পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা নিরঞ্জন বলিলেন, “উৎসাহ থাকতে থাকতে করে ফেলা ভাল। বেশী দেরি করলে শেষ অবধি আর হয়েই ওঠে না। আমার ইচ্ছা ছিল, আমার বাবার নামে ভাল একটা টোল খুলব, কিন্তু হাতে তখন বেশী ত পয়সা থাকত না ? সৰ্ব্বদাই দেখতাম যে মৃতের চেয়ে জীবিতের claim-টাই বড়। শেষ অবধি আর হ’লই না। যখন টাকা হ’ল, তখন ওটা মনের মধ্যে অনেক জিনিষের তলায় চাপা পড়ে গিয়েছে, আর কিছু করে উঠতে পারলাম না । কিন্তু কত টাকাই বা তোর কাছে আছে ? আচ্ছা প্রভাস আমুক, তারপর সবাই মিলে পরামর্শ করে ঠিক করব। করতে হ’লে ভাল করেই করা উচিত ।” মায়া হাফ ছাড়িয়া বাচিল । ইহা লইয়া যদি আবার গোলমাল কিছু হইত, তাহা হইলে বেচারীর আর যন্ত্রণার সীমা থাকিত না । সে এখন কোন কিছুতেই মন দিতে পারে না, বাপের সহিত মায়ের স্মৃতি লইয়া তর্ক করার অবস্থা তাহার মোটেই নয়। পড়াশুনায় একেবারেই মন দিতে পারে না । কলেজে নিতান্ত না গেলে নয়, তাই যায়। কিন্তু সেখানে কি যে হয় নাহয়, কিছুই যেন তাহার মাথায় ঢোকে না । বাড়ীতেও বই হাতে করিয়া সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়া থাকে, তবু মন দিতে পারে না। নিজের অজ্ঞাতসারেই দেবকুমারের চিস্ত আসিয়া তাহার মন জুড়িয়া বসে। সে কখন কি বলিয়ছিল, কি মনে করিয়া বলিয়াছিল, তাহাই শতবার মানসদৃষ্টিতে সেই-সব দৃশ্ব আবার দেখিয়া পুলকিত হয়। মনোরাজ্যের মধ্যে যেখানে মানুষের স্মৃতির চিত্রশাল, সেইখানে ঘুরিয়৷ বেড়ায়, প্রেমের আলোকে প্রিয়ের মুখ আরও উজ্জ্বল স্বন্দর করিয়া দেখে । নিরঞ্জন উঠিয়া যাইবার পর মায়া অনেকক্ষণ খাবার টেবিলেই বসিয়া রহিল। Russian ballet-এ যাইতে ভাবে । পারিবে কি না, তাহা সকালের মধ্যেই দেবকুমারকে . টেলিফোন করিয়া জানাইতে পারিলে ভাল হইত, কিন্তু নিরঞ্জন আপিস গিয়া ব্যবস্থা করিতে পারিবেন কি না, তাহা জানিতে না পারিলে, সে দেবকুমারকে কি মহামায়া b్ఫురి জানাইবে ? কিন্তু দেবকুমার হয়ত জানিবার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। কোনো খবর না পাইলে সে মায়াকে মনে করিবে কি ? কোনো রকম খবর ত দেওয়া উচিত ? মায়া ধীরে ধীরে টেলিফোনের কাছে গিয়া, দাড়াইল । দেবকুমারের সাড়া পাইতে মোটেই দেরি হইল না । ভাবে মনে হইল সে রিসিভার হাতে করিয়াই যেন, বসিয়াছিল। খুব উৎসাহিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, “কি খবর ? আজ যাচ্ছেন ত ?” মায়া বলিল, “বাবা আপিসে না-যাওয়া পৰ্য্যস্ত কিছু বলতে পারছেন না। তার কাছ থেকে খবর পেলেই আপনাকে জানাব।” : - দেবকুমার বলিল, “খবরটা আপিই ত তার আপিস থেকে জেনে আপনাকে জানাতে পারি। কোকাইন. ঘুরে রেঙ্গুনের খবর আবার রেজুনে ফিরে আলার কি দরকার? অনর্থক থানিকট সময় যাবে।” মায়া বলিল, “আচ্ছা, তাই করবেন, আমাকে সাড়ে । দশটার মধ্যে জানালে ভাল, কারণ তারপর ত আমি. কলেজ চলে যাব ।” দেবকুমার বলিল, “নিশ্চয়, আমি এখনি যাচ্ছি তার কাছে।” মায়া টেলিফোন রাখিয়া উপরে উঠিয়া গেল । । প্রভাসের চিঠিখানার একটা সংক্ষিপ্ত জবাব লিথিয় । রাখিল । দেবকুমার কথন যে তাহাকে টেলিফোন - করিবে স্থির নাই । আয় আসিয়া স্নান করিবার জন্য বার-দুই তাড়া দিয়া গেল, কিন্তু মায়া নড়িবার নাম করিল না। আয়াকে বলিয়া দিল, তাহার শরীর বিশেষ ভাল লাগিতেছে না, স্নান করিলেও পরে করিবে । সে । উৎকর্ণ হইয়া বসিয়া রহিল, কখন ডাক আসে। দেবকুমারের ঘর নিরঞ্জনের আপিসের কাছেই, কাজেই খবর নিতে খুব বেশী দেরি হইবার কথা নয়। টেলিফোনের ঘন্টা টিং টং করিয়া উঠিল। মায়ার। ইচ্ছা করিতে লাগিল, ছুটিয়া নীচে যায়, কিন্তু তাহা হইলে । চাকরবাকরে মনে করিবে কি ? কোনমতে ধৈৰ্য্য ধরিয়া সে খাটের উপর বসিয়া রহিল। কিন্তু :