ব্বরী ত্রি.ে কত্ত্বক সঙ্কলিত বিবাদ-সারার্ণব’ এবং জগন্নাথ তর্কপঞ্চা।