পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] খালাস । (Uዓ ইহা শুনিয়া সকলেই হাসিতে লাগিলেন । সত্যেন্দ্র বলিল— তবে লিন “জনৈক বন্ধু।” ر---- "আচ্ছা নগেনবাবু, আপনি ফরিদসিংহে গিয়ে এবার খোকাকে জাতীয় সত্যেন্ত্র বলিল—“ওহে লেখ জনৈক ডেপুটী । ইনি পূর্ববঙ্গের বিদ্যালয়ে ভৰ্ত্তি ক’রে দেবেন ?” নগেন্দ্রবাবু হাসিয়া বলিলেন--“আরে সর্বনাশ ! চাকরী যাবে।” “চাকরী না গেলে আপনি দিতেন ?” “নিশ্চয়ই। তার অণর কথা আছে ?" গিরীন্দ্র বলিল—“এমন চাকরী করেন কেন ?" "খাব কি ?” "কেন আপনার ত ল লেকচার কমপ্লিট রয়েছে । ওকালতিটা পাশ করে দিব্যি বড়দাদার সঙ্গে হাইকোর্টে বেরুতে আরম্ভ করুন।” “আর কি বুড়ে বয়সে এগজামিন পাশ করা পোষায় ভাই ?” ইন্দুমতী বলিল— ফিরিঙ্গীর চাকরী ছাড়বেন না তাই বলুন। আচ্ছ। আপনি বলুন ত আপনি স্বদেশীর সপক্ষে না বিপক্ষে ?” • “সপক্ষে। এই দেগ না পঞ্চাশ টাকার দেশী কাপড়-চোপড় কিনে এনেছি নিয়ে যাব ব'লে।” “কেন, সেখানে দেশী কাপড় পাওয়া যায় না নাকি ?” সত্যেন্দ্ৰ হাসিয়া বলিল—“বুঝতে পারিস্ নে ইন্দু, সেপানে কিনলে পাছে সাহেবরা জানতে পারে, এই ভয়ে এখান থেকে কিনে নিয়ে যাচেচন ৷” নগেন্দ্রবাবু হাসিয়৷ বলিলেন—“তাতেই বা ক্ষতি কি। লুকিয়ে পুণ্যকৰ্ম্ম করাতে কি কোন হানি আছে ?” “তা নেই। তবে প্রকাশ্বে যেন পাপ করবেন না।” এই সময় বাহিরে সমবেতকণ্ঠে সঙ্গীতধ্বনি শুনা গেল। সকলে বলিল—“ঐ মাতৃপূজক সমিতি কংগ্রেসের জন্তে ভিক্ষা করতে এসেচে।" সকলে বাহিরে গিয়া দঁাড়াইলেন । দেখিলেন প্রায় পঞ্চাশ জন যুবক ও বালক, মাথায় পীতবর্ণ পাগড়ী, কেহ বা খোল বাজাইতেছে, কেহ বা পঞ্চম বাজাইতেছে, কাহারও হস্তে বন্দে মাতরম্ অঙ্কিত ধ্বজ, একজনের হস্তে একটি বৃহৎ থালা, তাহাতে অনেক টাকা পয়সা রহিয়াছে, সকলে সমস্বরে গান করিতেছে— কে কোথা আছিস ভকত সন্তান, মায়ের পূজা হবে, অীয় নিয়ে আয় কে কি কঞ্জিলি দান । কার অাছে সোনা, কার অাছে রূপ, অঞ্জলি ভরিয়া আন, ও ভাই, এমন সুদিন কবে তার পাবি, দিয়ে নে ভরিয়ে প্রাণ । যার বেশী নাই দিক সে কিঞ্চিৎ, ছেড়ে লাজ অপমান । যার কিছু নাই, সে দিক কেবল ব্যথিত হৃদয় খান ॥ বtটর সকলেই কেহ টাকা, কেহ আধুলি, কেহ সিকি, থালার উপর জনম ভূমির দিতে লাগিলেন। নগেন্দ্রবাবু একখানি দশ টাকার নোট থালায় রাখিয়া দিলেন । নোটখানি দেখিয়া খাত। পেন্সিলধারী একজন যুবক আসিয়া বলিল—“মহাশয়ের নাম ?” নগেন্দ্রবাবু বলিলেন—“নাম দরকার কি ?” “পাচ টাকার বেশী হ’লে নাম লিখে নেওয়ার নিয়ম অাছে।” একটা ডেপুটী ।” গিরীন্দ্রবাবু বলিলেন—“না—ন। জনৈক বন্ধু ব’লেই লিখে নাও।” যুবকগণ তাহাই লিখিয়া লইয়া গান গাহিতে গাহিতে প্রস্থান করিল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সন্ধ্যা হইয়াছে। ফরিদসিংহ বাজারের রাস্তায় কতিপয় বিদ্যালয়ের বালক পদচারণা করিয়া বেড়াইতেছিল। দেখিল, একটি সওদাগরের দোকান হইতে এক ব্যক্তি এক টিন বিস্কুট হাতে করির বাহির হইল। দেখিবামাত্র ছেলেরা তাহার সঙ্গ লইল । একজন বলিল, “ওহে, কি রকম বিস্কুট কিনলে দেখি ?” লোকটি বিস্কুটের বাক্স দেখাইল । ছেলেরা বলিল—“ছি ছি, এ যে বিলাতী।” “কাহে বাবু, বিলাতী'তে। আচ্ছা হয় ।” "তুমি হিন্দু ন মুসলমান ? ' “মুসলমান ।” একজন ছেলে বলিল—“বিলাতী চিজ. হারাম হ্যায়।”লোকটি বলিল—“তোব,তোবা। ঐস বাং মৎ বলিয়ে বাবু।” “কত দাম নিলে ?” “দেড় রূপিয়া।” “আঁ, দেড় টাকা? এর চেয়ে ভাল, তাজ দেশী বিস্কুটের টন এক টাকায় পাওয়া যায় ।” লোকটা সাহেবের চাপরাশি। তাহার মনিব একজন চা-কর, সম্প্রতি আসাম হইতে আসিয়৷ ডাকবাঙ্গলায় অবস্থান করিতেছেন। সে ভাবিল, সাহেব ত আমায় বিস্কুটের জন্য দেড় টাকাই দিয়াছে, এক টাকায় যদি ইহার অপেক্ষ ভাল বিস্কুট পাওয়া বায়, আমার আট গণ্ড পয়সা লাভ । মন্দ কি ? তাই জিজ্ঞাসা করিল—“সচ, বাত বাবু ?” ছেলেরা একটু উৎসাহিত হইয়া বলিল—" সত্য বৈ কি। চল তোমাকে দেশী বিস্কুটের টিন দেখাই। এস,এ টিনটা ফিরিয়ে দেবে এস।” চারি পাচজন বালক সে চাপরাশিকে লইয়া সওদাগরের দোকানে গেল। কিন্তু সওদাগর টিন ফিরিয়া লইতে কিছুতেই রাজী হইল না। সে বলিল—“একে স্বদেশীর জ্বালায় বিলাতী টিন ‘ অীর বিক্রয় হয় না। মাল পড়িয়া পচিতেছে। একটা যদি বিক্রয় করিয়াছি ত উহা অার কোন ক্রমেই ফিরিয়া লইব না।” তখন বালকের দোকানের বাহিরে আসিয়া নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করিয়া স্থির করিল, তাহার নিজ ব্যয়ে এক টিন বিস্কুট কিনিয়া দিবে। চাপরাশিকে বলিল—“দেখ, তোমার ও টিন আমাদের দাও । আমরা এক টিন দেশী বিস্কুট তোমাকে কিনিয়া দিতেছি।” চাপরাশিকে স্বদেশী দোকানে লইয়া গিয়া বালকেরা তাহাকে এক টিন দেশী বিস্কুট কিনিয়া দিল। চাপরাশি বলিল—“বাবু ইস্কাতো দাম এক রূপিয়া। হামার। বাকী আট আনা পয়সা ?” ছাত্রেরা দোকানে বলিল—“আট আনা পয়সা দিন ত। দেড় টাকাই আমাদের নামে লিখে রাখুন, কাল দিয়ে বাব।” আট আনা লইয়া বালকের চাপরাশিকে দিল । চাপাশি পয়সাগুলি গকেটে রাখিয়া বলিল—“বাবু, আচ্ছা বিস্কুট তো ?” --