পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లి: প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড میامی هیت عیت جسمی “একটা কথা শুনবে ? তোমাকে কিছু বলতেও ত ভরসা হয় না, খ্যাক করে উঠবে এখনি । কিন্তু নেহাং ঠেক৷ এবার, সামলাতে না পারলে চাকরিটিও যাবে।” স্বামীর ভূমিকা শুনিয়াই শশিমুখীর প্রাণ উড়িয়া গেল। একেই ত মুখের সীমা নাই, তাহার উপর স্বামীর কাজটিও গেলে, গলায় দড়ি দেওয়া ভিন্ন তাহদের আর কোনো উপায়ই থাকিবে না। উদ্বিগ্নভাবে জিজ্ঞাস করিল, “কি হ’ল আবার ?” অটল বলিল, “সেই যে বৈশাখ মাসে হুটুর ভারি অসুখটার সময় তিনশ টাকা ধার করেছিলাম, না ? সেই .টাকা এখন স্বদে আসলে চারশ’ দাড়িয়ে গেছে। মাড়োয়ারী ব্যাট। আর ফেলে রাখবে না, নালিশ করবার নোটিশ দিয়েছে। নালিশ করলেই ডিক্ৰীও হয়ে যাবে। সম্বল ত ঐ চাকুরী, তার উপর ক্রোকৃ করলে, সৰ্ব্বনাশ হয়ে যাবে। বড় সাহেব এ সব বিষয়ে ভয়ানক কড়া । সে বছর কালীপদর চাকরীই গেল এই জন্তে । আমাকেই কি আর ছেড়ে কথা কইবে ?” g শশিমুখী কাদ কাদ হইয়া বলিল, “কি সৰ্ব্বনাশ! আমরা দাড়াব কোথায় তাহলে ? ঘরে ত কিছু এমন নেই, যা বেচলে একশ টাকাও হয় । খালি মা কুন্তীকে যে হারটা দিয়েছিলেন, সেইটা কোনোমতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। তা বিক্ৰী করলে কতই আর হবে ? ষাট-সত্তর টাকা বড়-জোর । তা দিয়ে কি এখনকার মত ঠেকান যাবে ?” অটল বলিল, “এ মাসটা না হয় ঠেকালাম, পরের মাসটা কি দিয়ে ঠেকাব ? তার যেরকম মেজাজ, কিন্তীতে টাকা নিতে যদি রাজীও হয়, একবার দিতে না পারলেই মাইনের উপর চড়াও হবে । তাই বলছিলাম কি, তোমার জগমোহন দাদাকে একখানা চিঠি লেখ না ? ভবানীপুরেই ত থাকে ?” শশিমুখীর আঁধার মুখ আরও যেন আঁধার হইয়া আসিল। একটু থামিয়া সে বলিল, “তারা কোনোদিম ডেকে জিগগেষ শুদ্ধ করে না, তাদের কাছে হাত পাততে যাব কোন মুখে ?” অটল বিরক্ত হইয়া বলিল, “এর পর যখন রাস্তায় হাত পাততে হবে, তখন কোন মুখে পারবে ? গরীবের অত তেজ ভাল নয়। পূজো আসছে সামনে, ভাইফোট৷ আসছে, এখন একটু খাতির জমিয়ে নেওয়া কিছু এমন শক্ত নয় । তার পর তার মেজাজ ভাল থাকলে কথাটা একদিন পেড়ে দেখ, হয়ত থোকেই টাকাটা দিয়ে দেবে। মানুষ ত নিতান্ত মন্দ নয়, তোমার দেমাক দেখেই বিরক্ত হয় । ছোটবোন ভাইয়ের কাছে হাত পাততেই বা লজ্জা কি ?” শশিমুখী বলিল, “সেবার তার বউ কিরকম সব কথা শোনালে, সে সব এরই মধ্যে ভুলে গেলে নাকি ?” অটল বলিল, “কথা ত গরীব মানুষকে আপন পর সবাই শোনায়, অত মনে রাখতে গেলে চলে না । তোমার কিছু করবার মতলব নেই, তাই বল। এর পর যখন পথে দাড়াতে হবে, তখন আমায় কিছু বলতে এস না।” । সে রাগ করিয়া অৰ্দ্ধেক ভাত ফেলিয়া রাখিয়াই চলিয়া গেল । শশিমুখী কোনোমতে ছেলেমেয়েকে খাওয়াইয়া দিয়৷ রান্নাঘরের চৌকাঠটার উপর আসিয়া বসিল । স্নানাহারে তাহার আর রুচি ছিল না। চিরদিন ত দুঃখেই কাটিয়াছে, এতেও কি যথেষ্ট হয় নাই, আরও দুর্গতি লেখা আছে ? স্বামীর চাকরী গেলে কি করিবে সে, ছেলেমেয়ে লইয়া কাহার দরজায় দাড়াইবে ? দুঃখের উপর দুঃখ, যে স্বামী তাহার বেদনার এক কণাও অনুভব করেন না, তাহার বিশ্বাস শশিমুখী ইচ্ছা করিয়াই তাহার কোনো বিপদে সাহায্য করিতে চায় না। যদি তিনি একটু বুঝিতেন, ধনবান আত্মীয়দের কাছে ভিক্ষা করিতে শশিকে কি মৰ্ম্মান্তিক লজ্জা পাইতে হয় । লজ্জাও না হয় সে স্বীকার করিয়া লইল, কিন্তু ভিক্ষ করাওঁ যে নিফল তাহ আবুঝকে সে বুঝাইবে কি প্রকারে ? অতীতে এ পরীক্ষাও যে দুচারবার হয় নাই তাহা নহে। তাহার ক্ষতচিহ্ন এখনও শশির হৃদয় হইতে মুছিয়া যায় নাই, কিন্তু অটলের স্মৃতিশক্তি এ সব বিষয়ে বড়ই ক্ষীণ। হঠাৎ পদশব্দে চমকিত হইয়া সে চাহিয়া দেখিল, সেই যুবকটি আবার দোতলায় উঠিতেছে, আজ আর তাহার পিছনে চাকর