পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা J অপরাজিত ৮৭৩ ] محسنگہہہہہ চিন্তাটা মনে আসিতেই জগতের চেহারা একমুহূর্তে যেন একেবারে বদলাইয়া গেল তাহার চোখে.এ কোন বিচিত্র জগৎ ! কিসের দু-দিনের দৈন্য, দু-দিনের লাভলোকসান লইয়া মন-কলাকসি ?-কিসের খনিক্রফট, আর নাগরমল ? সে এসব চায় না—সে চায় সত্যের শক্তি, যা আসে ঐ বিদ্যুৎ থেকে, নিঃসীম শূন্য থেকে, যার শক্তি ঐ বিরাট স্বজনী শক্তির সঙ্গে এক । শৈশবে নদীর তীরে তার যে দীক্ষা হইয়াছিল, বিরাট অনন্তদেব আশীৰ্ব্বাদ করুন, অনন্তের সে স্পর্শ যেন প্রাণে তার পৌছায় — · কখন বেল পাচটা বাজিয়া গিয়াছিল, কখন একটু দূরে একটা ফুটবল টিমের খেলা আরম্ভ হইয়া গিয়াছিল— একটা বল দুম করিয়া তাহার একেবারে সামনে আসিয়া পড়াতে তাহার চমক ভাঙিল। উঠিয় সে বলটা দুহাতে ধরিয়া সজোরে একটা লাথি মারিয়া সেটাকে ধাবমান লাইনস্ম্যানের দিকে ছুড়িয়া দিল । (S3) একদিন পথে হঠাৎ প্রণবের সঙ্গে দেখা । দুইজনেই ভারী খুশী হইল , সে কলিকাতায় আসিয়া পৰ্য্যন্ত অপুকে কত জায়গায় খুজিয়াছে, প্রথমটা সন্ধান পায় নাই, পরে জানিতে পারে অপূৰ্ব্ব পড়া-শুনা ছাড়িয়া দিয়া কোথায় চাকরিতে ঢুকিয়াছে। প্রণব রাজনৈতিক অপরাধে অভিযুক্ত হইয়। বৎসরখানেক হাজত-ভোগের পর সম্প্রতি খালাস পাইয়াছে, হাসিয়া বলিল—কিছুদিন গবর্ণমেন্টের অতিথি হয়ে এলুম রে, এসেই তোর কত খোজ করেচি— তারপর কোথায় চাকরি করিস বল তো—বাসা কোথায় ? অপু হাসিমুখে বলিল—খবরের কাগজের আপিসে, সোজা নয়, রয়টারের বাংলা করার ভার আমার ওপর— বুধবারের কাগজে “আর্ট ও ধৰ্ম্ম’ বলে লেখাটা আমার দে{খস পড়ে । প্রণব হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিয়া বলিল—তুই ধৰ্ম্মের সম্বন্ধে লিখতে গেলি কি নিয়ে রে ! কি জানিল छूहे- - —ওখানেই তোমার গোলমাল-ধৰ্ম্ম মানে তুমি যা বলতে চাইচ, সেটা হচ্চে collective ধৰ্ম্ম, আমি বলি ওটার প্রয়োজনীয়তা ছিল আদিম মানুষের সমাজে, জার একটা ধৰ্ম্ম আছে যা ক্লিনা নিজের নিজের, আমার ধর্ণ আমার, তোমার ধৰ্ম্ম তোমার, এইটের কথাই আমি—যে । ধৰ্ম্ম আমার নিজের তা ষে আর কারুর নয়, তা আমার চেয়ে কে ভাল বোঝে ? —বেী-বাজারের মোড়ে দাড়িয়ে ওসব কথা হবে না, আয় গোলদিঘীতে দাড়িয়ে লেকচার দিবি । —শুনবি তুই ? চল তবে— গোলদিঘীতে আসিয়া দুজনে একটা নির্জন কোণ বাছিয়া লইল । প্রণব বলিল—বেঞ্চের উপর দাড়া উঠে । অপু বলিল—দাড়াচ্চি, কিন্তু লোক জমবে না তো ?...ত হ’লে কিন্তু আর একটি কথাও বলব না । তারপর আধঘণ্টাটাক অপু বেঞ্চির উপর দাড়াইয়া ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে এক বক্তৃতা দিয়া গেল। সে এবিষয়ে অত্যন্ত নিষ্কপট ও উদার—যা মুখে বলে, মনে, মনে ত্বাহ বিশ্বাস করে। প্রণব শেষপর্য্যস্ত শুনিবার পর ভাবিল—এসব কথা নিয়ে খুব তো নাড়াচাড়া করেছে মনের মধ্যে ? একটু পাগলামির ছিটু আছে, কিন্তু ওকে ঐজন্যই এত ভালবাসি— á অপু বেঞ্চ হইতে নামিয়া বলিল—কেমন লাগল ?. —তুই খুব sincere, যদিও একটু ছিটগ্ৰস্ত— অপু লজ্জামিশ্রিত হাস্তের সহিত বলিল—যা— প্রণব বলিল-কিন্তু কলেজটা ছেড়ে ভাল কাজ করিস নি, যদিও আমি জানি তাই সেদিন বিনয়কে বলছিলাম যে অপূৰ্ব্ব কলেজে না গিয়েও যা পড়াশুনা করবে, তোমরা দুবেল কলেজের সিমেণ্ট ঘসে ঘসে উঠিয়ে ফেললেও তা হবে না। ওর মধ্যে একটা সত্যিকার পিপাসা রয়েচে যে— নিজের প্রশংসা শুনিয়া অপু খুব খুশি—বালকের মত খুশি । উজ্জলমুখে বলিল—অনেকদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা, চল তোকে কিছু খাওয়াইগে-কলেজ মেটদের আর কারুর দেখা পাইনে - আমোদ করা হয় নি কতদিন যে - মা মারা যাওয়ার পর থেকে তো— প্রণব বিস্ময়ের স্বরে বলিল - মাও মারা গিয়েচেন । —ও, সে কথা বুঝি বলিনি ? সে তো প্রায় এক বছর হতে চলল—