পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ob যত বই পাওয়া যায় হাতের কাছে—পড়িতে চেষ্টা করে । কখনও খেয়াল নক্ষত্র জগং কখনও প্রাচীন গ্রীস ও রোমের জীবনযাত্র-প্রণালীর সহিত একটা নিবিড় ধরণের পরিচয়ের ইচ্ছা—কখনও কীটুস, কখনও হল্যাণ্ড রোজের নেপোলিয়ন । কোনো খেয়াল থাকে দুদিন, কোনোট আবার একমাস। তার কল্পনা সব সময়ই বড় একটা কিছুকে আশ্রয় করিয়া পুষ্টিলাভ করিতে চায়—বড় ছবি, জাতির উত্থান-পতনের কাহিনী, চাদের দেশের পাহাড়শ্রেণী, বৰ্ত্তমান মহাযুদ্ধ, লোকের জীবনী । কারখানার ম্যানেজার অার একদিন তাগিদ দিলেন । খুব স্বগের বাস ছিল না বটে,কিন্তু এখন সে ধায় কোথায় ? হাতে কিছু না থাকায় সে এবার পদাটা একদিন বেচিতে লইয়া গেল । এটা তাহার বড় সখের জিনিষ ছিল । পর্দাটাতে একটা জাপানী ছবি আঁক—ফুলে ভর চেরীগাছ, একটু জলরেখা, মাঝ-জলে বড় বড় ভিক্টোরিয়া রিজিয়া ফুটিয়া আছে, ওপারে ঢেউখেলানো কাঠের ছাদওয়াল একটা দেবমন্দির, দূরে ফুজিসানের তুষারাবৃত শিখর একটু একটু নজরে পড়ে। এই ছবিখানার জন্যই সে পদাটা কিনিয়াছিল, এইজন্তই এতদিন হাতছাড়া করিতে পারে নাই— কিন্তু উপায় কি ? সাড়ে তিন টাকা দিয়া কেনা ছিল, বহু দোকান ঘুরিয়া তাহার দাম হইল এক টাকা তিন আন । পর্দা বেচিয়া অনেকদিন পরে সে ভাত রাধিবার ব্যবস্থা করিল। ছাতু খাইয় খাইয়। অরুচি ধরিয়া গিয়াছে, বাজার হইতে এক পয়সার কলমী শাকও কিনিয়া আনিল। মনে পড়িল সে কলমী শাক ভাজ। খাইতে ভালবাসিত বলিয়া ছেলেবেলায় দিদি যখন-তখন গড়ের পুকুর হইতে কত কলমী তুলিয়া আনিত । দিনসাতেক পর্দা-বেচা অর্থে চলিল মন্দ নয়, তার পরেই যে কে সেই ! আর পর্দা নাই, কিছু নাই, একেবারে কানাকড়িট হাতে নাই । কলেজ যাইতে হইল না-থাইয়া—কিছু না থাইয়। বৈকালে কলেজ হইতে বাহির হইয়া সত্যই মাথা ঘুরিতে লাগিল, আর সেই মাথা ঝিম ঝিম করা, পা নড়িতে না কোনে বড় প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড চাওয়া। মুস্কিল এই যে, এই অবস্থা সে কাহারও কাছে বলিতেও পারে না–ক্লাসে মিথ্যা গৰ্ব্ব ও বাহাদুরীর ফলে সকলেই জানে যে, সে অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে, কাহারও কাছে বলিবার মুখও তো নাই। দু-একজন যাহারা জানে, যেমন জানকী—তাহদের নিজেদের অবস্থাও তথৈবচ | সারাদিন না খাইয়৷ সন্ধ্যার সময় বাসায় আসিয়াই শুইয়া পড়িল । রাত আটটার পরে আর না থাকিতে পারিয়৷ তেওয়ারী-বধূকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল—ছোল৷ কি অড়রের ডাল আছে, বহু ? আজ আর খিদে নেই তেমন, রাধবে না। আর, ভিজিয়ে পেতাম । সকালে উঠিয়াই প্রথমে তাহার মনে আসিল যে, আজ সে একেবারে কপদক শূন্ত। আজও কালকার মত না থাইয়। কলেজে যাইতে হইবে। কতদিন এভাবে চালাইবে সে ? না খাইয় থাকার কষ্ট ভয়ানক-কাল লজিকের ঘণ্টার শেষে সেট। সে ভাল করিয়া বুঝিয়াছিল. বিকালের দিকে ক্ষুধাটা পড়িয়া ধাওয়াতে তত কষ্ট বোঝ৷ যায় নাই—কিন্তু সেই বেলা দুটোর সময়ট . পেটে ঠিক যেন বোলতার ঝাক হুল ফুটাইতেছে—বার দুই জল খাইবার ধরে গিয়া গ্লাস-কতক জল খাইয়া কাল যন্ত্রণাটা অনেকখানি নিবারণ হইয়াছিল। আজ আবার সেই কষ্ট সম্মুখে ! হাত মুখ ধুইয়া বাহির হইয়া বেল দশটা পৰ্য্যস্ত সে আবার নানা গ্যাস পোষ্টের বিজ্ঞাপন দেখিয় বেড়াইল, তাহার পর বাসায় ন৷ ফিরিয়৷ সোজা কলেজে গেল । অন্য কেহ কিছু লক্ষ্য না করিলে ও অনিল দু-তিনবার জিজ্ঞাসা করিল তাহার কোনো অমুখ-বিমুখ হইয়াছে কিনা, মুখ শুক্নো কেন । অপু অন্য কথা পাড়িয়া প্রশ্নট এড়াইয়া গেল । বই লইয়া আজ সে বলেজে আসে নাই, খালি হাতে কলেজ হইতে বাহির হইয়া রাস্তায় রাস্তায় খানিকটা ঘুরিল । হঠাৎ তাহার মনে হইল, ম আজ দিন-বারে আগে যে টাকা চাহিয়া পত্র পাঠাইয়াছিল – টাকাও দেওঁয়া হয় নাই, পত্রের জবাবও না । কথাটা ভাবিতেই সে অত্যন্ত ব্যাকুল হইয় পডিল— না খাওয়ার কষ্ট সে খুব ভাল বুঝিয়াছে—ময়েরও হয় ত