পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা } নরেন অসন্তুষ্ট হইত। মুখখান একটু কেমন করিয়া বলিত, “তোমাদের কারুরই কোনো খেয়াল নেই— বাড়ীতে রোগী, অথচ সারাদিন হৈ-চৈ লেগেই আছে ।” নরেন ছবিকে লইয়া চলিয়া যাইত । বেলা একলা ঘরে কতক্ষণ দাড়াইয় থাকিত । ভ্র দুইটি সঙ্কচিত হইয়া আসিত, দাত দিয়া ঠোট চাপিয়া ধরিত । দূরে বকুলের কাতর কণ্ঠ শুনিতে পাইত। খুব যেন বেদনার সহিত বলিতেছে, “হ। ভগবান—আমার মরণও হয় না—তুমি কেন আবার গেলে”. ...আর কিছু বুঝ৷ যায় না । সন্ধft | সন্ধ্যার বিবর্ণ পাণ্ডুর আলোতে আকাশ ও পৃথিবী ঝাপসা হইয়া আসে। দূরের পাহাড় ও মাঠের শেষের গাছগুলি একাকার হইয়া একটা কালে রেখার মত দেখাইতে থাকে। নদীট। অন্ধকারের বুকে গা ঢাক। দিয়াছে। বকুলের বিশাল পৃথিবী ও সঙ্কচিত হইয়া উঠিত । বাহির হইতে নিজেকে টানিয়া আনিয়া আপনার ক্ষুদ্র পুথিবীতে গুটাইয়ু লইত । সে পৃথিবীতে আশা নাই— উৎসাহ নাই—কিছু নাই । ব্যাধি-জর্জরিত দেহের বিষাক্ত কীট বাহিরে বিচরণ করে, আর কোন অদৃশ্ব জালা কীটের চেয়েও তীব্র হইয় অন্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতে থাকে । নরেন জানাল। বন্ধ করিয়া দিল । বকুল বলিল, “ওটা আবার খোলা রাখলে কেন— ওটাও বন্ধ কর——” —“ন, থাক্ ওট,-তুমি ঘুমোও” বলিয়। নরেন শিয়রের কাছে বসিয়া পাখা দিয়া বাতাস করিতে লাগিল । বকুল তবুও ছট্‌ফট করিতে করিতে বলিল, “আর পারি না---এর চেয়ে মৃত্যুও আমার ভাল—” & নরেন বলিল, “ছিঃ - ওকথা বোলো না । ভাল হয়ে যাবে—আবার সংসার করবে । ওঠ-তারপর তুমি যা বলবে—তাই করব।” —আর কাজ নেই, থাক । কিছু চাইনে—কি আবার ভাল হ’য়ে তৃণাঞ্চুর 姆 ৯১৭ দরকার ? কিন্তু আমাকে নিয়ে তুমি কতদিন আর বসে থাকবে-তুমি যাও, বসে থাকলে তোমার যে—” —ক্ষতি হবে ? হোক। তবু তুমি ভাল হয়ে ওঠ । তোমার চেয়ে আজ আমার আর কিছুই বড় নয় । তারপর দুইজনেই চুপ। অনেকক্ষণ কাটিয়া গেল । বকুলের একটু তন্দ্র আসিতেছে। নরেন তন্দ্রাচ্ছন্ন মুখের পানে তাকাইয়া দেখিতে লাগিল । ম! আসিয়া বলিলেন, “তুমি শোওগে নরেন, একটু ঘুমিয়ে নাও, ততক্ষণ আমি বসি । নরেন উঠিয়া গিয়া শুইয়া পড়িল ৷ ধরে জানালা দিয়া জ্যোৎস্ব আসিয়া পড়িল, বাহিরের দিকে তাকাইয়। নরেন দেখিল, একাদশীর চাদ উঠিয়াছে, মাঝে মাঝে এক এক খণ্ড মেঘ আসিয়া চাদটাকে আড়াল করিয়া দেয়, আবার সব মান হুইয়া যায়। ভাবে— এমনি করিয়াই হয়ত মুতু্য জীবনকে আড়াল করিয়া ফেলে, মৃগের হাসি স্নান করিয়া.দেয় । নরেন ঘুমাইতে চেষ্টা করিল। কিন্তু দুশ্চিস্তায় ঘুম আর আসে না । দিনের অস্পষ্ট চিন্তাগুলি অস্তরে নানা রেখাপাত করিতে থাকিল। বকুলের মৃত্যু যেন চোখের স্বমুখে পরিষ্কার দেখিতে পাইতেছে অস্তরে প্রবল দ্বন্দ্বের স্তষ্টি হইল। বকুলের মৃত্যুর জন্য কে কতথানি দায়ী অন্তর দিয়া সে বিচার করিতে গিয়া পারে না । কেবল অস্বস্তিতে এপাশ ওপাশ করিতে থাকে । রাত্রি ন’টা বাজিল । ছবিকে লইয়া ছেকের। চা করটি অনেকক্ষণ বাহির হইয়াছে—আর ফিরে নাই । পিসীম কেবলই ঘর বাহির করিতেছেন । বার-বার বলিতে থাকেন, “কোথায় রে বল, মহীরু ত এখনও ছবিকে নিয়ে এলো না, তোর। আর ওকে একদণ্ড ঘরে দেখতে পারিস্ না,—রোজই বের করে দেওয়৷ চাই ।” বেলা পিসীমার কথ। গ্রাহ করে না । বাহিরে আসিয়া বসিয়া পড়িল । এদিক-ওদিক তাকাইয় দেখিল । কি ভাবনা তার কে জানে ? ছোট উঠানে লোহার তারে তখনও কাপড়গুলি মেল রহিয়াছে, তারই ছায়া উঠানে পরিষ্কার দেখা