পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوا لا Q দুই পয়সা দামের লাল, নীল, গোলাপী, সবুজ গায়ে মাখিবার সাবানের দাম ধরি চার পয়সা, করিয়া-এই প্রকারেই বাচিয় আছি । সন্ধ্যাবেলায় ‘অন্নপূর্ণ ষ্টোস’-এর পিছনের খোলার ঘরে কালীচরণের শাস্ত্রচর্চার বৈঠক বসে, সঙ্গে সঙ্গে চলে সঙ্গীত। এলোকেশীকে সেখানে বসিয়া অত্যন্ত গম্ভীর মুখে মন্ত, পরাশরের শাস্ত্রব্যাখ্যা করিতে শুনি প্রায় প্রত্যহ । সেইদিন সন্ধ্যাবেল তাহাকে ডাকিয়৷ বলিলাম, “এলোকেশী, আমাকে একটি ঠিকে ঝি জোগাড় করে দিতে পারবে, বাছা ? মহীনবাবুদের দরকার, অামাকে বলেছেন।” কথা শুনিয়া এলোকেশী চোগে কাপড় দিল, ফোপাইতে ফোপাইতে বলিল, “যেমন বরাত করে’ এইচি, দ-ঠাকুর-তোমাদের এই তুরুশ কথাটিও যে রাখব, ভগবান কি সেই স্বথটুকুনই আমার কপালে নিকেচেন ? হারামজাদীরা কি আজকাল আর বাসন মাজতে চায় গে, দ।"ঠাকুর । বললে, বলে কি জান ? কালীঘাটে মা’র মন্দির অাছে, সকালে বিকালে তারই দোরগোড়ায় যদি বসি, চোখ বুজে যদি বলি, দোহাই গো বাবু, দোহাই গে। মা, এই গরীব, অন্ধ, অনাথাকে একটি পয়সা দিয়ে যাও গে। দয়া করে, এক গুণ দিলে সহস্র গুণ হ’বে, ধনেপুত্রে লক্ষ্মীলাভ হবে,- তাহলে দু বেলায় কিছু না হলেও একটা টাকা ভিক্ষে মেলে,— গতর খাটাতে যা’ব কোন দুঃখে ” বলিতে বলিতে এলোকেশী কাদিয়া ফেলিল আর কি । অনেক কষ্টে তাহকে থামাইলাম, বলিলাম, “তারা যদি না কাজ করে, তবে তুমি আর কি করবে বাছা ! তোমার আর দোষ কি ? তুমি নিজের কাজে যা ও এলোকেশী, আমি মহীনবাবুদের বলব’খন যে, ঝি পাওয়া গেল না।” কিন্তু, আমার এই তুরুশ, কথাটা পৰ্য্যন্ত না রাখিতে পারিয়া, সে আবার চোখে আচল দিয়া, অতীত কালের সমস্ত ঝি এবং বৰ্ত্তমান কালের ভিখারিণীদের উদেশে অযথা বহু কটকটব্য করিয়া অতিশয় ধীর পাদবিক্ষেপে প্রস্থান করিল। যথেষ্ট চেষ্টা করিলাম কয়েক দিন ধরিয়া, কিন্তু প্রবাসী—ভান্দ্র, ১৩৩৭ SAMMAAA S AA AAS [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড বেশ মোট মাহিনী কবুল করিয়াও একটা ঝি জুটাইতে পারিলাম না । দোকানের সম্মুখের নর্দমাটার বিষাক্ত দূষিত বাতাস সমস্ত পল্লীটাকে ছাইয়া ফেলিয়াছে। নিঃশ্বাস টানিতে ভয় হয়, মনে হয় যেন কখন কি অঘটন ঘটিয়া বসিবে । ইহারই মধ্যে দুইটা পয়সা সঞ্চয় করিবার আশায় চোপ কান বুজিয়া অগ্রসর হইয়াছি। সন্ধ্যাবেলা, ধূনা দেওয়া হইয়া গিয়াছে। একটা কেরোসিনের আলো মাচার সহিত ঝুলাইয় দিয়াছি। তাহারই নীচে একটা পাচসিক দামের চৌকির উপরে বসিয়া স্পেনসারের “ফেয়ারি পইন” খুলিয়া বসিয়া মনে মনে হাসিতেছি । সহদেব আসিয়া ঘরে ঢুকিল । গায়ে তাহার ছেড়া জামা, চোখ দুইটা আরও ভয়ানক বলিয়া মনে হইতেছিল, ঠোটের কোণ দুইটা দিয়া পানের কস্ গড়াইয়া পড়িতেছিল, হলদে রংয়ের দাঁতগুলাতে লালের ছোপ লাগিয়া একটা অসহ্য কদৰ্য্যতার স্তষ্টি করিয়াছিল । সমস্ত মুখখানার দিকে যেন তাকাইতে পারা গেগ না । মাথার চুলগুলা উস্কযুস্ক, জুতাটার পিছনের চামড়াট। হিল হইতে একেবারে আলগা হইয়। গিয়াছিল, পা-টাকে ছেচড়াইয়। ছেচড়াইয়া সেটাকে বহন করিতে হয় । সহদেব আমার অত্যন্ত কাছ ধে'মিয়| আসিয়া বসিল । ভারি আত্মীয়ের মতন কানের গোড়ায় মুখ আনিয়া বলিল, “বড় মজ দা’ঠাকুর—তুমি যদি দেখতে— মাইরি বলছি, এমন খাস লাগল,—কচি গল, গাড়ীটাতে টেরও পেলুমনি কোনও কিছুর ওপর দিয়ে যাচ্ছি, বেশ হয়েছে, শালার ছোড়ার যেমন বদমাস। রোজ বারণ করি, বলি, ‘বাচাধন যে দিন পরতে পারব, সে দিন মজাট। টের পাইয়ে দেব।’ এখন - লাও ঠ্যাল৷ ” অবাক হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলাম, তাহার সৌন্দর্য্য দেখিয়া নহে, তাহার কথা শুনিয়া বিস্ময় লাগিল । একটা অতিশয় কালে রুমাল পকেট হইতে বাহির করিয়া কপালের ঘাম মুছিতে মুছিতে সহদেব বলিল,