পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বুঝিতে পারিল দুইজন লোক কথা কহিতেছে। কণ্ঠস্বরে বুঝিল ছোটবাবু ও রমণ ঘোষ–কিন্তু সকল কথা ধরিতে পারিল না । দুষ্ট একটা কথা যাঙ্গ কানে গেল তাহ। હોરું ! ছোট বাবু বলিলেন—“কবে উৎসব ?” • রমণ বলিল—“শুামাপূজার দিন। কিন্তু তারা অনেক করে বলে দিয়েছেন খ্যামাপূজার পূর্বদিনে হুজুরকে সেখানে পৌছতেই হবে।” ছোট বাবু বলিলেন—“আচ্ছা যাব। কাল তুমি যখন এসেছিলে, প্রমথ বাবু বলে আমার একটি বন্ধু এখানে বসেছিলেন । তাদেরও বাড়ী খুলনার কাছেই । অনেক করে বলে গেছেন যেন আমি তাদের ওখানে গিয়ে দিন পাচ সাত থাকি। খুলনায় শুমাপুজার দিন তাদের উৎসব দেখে—পরদিন প্রমথ বাবুদের বাড়ী যাব এখন । তুমি কবে যাচ্ছ ?” “আজ্ঞা আমি কাল সকালেক্ট রওনা হব । বাদ একবারে ফিরবো ।” “আচ্ছ—তুমি যাও । চিঠির জবাব লিখে দিচ্ছি, নিয়ে যাও । মুখেও তাদের বোলে এখন, স্যামাপূজার পূৰ্ব্বদিন আমি গিয়ে পৌছব ।” তাহার পর অনুচ্চ স্বরে দুইজনে আরও কি কি কথা হইল, গদাধর ধরিতে পারিল না । কচুবনের মধ্যে খড় খড় করিয়া কি একটা নড়িতে লাগিল। ভয়ানক অন্ধকার, কিছুই দেখা যাইতেছে না। সর্প না কি ঠিক নাই—গদাধর আর দাড়াইতে সাহস করিল না। “হে মা মনসা, রক্ষা কর”—এই কথা মনে মনে বলিতে বলিতে পা টিপিয়া টিপিয়া সে সরিয়া পড়িল । কাছারির প্রাঙ্গন পার হইয়া, ফটক পার হইয়া, স্বীয় বাসগৃহের অভিমুখে অগ্রসর হইল। কিয়দর যাইতেই একজন পেয়াদা তাহার সম্মুখীন হইয়া বলিল—“কেও নাজির মশাই ?” গদাধরের বুকটা চমকিয়া উঠিল। এইমাত্র জানালার নিম্নে অন্ধকারে দাড়াইয়া চোরের মত সে আড়ি পাতিয়৷ আসিয়াছে, তাই কি ছোট বাবু তাহাকে ধরিবার জন্ত লোক পাঠাইয়া দিয়াছেন ? শঙ্কিত স্বরে গদাই উত্তর করিল—“হঁ্য —কেন ?” শু্যামাপূজা b? নবীন সন্ন্যাসী b"> “বাৰু আপনাকে তলব করেছেন।” “কোন বাৰু ?” - “কোন বাবু আবার ?— জমিদার--মালিক--বড় বাবু।” “বড় বাবু তলব করেছেন ? কেন রে ?” “কি জানি মশাই –তা ত বলতে পারিনে। আমায় শুধু বাবু হুকুম দিলেন– “যা নাজিরকে ডেকে আন । ” গদাষ্ট, পেয়াদার সঙ্গে সঙ্গে চলিল। কিয়ৎক্ষণ পরে বৈঠকখানা ঘরের একটি কক্ষে প্রবেশ করিয়া দেখিল, বাবু একাকী সেখানে বসিয়া একখানি বহি পড়িতেছেন। গদাই প্রণাম করিয়া বলিল—“হুজুর কি আমাকে স্মরণ করেছেন ?” “হঁ্যা । কাল দরিয়াপুর রওনা হচ্ছ ?” “আজ্ঞে হঁ্যা । ভোরে উঠে যাব স্থির করেছি।” “যাবার কি বন্দোবস্ত করেছ ?” “আজ্ঞে, চলেই যেতাম। কিন্তু স্থা চারটে মোটমাটারি আছে কি না, থালাটা-ঘটিটে, দুই একটা ভাঙ্গ ফুটে বাক্স, তাই একটা গোরুর গাড়ী বলে রেখেছি।” বাবু বলিলেন—“জিনিষ পত্র গোরুর গাড়ীতেই রওনা করে দিও। কন্তু তুমি জমিদারের নায়েব হয়ে যাচ্ছ, তোমার গোরুর গাড়ীতে যাওয়াটা ভাল দেখায় না ;-- ওতে ইজ্জতের হুগনি আছে । আমি পান্ধী বলে দেব এখন, পান্ধী করে যেও ।” এতক্ষণে গদাধরের মন হইতে সমস্ত আশঙ্কা ও সংশয় দূরীভূত হইল। তবে বাবু তাহার উপর রুষ্ট হন নাই । কেহ তাঙ্কার কাছে কিছু শোনায় নাই। হাত দুইটি যোড় করিয়া গদাই উত্তর করিল- “যে আজ্ঞা হুজুর।” একটু পরে বাবু বলিলেন---“আর একটা কথা । সে দিন সেই যে একটা স্ত্রীলোকের কথা বলেছিলাম।” “আজ্ঞা হুঁ্য ।” “এখন আপাততঃ কেনারাম ঘোষকে ডাকিয়ে কিছু বলবার দরকার নেই । তবে তার প্রতি নজরট রেখ । যদি দেখ থানায় টানায় যাচ্ছে, তৎক্ষণাৎ আমায় সংবাদ দিও ।” “যে আজ্ঞা ।” “সে স্ত্রীলোকটা এক মাসের উপর বাড়ী ছেড়েছে।