পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খুকীর কাণ্ড ঐবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হরি মুখুয্যের মেয়ে উমা কিছু খায় না। না থাইয়৷ খাইয়া রোগ হইয়া পড়িয়াছে বড় । উমার বয়স এই মোটে চার । কিন্তু অমন দুষ্ট মেয়ে পাড়া খুজিয়া আর একটি বাহির করে তো দেপি ?. তাহার মা সকালে দুধ খাওয়াইতে বসিয়| কত ভুলায়, কত গল্প করে, সব মিথ্যা হয় । দুধের বাটিকে সে বাঘের মত ভয় করে—মায়ের হাতে দুধের বাটি দেখিলেই সোজা একদিকে টান দিয়া দৌড় । মা বলে—রও, দুষ্ট মেয়ে, তোমার দুষ্টুমি আমি— দুধ খাবেন না, সুজি খাবেন না, খাবেন যে কি দুনিয়ায় তাও তো জানি নে—চলে আয় ইদিকে— খুকী নিরুপায় দেখিয়া কান্ন স্বরু করে । তাহার মা ধরিয়া ফেলিয়া জোর করিয়া কোলে শোয়াইয়। ঝিনুক মুখে পুরিয়া দুধ খাওয়ায় । কিন্তু জোরজবরদস্তিতে অৰ্দ্ধেকের ওপর দুধ ছড়াইয় গড়াইয়া অপচয় হয়,—বাকী অৰ্দ্ধেকটুকু কায়ক্লেশে খুকীর পেটে যায় কি ন৷ যায় । সময়ে সময়ে সে আবার মায়ের সঙ্গে লড়াই করে। চার বছর বয়স বটে, না খাইয়া খাইয়া কাটি কাটি হাতপাও বটে, কিন্তু তাহাকে কায়দায় ফেলিতে তাহার মায়ের এক একদিন গলদঘৰ্ম্ম । রাগ করিয়া মা বলে— থাকে আপদ বালাই কোথাকার—ন খাও তো বয়ে গেল আমার—সারাদিন খেটে খেটে মুখে রক্ত উঠবে, আবার ওই দস্তি মেয়ের সঙ্গে দিনে পাচবার কুস্তী করে দুধ খাওয়াবার শক্তি আমার নেই—মর শুকিয়ে। খুকী বাচিয়া যায়, ছুটিয়া একদৌড়ে বাড়ীর সামনের আমতলায় দাড়াইয়া চেচাইয়া সমবয়সী সঙ্গিনীকে ডাকে— ও নেমু-উ-উ— তাহার বাবা একদিন বাড়িতে বলিল-দ্যাথো খুকীটাকে আজ দিন-পনেরো ভালো করে দেখিনি---আস্বার S e S-8 সময় দেখি পথের ওপর খেলা কচ্চে, এমনি রোগী হয়ে গিয়েচে যেন চেনা যায় না, পিঠট সরু, কণ্ঠার হাড় বেরিয়েচে, অমুখ-বিমুখ নেই, দিন দিন ওরকম রোগা হয়ে পড়চে কেন বলে তো ? খুকীর মা বলে—পড়বে না আর রোগ হয়ে ? সারা দিন রাতে ক’ঝিনুক দুধ পেটে যায় ? মরে মরুকু, আমি আর পারি নে লড়াই করতে...কে এখন অই দস্তি মেয়েকে রোজ রোজ যায় দুধ খাওয়াতে ? যাই ওর কপালে থাকে তাই হোকু গে— তাই হয় । দস্তি মেয়ে শুকাইচত থাকে । ভাদ্র মাস, হঠাৎ বর্ষ। বন্ধ হইয়া রৌদ্র বড় চড়িয়া উঠিয়াছে, গ্রামের ডোবা পুকুরে সারা গায়ের পাটক্ষেতের পাটের আট ভিজানো। নদীর ধারে কাশের ফুল ফুটিয়াছে। গ্রামের হীরু চক্ৰবৰ্ত্তীর আড়তে এই সময়ে কাজকর্মের বড় ভীড় । নানাদেশের ধানের ও পাটের নৌক সব গঙ্গার ঘাটে জড় হইয়াছে । হরিশ যুগ আড়তের কয়াল, কাটার ফের্তায় এক মণ ধানে আরও সের-দশেক ঢুকাইয়া লওয়া তাহার কাছে ছেলে-খেলা মাত্র । হাঙ্গরের মুখখোদাই বড় একখান মহাজনী নৌকা হইতে ধানের বস্তা নামিতেছে, পটুপটি গাছের ছায়ায় উচুকর ধানের স্তুপ হইতে হরিশ স্বর সংযোগে কাঠায় করিয়া ধান মাপিতেছে—রাম রাম, রাম-হে রাম, রাম-হে দুই, দুইদুই, দুই-হে তিন, তিন-তিন— গফুর মাঝি ডাবা হু কায় তামাক টানিতে টানিতে বলিতেছে—ত নেন গো কয়াল মশাই, একটু হাত চালিয়ে নেন দিকি মোরা একৰার দেখি ? ইদিকি নোনা গাঙের গোন নামূলি কি আর নৌকো বাইতি দেবানে ?. হরি মুখুয্যে মশায়কে একটু ব্যস্তসমস্তভাবে