পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| ১ম সংখ্যা ] হইতেছিল। অনুকূল বলিল --“আচ্ছা ! তোমার রমেনটিকে কেমন বোধ হয় ?”

  • রমেন ছেলেটি ভাল বটে, তবে এদিকে কিছু নেই,

তাছাড়া শুনতে পাই রমেনের মা বড় রাগী মেজাজের ” অনুকুল বলিল—“না ভাই কাজ নেই—প্রিয় আমার “ বড় অভিমানী! আচ্ছা সতীশ ?” “ছ! টাকা কড়ি আছে বটে, তবে হেলথ বড় খারাপ !” “‡নামোহন p" “সব ভাল কিন্তু ভয়ানক ম্যালেরিয়ার দেশ !” “যতীশ ?” “রংটা একটু ময়লা!” এইবার অনুকূল হাসিয়া উঠিল । বলিল-“এখন তোমার মত নিখুত পাত পাই কোথায় বল ?” আর ধৈর্য্য রক্তিল না—বলিলাম—“আমার মত’তে আর দরকার কি ? একেবারে আসলটিষ্ট না হয়—” অমুকুল আমার হাতখান চাপিয়া ধরিয়া বলিল—“অঁ্যা । —সত্যি বলচ ?” আমি বলিলাম—“তোমার সঙ্গে কবে মিথ্যে কয়েচি ?” অমুকুল গাঢ়স্বরে বলিল—“আজ কি সুখী করলে আমাদের!” অনুকূল তৎক্ষণাৎ “মা”—“মা করিতে করিতে অন্দরের দিকে গেল । আমি আনন্দবিহবলনেত্রে বৈঠকখানার মুক্ত দ্বারের দিকে চাহিয়া রহিলাম। কিছুক্ষণ পরে দেখি একটা ছোট হিন্দুস্থানী বালিকা আসিয়া দ্বারের নিকট দাড়াইল । এই তাহাকে প্রথম দেখিলাম । তাহাকে ডাকিতে সে নিকটে আসিল । নাম জিজ্ঞাসা করিলাম, সে বলিল—“মুখ দেবী”। মুখখানি তার কষ্টে মাথা –সংসারের স্নেহ যেন সে জীবনে পায় নাই! সে যখন তার স্বরমাটান চোখের স্নান দৃষ্টি আমার উপর ফেলিয়া বলিল—“হাম্ মুখ দেবী”, তখন যেন তার হৃদয়খানি আমার হৃদয়কে জানাইতেছিল—“হাম্ खनक्षकूशै ।” ক্রমে মুখ দেবী তার জীবনের পাতাগুলি একে একে উণ্টাইয়া আমায় দেখাইতে লাগিল—তার মা নাই,— বাপ আগ্ৰায় কাজ করে,—তার সৎমা তাকে ভালবাসে না,—বীপও তাকে ভালবাসে নী,—সে বাপের জন্ত কত মনের দাগ ২৩ ফঁাদে,--তার ঠাকুরদাদা বলে তার বাপ শীগ্রগীর আসবে কিন্তু কত দিন হয়ে গেল আসেনি, সে তার বাপের একথানা চিঠি পাবার জন্ত কত লালায়িত—পিয়ন দড়ির জালে বাধা পার্সেল ঘাড়ে করে যখন তাদের বাড়ীতে এসে “বিটিয়া খৎ লিজিয়ে” বলে হাকে তখন সে বীপের চিঠির আশায় ছুটে আসে, কিন্তু এসে দেখে তার বাপের চিঠি নয়, তখন তার কত কান্না পায়!—বলিতে বলিতে তার চোখ দিয়া টস্ টস করিয়া জল পড়িতে লাগিল! বেদনায় আমার হৃদয় ভরিয়া উঠিল, অতি কষ্টে চোখের জল চাপিয়া ভাবিতে লাগিলাম—আহা ! অনাথা স্বামীপ্রেমে যদি একদিন মুখী হয় ! ( 8 ) অতি অল্প দিনের মধ্যেই আমার প্রতি শিশুদলের যে একটা কৌতুহল ছিল তাঙ্গ মিটিয়া গেল! আর তাহার বড় একটা আমার পাশে জড় হয় না। তবে, এখনও তাহারা আমার ‘পয়ের গাড়ীর’ ঘণ্টা বাজাক্টবার লোভটী একেবারে পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। এখন আমার সঙ্গে তাছাদের শুধু ঐটুকু সম্বন্ধ! শুধু সেই মাতৃহীন উপেক্ষিতা অনাদৃত বালিকাটি এই মাতৃচীন যুবককে দিন দিন তাহার ক্ষুধাৰ্ত্ত হৃদয়ের নিকট বিপুল আবেগে টানিয়া লইয়া যেন আপনার করিতে লাগিল! মধ্যাহ্নে যখন অমুকুল আপিসে, অমরনাথ স্কুলে, প্রিয়বালা মাতৃপরিচর্য্যায়, তখন এই নিঃসঙ্গী প্রবাসীর জন্ত বিধাতা সেই মাতৃহীন অনাথ বালিকাটাকে যেন একান্ত আত্মীয় করিয়া পাঠাইয়া দিতেন! সুখদেবী কোন কোন দিন তার ছোট ঢোলকট লইয়া সুর করিয়া দুলিতে ফুলিতে গীত আরম্ভ করিয়া দিত—“চারে যুগমে নাম গুনায়ে কিষণে কানাইয়া হে!— ।” সে একদিন আমার বন্দুকটা দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল— “ইস্মে কেয়া হোতা ?” আমি বলিলাম “চিড়িয়া মারন হোত।” শুনিয়া তার মুখখানি এতটুকু কষ্টয়া গেল! —তারও একটা ছোট পার্থী আছে! সে জিজ্ঞাসা করিল— “বাবুজি । চিড়িয়া মারনেসে তোমার আপসো নহি হোতা ?” হঠাৎ কে যেন আমার হৃদয়ের ঘুমন্ত করুণাকে