পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরাণে রাঢ়ের ইতিহাস ব্ৰহ্মবৈবত পুরাণ মহাপুরাণ অষ্টাদশ, তন্মধ্যে ব্রহ্মবৈবত পুরাণ একথানি। কিন্তু এই পুরাণ বহু বিষয়ে রূপান্তরিত হইয়াছে । মৎস্ত পুরাণ ও নারদ পুরাণে এই পুরাণের অনুক্ৰমণিকা আছে, কিন্তু তাহার কতকগুলি বিষয় বতর্মান সংস্করণে নাই। বস্তত: “বঙ্গবাসী"র প্রকাশিত ব্ৰহ্মবৈবত পুরাণ প্রাচীন পুরাণের রাঢ়ীয় ও অর্বাচন সংস্করণ । এই হেতু ইহাতে রাঢ়ের এক কালের ইতিহাস পাওয়া যায়।... পুরাণখনি চারি খণ্ডে বিভক্ত। যথা,--(১) ব্রহ্ম খণ্ড, (২) প্রকৃতি পণ্ড, (৩) গণেশ পণ্ড, (৪) শ্ৰীকৃষ্ণজন্ম খণ্ড ।... কবির দেশ –(১) পুরাণখানি পড়িতে পড়িতে মনে হয় যেন বাঙ্গালা পড়িতেছি ; যেন বাঙ্গালা ভাষাকে সংস্কৃত করা হইয়াছে। নিবেদনং চকার’, ‘রাজা চকার স্বীকারং, ক্রীড়ান চকীর’, ‘প্রশ্নং চকার", ‘ভুহ্যদ্বারা চকণর ধান্তসঞ্চয়মূ', 'চকার ক্রোড়ে, ইত্যাদির চকণর স্থানে 'করিলেন বসাইলে অবিকল বাঙ্গালা শোনাইবে । হে নাথ’, ‘হে তা ৩', 'স্থে দীনবন্ধো ইত্যাদির 'হে প্রয়োগ বাঙ্গাল। দর্শনং দেহি, বিদায় দেহি । কেহ কেহ বলেন বিদায়’ শব্দ সংস্কৃত নয়, আবী বিদ। গা । প্রাচীন বাঙ্গালায় পরিহার' ছিল । বাঙ্গালায় বলি, শিশু মাতার স্তনপান করে । ইদানী কেহ কেহ স্তনপান’ অশুদ্ধ মনে করিয়া স্তন্যপান লেখেন । কিন্তু এই পুরাণে স্তনং দত্বা প্রবোধয় (কু১০), ইত্যাদি আছে। এই পুরাণের স্থানে স্থানে বাঙ্গালা শব্দ কবির অজ্ঞাতসারে সংস্কৃত হইয়া গিয়াছে। দুবিনীত অর্থে বাং 'ড়রস্ত' ( যেমন দুরন্ত ছেলে ), পুরাণে সং হইয়াছে।...মনে করিতাম, বাং সাকে। সং সংক্রম হইতে আসিয়াছে, কিন্তু এই পুরাণে দেখিতেছি শব্দটি ‘শঙ্কুসেতু', শঙ্কুকাঠ দ্বারা যে সেতু। বরুণ বৃক্ষের এক নাম সেতুদ্রম আছে। শঙ্কু শব্দ হইতে ঘরের শাঙ্গা। শঙ্কু দ্বারা নিৰ্ম্মিত, শঙ্কুঅ', শাকে, এই ব্যুৎপত্তি ঠিক বোধ হইতেছে। ২ । চতুর্বর্ণ হইতে সঙ্কর জাতির উৎপত্তি বর্ণনায় যে যে জাতির নাম আছে ( ব্র॥১• ) দুই একটি বাতীত সব জাতির নাম রাঢ়ে অদ্যাপি বৰ্ত্তমান। রাঢ়ে যে 'নবসায়ক’ নামে জাতিভাগ আছে, এই পুরাণে তাহার উৎপত্তি পাইতেছি। কবি লিথিয়াছেন, "ইহারা বিশ্বকমার সন্তান, নয়টি শিল্পকারী’ —যথা, মালাকার, কমকার, শখকার, কুর্বিন্দক (তাতি), কুস্তকার, কংসকার, স্বত্রধার, স্বর্ণকার, চিত্রকার, শেষোক্ত তিন জাতি ব্ৰহ্মশাপে পতিত হইয়াছে।” স্বদ্যাপি সকলে বিশ্বকমর্শর পূজা করে কি না, বলিতে পারি না ; কিন্তু জানি কয়েকটি করে। এই নবসায়ক ভাগ বঙ্গ ব্যতীত আর কোথাও নাই । পুরাণের মহাদস্থ্য ‘বাগতীত রাঢ়ের বাগদী, দস্য চলট জাতি বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে আছে। পুরাণে ‘আগরী বৰ্দ্ধমান জেলায়, "জুঙ্গি (জুগী বা যোগী ), ও জোলা রাঢ়ে প্রসিদ্ধ। সরাক জাতি বাকুড়ায় আছে। ৩ । কবি নানা স্থানে নানা বৃক্ষের নাম করিয়াছেন । এই সকল বৃক্ষ তাইার দেশের জীবন্ত সাক্ষী।••• (ক) বায়ু পিত্ত কফের বৃদ্ধি ও উপশম বর্ণনায় ( ব্র॥১৬ ) পাইতেছি-বিম্ব, তালফল, রপ্তাফল, নারিকেল জল, তরমুঞ্জা কৰ্কট ফল (কাকুড়) পিওরিক, নারিকেল, তাল, খঞ্জর বৃক্ষের মন্ত' ( মেথি )।...লিপিত আছে, পঙ্ক তরমুজ। ফল ও পঙ্ক কর্কট ফল শ্লেষ্মকারক। পক কৰ্কট, ফুটা, তরমুঞ্জ, তরমুজ। শব্দটা ফাষ্ট্ৰী তরবুজ, অর্বাচন সংস্কৃত তরমুজ । প্রকৃত সংস্কৃত নাম কালিন্দ ব। কালিঙ্গ ।...তিনি লিপিয়াছেন, অপক কদলী অর্থাৎ কাচকল, এবং অপক পিণ্ডারক শ্লেষ্মনাশক । পিণ্ডারক ফল বে কি, তাহ। বঁকুড়ায় না আসিলে বুঝিতাম না। এই ফল আরণ্য কণ্টকর্তৃক্ষজাত : দুঃগার বাজারে বিক্রয়ার্থ আনে, নাম পিড়ল। ফুলটা দেখিতে পেয়ারার আকার, গ্রীষ্মশেযে ধরে । ফুল বড় বড়, শাদ সুগন্ধ ।--কবি বায়ু-নাশের নিমিত্ত নারিকেলোদক অর্থাৎ উালের ঠাল- সদ্য পযুষিতান্ন অর্থাৎ ভিঞ্জাভাত, এবং সোণীর অর্থাৎ আমামি ব্যবস্থা করিয়া রাঢ় হইতে ওড়িয়া প্রত্যক্ষ করাইয়াছেন। (খ) কবি দস্তকাষ্ঠ নির্দেশ করিয়াছেন (ব্র॥২৬)। যথা, অপামার্গ (আপাং), সিন্ধুবার (নিশিন্দা), আম, করণীর, খদির, শিরীষ, জাতি (চামেলী), পুন্নাগ, শাল, অশোক, অজুন, ক্ষীরিবৃক্ষ ( যেমন আকন্দ ), কদম্ব, জম্বু (জাম), বকুল, ওড্র (জব), পলাশ-দস্তকাষ্ঠে প্রশস্ত।••• এক কালে পশ্চিম রাঢ়ে গদির বন ছিল ; ইহা হইতে খদির, খয়র বাহির করিবার খয়রা-জাতি নামে এক জাতি ছিল, এখনও আছে । খদিরের দন্তকাষ্ঠ, বাবলা অপেক্ষা শেষ্ঠ । পদিরের এক নাম 'দন্তধাবন ॥**** কবির কাল :–কবির কালনির্ণয়ে কষ্ট পাইতে হইবে না। (১) কবির দেশের জাতিদিগের নাম আছে (ব্র ১•১ ) । তিনি মুসলমানকে “শ্লেচ্ছ” বলিয়াছেন। লিথিয়াছেন, ইহাদিগের দ্বারা কুবিন্দ কন্যার গর্তে জোলা জাতির উৎপত্তি হইয়াছে। এই উৎপত্তি রাঢ়ে মুসলমান অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে হইতে পারে নাই। ত্রিবেণীর নিকট সপ্তগ্রাম, ত্রয়োদশ খ্ৰীষ্ট শতাব্দ পর্যন্ত হিন্দুশাসনে ছিল । আরও এক শতাবী না গেলে একটা জাতি উৎপন্ন হইতে পারে না। কবি লিখিয়াছেন, কলিকালে ম্লেচ্ছ যবনের রাজা হইবেন ( কৃ৯০ ) । অর্থাৎ তিনি দেখিয়াছিলেন । (২) কবির কালে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈষ্ঠ, শূদ্র, ও কতকগুলি সঙ্কর জাতি ছিল (ব্র॥১১ )। আর এক জাতি ছিল, "বৈষ্ণব” । “স্বতন্ত্রজাতিরেকাচ বিশ্বেষু বৈষ্ণবাভিধা।" কবির পূৰ্ব্বে বৈষ্ণব ছিলেন, কিন্তু বৈষ্ণব নামে জাতি ছিল না। শ্রীচৈতন্তের পরে এই জাতির উৎপত্তি। অতএব কবি ষোড়শ খ্ৰীষ্ট-শতাদের কথা লিখিয়াছেন। (৩) আমাদের দেশে নাসিকার অলঙ্কার ছিল না। কালিকা .পুরাণে নারীর চল্লিশটি অলঙ্কারের নাম আছে। সকল নাম বুঝিতে পারা যায় না, কিন্তু, একটিও নাসিকার নাই। এই পুরাণ আসামে দশম খ্ৰীষ্ট-শতাদে প্রণীত মনে হয় । “প্রবাণী" পত্রে শ্ৰীযুত কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় দেখাইয়াছেন, পঞ্চদশ খ্ৰীষ্ট-শতাদের পর ইরাণ দেশ হইতে এ দেশে নাসিকায় অলঙ্কার-ধারণ আরম্ভ হইয়াছে। ব্রহ্মবৈবত পুরাণে চারি খণ্ডের প্রকৃতি’, ‘গণেশ, ও ‘শ্ৰীকৃষ্ণ-জন্ম, তিন খণ্ডে নাসিকায়