পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] বেলার দিকে চেয়ে শুষ্ককণ্ঠে অন্যমনস্কে মমতা বলল, “আগে উনি আসুন ।” শিউলি কঁদিতে লাগল। “আমার খিদে পেয়েছে যে, বাবা নাই বা এল—বাবা ত আর আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছে না, তুমি ভাত রাধ না –যতীন দাস যেমন না খেয়ে মারা গেল আমিও কি তেমনি না খেয়ে মরে যাব ?” মমত। চমকে উঠল । বলল শিউলি ?” দুহাতে চোখের জল মুছতে মুছতে শিউলি বলল, *আমি জানি । সরলা আমায় বলেছে। তাই জন্যেই ত আজ তাদের ইস্কুলের ছুটি হয়ে গেল।” মেয়ের মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে তার অম্লান কপালের উপরকার চুলের গোছাট। সরিয়ে দিয়ে চুমু খেয়ে, মমত। বলল, “রাধছি মা—একটু দেরী কর।” “আর দেরী করতে পারছি ন ম । এখনি আমার বড় ক্ষিদে পাচ্ছে।” উপায়হীনা জননীর বুকের ভিতরটা কি রকম ধড় ফড় করে উঠল । তাই ত! এই যে দুটি শিশুসস্তান আজ ক্ষুধায় শীর্ণ হয়ে তার কাছে আহার চাইছে, এদের এই ক্ষুধার দাবী, প্রাণের দাবী, সে জননী হয়ে কি করে অগ্রাহ করে ? সে ত জননী, অপর ত কেউ নয়। তিলে তিলে সন্তান-হত্য তার দ্বারা সম্ভব কি করে श्श्व ? বঁচিবার দাবী সবারই আছে। তারও কি নেই ? সমাজের গণ্ডী পার হয়ে, তার বিধিনিষেধ অগ্রাহ করে, প্রাণ বাচাতে সে কি নারী বলেই পারে না ? যিনি জন্ম দিয়েছেন, তার আইন অমান্ত করে আত্মহত্যায় যদি পাপ থাকে, তা হলে সমাজের সবল মুঠোর মধ্যে তিলে তিলে নিজেকে হত্যা করে জননী হয়ে সস্তানহত্যার পাপ হতে পরিত্রাণের উপায় কি ? যে-সমাজ হাত-পা বেঁধে চিরদিনের মত এই নারীজগতকে পঙ্গু করে রেখেছে, যার স্বাধীনভাবে রোজগারের কোনো ক্ষমতাই সে রাখেনি, সেই সমাজের ভিতর এই দুইটি শিশুকে সে বঁাচাবে কি করে ? এই নিরুপায় বঙ্গনারীর


“ষাটু—কে তোকে একথা প্রাণের দাবী SAMAAA AAASA SAASAASAASAASAASAASAAAS 8సి(t SAAAAAAAS AA SAASAASSAAAAAAS AAASASAAAAASA SAASAASAASAASAAAS উপর জননীর দায়িত্ব চাপান কি বিধাতারই সুবিচার হয়েছে বলতে হবে । কিন্তু-না। তাকে বাচতেই হবে। ছেলেমেয়েকেও বাচাতে হবে। তার শরীরের একখানি অস্থি থাকতে সন্তানদের এভাবে না খেয়ে শুকিয়ে মারা যেতে সে দেখতে পারবে না। তাতে যাই হোক ৷” “শিউলি—” “কি ম৷ ” “এই চিঠিখানা নরেন্দ্র বাবুকে দাও গে ত ম৷ ” মা দিল, মেয়ে কাগজখানা মুড়ে হাতে নিয়ে বলল, “যাচ্ছি—কিন্তু তুমি আগে রান্না চড়াও।” “চড়াব। আগে তুই আয় ।” মেয়ে চলে গেল। একট। বহুবিলঙ্গী শ্বাস মোচন করে মমতা সেইখানে আছড়ে পড়ল । চোখ বুজে মড়ার মত মাটি আঁকড়ে পড়ে রইল । আর কালির ধারার মত বহুকষ্টের অশ্ৰুজল চোখের কোণ বেয়ে ঝরতে লাগ ল । শিউলি এসে একথান চিঠি আর একগোছা দশ টাকার নোট তার হাতে গুজে দিল । বলল, “ম, নরেন্দ্রবাবু দিলেন। . বললেন, আমি কাল যাব বলে দিস।” মমত উঠে বসল। “ধা মা আর দেরী করিস নে— এই নোটখানা নিয়ে পাচ টাকার সন্দেশ রসগোল্লা কিনে আন । এত বেলায় আর কখন ভাত চড়াব বল ?” একমুখ হেসে মেয়ে বলল, “পাচ টাকার সন্দেশ রসগোল্লা কি হবে মা ? সে যে অনেক—” “হোক গে-তুই যা।” তারপর সেই এক চ্যাঙারী ভাল ভাল সন্দেশ নিজের হাতে নিয়ে একটি একটি করে দুটি বুভূক্ষিত শিশুর মুখে তাদের জননী তুলে দিতে লাগল। আর একটি একটি করে অশ্রুকণ টপ টপ করে ঝরে, তার বক্ষবসন সিক্ত করে দিতে লাগল। ংসারে ভাল যা-কিছু দারিদ্র্যদুঃখের পেষণে এমনি করেই তার দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যায়। কে তার খবর রাখে, কেবা তার প্রতিকার-চেষ্টায় মাথা ঘামায় । জগৎ জানেও না হয়ত । আর যদিই বা কেউ জানে তাহ’লে সেই দুর্তাগিনীর নিন্দায় তারা বিশ্ব মুখর করে