পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ --উত্তর দেও একটা কিছু আমাকে বল...আমার তখন বুদ্ধিদ্রংশ হয়েছিল.আ! বল! বল!..তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না কর তা’হলে আমি বড় কষ্টে মর্ব ! শয্যার আস্তরণের ভিতর ফ্রেডেরিক মুখ গুজিয়া ঘন ঘন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিতেছে—লুসিলের ঠাণ্ড আড়ষ্ট আঙ্গুলগুলি এক-একবার ফ্রেডেরিকের গ্রীবাদেশ স্পর্শ করিতেছে —লুসিল স্পষ্টভাবে হাত বুলাইতে আর সাহস করিতেছে না । তখন ফ্রেডেরিকের মনে পড়িল--পাদি ও ডাক্তারের সেই সাগ্রহ হস্তপীড়ন, তাহাদের সেই ছল ছল চোখৃ— তাহাদের সেই সকরুণ অনুরোধ —“আর তাকে কোন কষ্ট দিও না, তার মৃত্যু আসন্ন ।” তখন ফ্রেডেরিকের স্থগভীর প্রেমার্জ হৃদয় হইতে করুণার উৎস উৎসারিত হইল । যেন মৰ্ম্মাহত হৃদয়ের উচ্ছসিত রক্তপ্রবাহ ঠেলয়। রাখিয়া একটু বলসঞ্চয় করিবে এই ভাবে সে আপনার বুক দুই হাতে চাপিয়া ধরিয়া, তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল । শাস্তিতে মরিতে পারে এই জন্য ফ্রেডেরিক প্রাণপণে আপনার বুক বাধিয়া, একটি করুণার্জ মিথ্যা কথা—একটি মধুর মিথ্যা কথা স্মিতমুখে বলিল । —লুসিল, আমি তা জানতেম—আমি তা জানতে পেরে পূর্বেই তোমায় ক্ষমা করেছি...ই-ই আমি সব জানতেম! লুসিলের নেত্রে স্বথের বিস্ময় ফুটিয়া উঠিল; পরে তাহার নেত্রপল্লব ধীরে ধীরে অবনত হইয় তাহার সমস্ত উদ্বেগকে নিদ্রাভিভুল করিল---শেষ নিশ্বাসের সহিত যখন তাহার প্রাণবায়ু বর্তির্গত হইল,—তাহার ঠোট্ট দুটিতে অতীত সুখের অবশেষ-স্বরূপ কেবল একটি মিষ্টি হাসি রহিয়া গেল । লুসিলের পাণ্ডুবর্ণ মুখখানিতে শুধু মৃত্যুর শাস্তি ও আরাম প্রকাশ পাইল ; মৃত্যুর যাহা কিছু ভীষণতা-সে শুধু ফ্রেডেরিকের হৃদয়ে রহিয়া গেল । শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর । এবং যাহাতে হতভাগিনী মুমুযু { ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড অপুর্ব দীপাধার একদিন স্নিগ্ধ মধুর প্রভাতে পুরাণে একখান ংবাদপত্রে জড়ানো একটি বাণ্ডিল হাতে শাচ ডাক্তার কোশেলের রোগী-পরীক্ষাগারে প্রবেশ করিল। ডাক্তার কোশেল সহরের লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক। কিন্তু অস্ত্রচিকিৎসা তাহার ব্যবসায়ের অঙ্গ হইলেও, অথোপার্জনে তিনি অস্ত্র-প্রয়োগ-নীতি অবলম্বন করিতেন না । সজ্জন সদাশয় বলিয় তাহার যথেষ্ট মুখ্যাতি ছিল ;–ধনী, দরিদ্র, সন্ত্রান্ত ও জনসাধারণ--সকল সমাজেক্ট সেঞ্জত তাঙ্গার অক্ষুণ্ণ প্রতিপত্তি । শাচাকে দেখিবামাত্র ডাক্তার চিনিলেন । শাচ সহ রবাসিনা একটি বিধবার একমাত্র পুত্ৰ :- কিশোর বয়স প্রায় অতিক্রম কবিয়াছে । কিয়দিবস হল, শঙ্কটাপন্ন পীড়া হইতে, সদাশয় ডাক্তার সাহেবের চিকিৎসানৈপুণ্যে শাচ পুনৰ্জ্জীবন লাভ করিয়াছে। বিধবার স্বামী প্রাচীনকালের বিচিত্র ভূষিত ধাতুনিৰ্ম্মিত নানাবিধ দুর্লভ দ্রব্যসম্ভার বিক্রয় করিয়া জীবিকানিৰ্ব্বাঙ্গ করিত। তাহার যে উপাৰ্জ্জন ছিল, তাতাতে সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহের পর, অন্তিম সময়ে, স্ত্রীপুত্রের জন্ত বিশেষ কিছু সঞ্চয় করিয়া যাইতে পারে নাই । একমাত্র পুত্ৰ লইয়া বিধবা সংসারে নিরাশ্রয় হইয়া, স্বামীর ব্যবসায় অবলম্বনেষ্ট কোনরূপে দিনপাত করিতে লাগিল। কিন্তু সংসারের একমাত্র অবলম্বন, নয়নের মণি সেই পুত্রটি যখন মরণাপন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হইল, তখন তাহার চিকিৎসার ব্যয় সস্কুলানও বিধবার সাধ্যাতীত হইয়া পড়িল । ডাক্তার সাহেব দীনদরিদ্রের বান্ধব ; তিনি নিঃস্বার্থভাবে বহুদিন অকাতর পরিশ্রমে চিকিৎসা করিয়া যুবকটিকে নিরাময় করেন। শাচাকে রোগীর পরীক্ষাগারে সমাগত দেখিয়া, ডাক্তার সাহেব শাচার প্রতি ঔৎসুক্যপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি চে যুবক, আজকাল কেমন আছ, এখন আর কোনো অসুখ নাই তো ?” শাচ যথাযোগ্য অভিবাদন করিয়া বিনয়নম্ন স্বরে উত্তর করিল, “ন, মহাশয়, আপনার কৃপায় আমি সম্পূর্ণ সুস্থ কারুকার্যা আজ