পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্য। ] আর একটাতে বিদেশী কাপড় কেনার ও পরার কত সুবিধা এবং দেশী কাপড় ক্রয়ে দেশের কিরূপ ভীষণ ক্ষতি, তাহাই বুঝান হইয়াছে। বড়লাট ও অন্ত লাটেরা—অর্থাৎ সাধারণতঃ গবন্মেটি—বলিয়া থাকেন, র্তাহারা স্বদেশীর খুব পক্ষপাতী। তাহা হইলে এই রকম ইস্তাহার কেন ছড়ান হইতেছে যাহাতে দেশী কাপড়ের অনুকূলে একটা কথাও লেখা হয় নাই ? অন্য একটা কাগজে বলা হইতেছে, ইউনিয়ন বোর্ড দ্বারা স্বরাজের ভিত্তি স্থাপিত হইতেছে । সরকারী লোকদের র্তাবেদারী করিয়া স্বরাজ লাভ হয়, ইহা নুতন কথা বটে। আলোচ্য কাগজগুলা একটা ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সার্কেল অফিসারের হুকুমে বিলি করিতেছেন। ইহাই কি স্বরাজের নমুনা ? “পরের মাথায় কঁঠাল ভাঙ্গা” শীর্ষক চমৎকার পত্রটিতে বলা হইতেছে, “এক মেদিনীপুর জেলার কাথি অঞ্চলে গত তিন মাসে দশটি ডাকাতি হয়েছে। এই হুজুগের পূৰ্ব্বে সারা বৎসরে একটি জেলাতে এতগুলি , ডাকাতি হ’ত কিনা সন্দেহ ।” অর্থাৎ কিনা, সত্যাগ্রহীরা ডাকাত, কিংবা তাহারা পরোক্ষভাবে ডাকাতির প্রশ্রয় দেয়, কিংবা সত্যাগ্রহের জন্য অন্য কোন ভাবে ডাকাতি বাড়িতেছে। চমৎকার সিদ্ধান্ত ! আমরা অনেক বৎসর ধরিয়া খবরের কাগজ পড়িয়া আসিতেছি । সত্যাগ্রহের বহু পূৰ্ব্বে অনেক সময়ে এক এক মাসে, কখন কথন এক এক সপ্তাহে, এক একটা জেলায় পাচ সাত দশটা ডাকাতির থবর পড়িয়াছি । সেগুলা কেন হইত ? এখন যদি কোথাও সত্যসত্যই ডাকাতি বাড়িয়া থাকে, তাহার একটা কারণ সম্ভবতঃ এই, যে, পুলিস অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ডাকাতরা,মুযোগ বুঝিয়াছে। অন্নাভাব এবং অর্থাভাবও অীর একটা কারণ হইতে পারে। “আবগারী”তে লেখা হইয়াছে, যে, আবগারী “ট্যাক্স ধাৰ্য্য এবং তাহার ক্রমবৃদ্ধির প্রধান উদ্দেশু আবগারী জিনিষের ব্যবহার ক্রমশঃ কমাইয়া দেওয়া ।” ভাল কথা। তাহা হইলে, মদ গাজা প্রভৃতির ক্রেতা যত কমিবে, ষত লোকে নেশা ছাড়িবে গবন্মেন্টের উদ্বেষ্ঠা বিবিধ প্রসঙ্গ—সরকারী প্রপ্যাগ্যাগু। 이 SD তত বেশী পরিমাণে সিদ্ধ হইবে । আমরা বিশ্বস্তস্থত্রে শুনিয়াছি, বাকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে পিকেটিঙের প্রভাবে অনেক গাঁজাখোর গাজা ছাড়িয়াছে, কিন্তু পিকেটিং বে-আইনী কাজ। অতএব “আবগারী’ শীর্ষক লেখাটার সব কথা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে তাহীতে বৰ্ণিত সরকারী আবগারী নীতির সহিত পিকেটিং অর্ডিন্যান্সের সামঞ্জস্য দেখা যাইতেছে না। শেষ যে কাগজটার কথা বলিব, তাহার মাথায় বড় অক্ষরে লেখা আছে, “স্বাধীনতার ভিত্তি শিক্ষণয়” । সত্য কথা । কিন্তু সব রকম শিক্ষা স্বাধীনতার ভিত্তি নহে । “সা বিদ্য। যা বিমুক্তয়ে” । এরূপ বিদ্যাই, এরূপ শিক্ষাই, স্বাধীনতার ভিত্তি হইতে পারে যাহা বাহ এবং আন্তরিক মুক্তির জন্য দেওয়া হয়। ভারতবর্ষে সেই রকম শিক্ষণ কোন কোন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় ? আমরা কিছু দোষ ক্রটি বিশিষ্ট সব স্কুল কলেজদি বন্ধ করিয়া দিবার পক্ষপাতী নহি ; তাহদিগকে রক্ষা করিয়া তাহদের সংস্কারের, শিক্ষা-প্রণালী ংস্কারের, ইতিহ্রাসাদি পাঠ্যপুস্তকের সংস্কারের পক্ষপাতী। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা স্বাধীনতার ভিত্তি, ইহা স্বীকার করি না । এই কাগজটাতে লেখা হইয়াছে, “স্বয়ং গান্ধী বলেছেন যে, এই স্বাধীনতালিপা ভারতবাসীদের চিত্তে এনেছে একমাত্র ইংরাজী শিক্ষা।” গান্ধী কোথায় কথন কোন বক্তৃতায় একথা বলিয়াছেন, কোন কাগজে বা বহিতে লিথিয়াছেন ? একমাত্র ইংরেজী শিক্ষা আমাদের স্বাধীনতালিপা জন্মাইয়াছে, মহাত্মা গান্ধী এমন কথা বলিতেই পারেন না । তারপর গুপ্তনাম লেখক বলিতেছেন :–“বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই সেদিনও বলেছেন, যে, ভারতের এই স্বাধীনতালাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা শুধু ইংরাজ কবিদিগকেই গৌরবময় করে তুলছে। এ সংগ্রাম শুধু তাদেরই পদে পুষ্পাঞ্জলি ।” রবীন্দ্রনাথের কোন উক্তিকে বিকৃত না করিলে তাহার চেহারা এরূপ দাড়ায় না । তিনি এরূপ কথা বলেন নাই। যদি রবীন্দ্রনাথ এইরূপ কথা বলিয়াছেন ধরিয়া লওয়া যায়,