পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ তাকে কথা দিয়েছিলাম, আমিও অন্ততঃ দশটা মানুষকে পথ দেখাব। আমার পাওনা কমিশন যা তাও আমি নিয়েছি, কাজেই আমার কাছে আপনার কোনো ঋণ নেই। আমার অনুরোধ শুধু এই, অন্ত কোন মানুষ এই রকম হাবুডুবু খাচ্ছে দেখলে তাকে ডাঙায় উঠবার পথটা বলে দেবেন।” হুটু এবং কুন্তী অপ্রত্যাশিতভাবে মিষ্টান্ন পাইয়া আহলাদে আটখানা হইল। বাবাকে বলিতে বারণ করাতে কেহই সেদিকে কোনে উৎসাহ দেখাইল না। কয়েক দিন এইভাবে কাটিয়া গেল, রোজই কিছুনা-কিছু আয় হয়। ইহার একট পয়সাও শশিমুখী প্রাণাস্তে খরচ করে না, তাহার কাপড়ের বাক্সের কোণে ক্রমে একটি ছোট থলি ভারী হইয়া উঠিতে লাগিল । পূজা আসিয়া পড়িল । ছেলেমেয়ে কান্না ধরিল, উহার এক এক খান নুতন কাপড় নিবে। পাড়ার সব ছেলেমেয়ে কত সাজসজ্জা করিয়া ঠাকুর দেখিতে যায়, তাহারা কি ভিখারীর মত যাইবে ? শশিমুখী স্বামীকে বলিল, “হার বিক্রীর দশ টাকা ত রয়েছে, মুটুকে আর কুন্তীকে এক-একখানা কাপড় কিনে छ७ि ।” অটল বলিল, “থাক, থাক, আর কাপড় কেনে না, ও আমি অন্য কাজের জন্যে রেখেছি।” শশিমুখী অনেক কষ্ট্রে নিজের পজি ভাঙিবার প্রলোভন দমন করিল। যাক এবছর কষ্ট করিয়াই, পরের বৎসর ভগবান অবগই মুখ তুলিয়া চাহিবেন। কেশব আসিয়া বলিল, “শুধু মিষ্ট না করে, অন্য কাজও ত কিছু কিছু করতে পারেন। আপনি শেলাই জানেন কেমন ?” শশিমুখী বলিল, “জানি চলনসই রকম। তবে বিক্ৰী করবার মত কি আর হবে ?” কেশব হাসিয়া বলিল, “সব জিনিষেরই বাজার আছে, জায়গা বুঝে গেলেই হল। কলকাতায় গরীব বাঙালীর সংখ্যা কত তার খবর রাখেন ? সবাই কিছু সাহেবী দোকানে পোষাক অর্ডার দিতে যেতে পারে না। সস্ত ঞ্জিনিষ খুবই বিক্ৰী হয়। রাস্তায় বেরুলে দেখবেন, প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ;ম খণ্ড জায়গায় জায়গায় পেনী, ফ্রক, রুমাল, গেী, ঝুলিয়ে কত লোক বসে আছে। তাদের কি আর বিক্ৰী হয় না ? আর কিছু না পারেন, রুমাল শেলাই করে, কোণে রেশম দিয়ে নাম লিখুন, তাই কত উঠে যায় দেখবেন। 'স' দিয়ে আরম্ভ খুব বেশী নাম বাঙালীদের মধ্যে, সেইটা বেশী লিখবেন, ইংরিজিতে পারলে ‘S’ লিখবেন।” শশিমুখী বলিল, “তা পারি। কিন্তু কাপড় কিনে আনবে কে ? ওঁকে এসব কথা আমি কিছু বলি নি।” কেশব বলিল, “আমিই দিতাম, কিন্তু সম্প্রতি হাত খালি করে ফেলেছি একেবারে, নানা জায়গায় নানা রকম বায়না দিয়ে। টাকা ঘরে ফিরতে এখনও দিনকয়েক দেরি আছে, কিন্তু তখন কিন্‌লে ত আর শেলাইয়ের সময় থাকবে না ?” শশিমুখী প্রতিজ্ঞ করিয়াছিল নিজের উপার্জনের টাকা এক মাড়োয়ারীর ঋণ শোধ ভিন্ন আর কোনো কাজে ব্যয় করিবে না। একটুক্ষণ ভাবিয়া সে কুম্ভীর হার বিক্রীর টাকা দশটা বাহির করিয়া আনিয়া কেশবের হাতে দিল । বলিল, “রঙীন কাপড় বা ছিটের কাপড় একটু আনবেন । কয়েকটা জামা করব ভাবছি। কাপড় আসিল । পাশের বাড়ীর বউয়ের কাছে শেলাইয়ের কল ছিল, যখনই সময় পাইত, শশিমুখী গিয়৷ শেলাই করিয়া আসিত । কখনও কখনও টাকিয়া কুম্ভীর হাতে সেখানে পাঠাইয়া দিত। বউটর স্বভাব মন্দ ছিল না, সে কল চালাইয়া শেলাই করিয়া দিত । রুমালগুলি শশিমুখী হাতে করিয়াই শেলাই করিতেছিল । সেগুলি যাহাতে অপরিষ্কার না হয়, সেদিকে খুব লক্ষ্য রাখিত, শেলাই করিবার আগে সৰ্ব্বদা সাবান দিয়া হাত ধুইয়া লইত । পূজা আরম্ভ হইবার দিন দুই আগে সে কোনো মতে শেলাইগুলি শেষ করিয়া ফেলিল । ইহারই মধ্যে সে কুম্ভীর জন্য একটা নূতন ব্লাউজ করিয় দিয়াছিল, মুটুকেও চলনসই গোছের একট। জামা বানাইয়া দিয়াছিল । কেশব আসিয়া শেলাইগুলি লইয়া গেল। বলিল, এসব আমি নিজে বিক্ৰী করি না, তবে আমার জানা লোক আছে। তাকে বলে দেব, যতটা পারে আদায়