পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o ○る ছিল, এখন সে একেবারে উন্মুক্ত হইয়া পড়িয়াছে। . তাহাতে সে ভারি একটা লজ্জা বোধ করিতেছিল। ফ্র্যাঙ্ক এতক্ষণ ভালো করিয়া বার্টিকে দেগ্নিতে পান নাই, এখন অচলায় স্পষ্ট দেখিলেন। তাহার সমস্ত দেহটা দারিদ্র্যের পীড়নে ভরা। কি পরিচ্ছদের শ্ৰী ! ময়লা, ছেড়া জামা,—গায়ে খাটো হইয়া গেছে, তাতে একটাও বোতাম নাই, সমস্তটা দাগী ! পায় জামাও ছেড়া—জাল জ্যাল করিতেছে। অপরিচ্ছন্ন গলাবন্দ ;–ভিতরে যে কোনো কামিজ নাই তাহা গোপন রাখিবার জন্য অতি সাবধানে বাধা । জুতাও তথৈবচ—ই স্থা করিতেছে, কোনো রকমে পা দুটাকে ঢাকিয়া রাখিয়াছে। টুপিটা ভাঙাচোরা দোমড়ানো ! - বার্টির চেহারার সঙ্গে তাহার এই পরিচ্ছদ মোটেই থাপ যাইতেছিল না। মুখে যদিও ক্ষেীরাভাবে দাড়ি গোফ খোচা খোচা হইয়া উঠিয়াছে, চুলগুলি এলোমেলো, তবুও তাহার সেই একহারা দেহ গঠনের মধ্যে একটা বড় বংশের পরিচয় ছিল । তাহাকে দেখিয়া বোধ হয় একজন ধনী লোক যেন ছেড়া কাথা ও কম্বল লইয়া ভিখারীর ভেক্‌ ধরিয়াছে। ফ্র্যাঙ্কের মূল্যবান আসবাব পত্রে সজ্জিত ঘরে সে নিতান্ত অশোভন হইয়া উঠে নাই । দানবের মত লোল জিহবা লক্ লক্ করিয়া আগুন জলিতেছিল, বার্ট স্থির হইয়া আগুনের সেই খেলা দেখিতেছিল। কোনো কথা কহিবার প্রবৃত্তি হইতেছিল না। হঠাৎ যখন দেখিল ফ্র্যাঙ্ক তাহার দিকে একাগ্রভৃষ্টিতে বিস্ময়ের সহিত চাহিয়া আছে, তখন সে একটা কৃতজ্ঞতা জানাইবার জন্য ভিক্ষুক যেমন করিয়া কথা কহে সেই রকম স্বরে বলিল—“ধন্যবাদ! - সতাই তুমি আমার বড় উপকার—” - অ্যানি খাবার আনিয়া হাজির করিল। বেশী কিছু আনিতে পারিল না, ঘরে যা যৎ-কিঞ্চিৎ ছিল তাহাই আনিল। ফ্র্যাঙ্ক প্রায়ই বাড়ী থাকিত না বলিয়া সব সময় ঘরে আহাৰ্য্যের তেমন উপকরণ থাকিত না । এক টুকরা মাংস, কিছু শাকসবজি, খানকতক বিস্কুট ও খানিকটা জ্যাম! বাটি তাই পাইয়াই বাচিয়া গেল । 2< 1거l- বৈশাখ, ురి: | ১০ম ভাগ । .-------........................................................-- সবটা প্রকাশ করা হইতীেছল না—বেশ একটা •আরাম সে অত্যন্ত আগ্রহের সহিত যা পাইল তাই মুখে পুরিল— চো চো করিয়া এক দমে এক গ্লাস মদ পান করিয়া মেলিল। তাহার ক্ষুধার তাড়নাটা কিরূপ তাহ তাহার আহারের ভঙ্গী দেখিয়া বেশ বুঝা গেল। ফ্র্যাঙ্ক তখন তাহাকে কথা কহাইবার চেষ্টা করিলেন ;--- পেটে কিছু পড়িতেই বার্টির মুখ খুলিয়া গেল। কেমন করিয়া তাহার এমন দুরবস্থা হইল ফ্র্যাঙ্ক একথা জিজ্ঞাসা করিলে বাটি আমতা আমতা করিয়া ছাড়া ছাড়া কথায় নিজের কাহিনী বলিল । সে বর্ণনার প্রত্যেক কথা একটা করুণ আবেদনের মতে শুনাইতে লাগিল । "মায়ের কিছু টাকাকড়ি ছিল। তিনি মারা যাবার পর তাই নিয়ে বাপের সঙ্গে ঝগড়া। যা কিছু হাতে ছিল খরচ হয়ে গেল। তারপর আমেরিকায় পলায়ন। সেখানে কখনো হোটেলের চাকর, কখনো থিয়েটারের দরোয়ান, কখনো অন্ত কিছু কাজ করে দিন গুজরান। তারপুর জাহাজে চাকরি নিয়ে ইউরোপে পদার্পণ। আজ সকালে লওনে—এখন কপৰ্দক হীন ।” মোটামুটি বার্টির কাহিনী এই ৷ অনেক দিনের পুরানো চিঠি হইতে সে ফ্র্যাঙ্কের ঠিকানা বাহির করিয়া বরাবর হোয়াইট-রোজ কটেজে আসিয়াছিল। তাহার মনে মনে ভয় ছিল হয় ত ফ্র্যাঙ্ক এ বাড়ী বদলাইয়া আর কোথাও চলিয়া গেছে, তাহার কোনো কিনারা করিতে পারিবে না ! সে সময়টা সে কি দারুণ দুঃখে ও দুশ্চিন্তায় কাটাইয়াছে ! ক্রমেই অন্ধকার বাড়িতেছে। কনকনে বাতাস। আর কিছু চোখে দেখা যায় না কেবল বরফের পিণ্ড ! কোনো সাড়া নাই, শব্দ নাই, মৃত্যুর মতো সব স্থির গায়ে মোটা কাপড় নাই—উদর শূন্ত ! নাড়িগুলো যেন হজম হইয়া যাইতেছে! দেহটা জমিয়া আসিতেছে। কি उग्रझन्न ! - তারপর, এই আশ্রয় ! এই আহার । এই অগ্নিউত্তাপ ! কি আরামের ! - কৃতজ্ঞতায় উচ্ছসিত হইয়া সে বন্ধুকে আবার ধন্যবাদ জানাইল। নিজের ছেঁড়া পোষাকের মধ্যে সঙ্কুচিত হইয় গিয়া সে কম্পিত কণ্ঠে কহিল—“ধন্যবাদ! ধন্যবাদ !" ১ম সংখ্যা । ] এত রাত্রে, রাস্তার কোথাকার কে তাহার জন্তে এতটা পরিশ্রম করিতে হইল বলিয়া আনি মনে মনে খুব চটিয়াছিল। কিন্তু তাছা হইলে কি হয়, তাহাকেই আবার শয্যা রচনাও করিতে হইল । ফ্র্যাঙ্ক - তাহাকে উপরে শয়ন-ঘরে লইয়া গেলেন । বন্ধুর সেই অবসর, ভগ্ন শরীর, রজবিহীন মুখশ্ৰী দেখিয়া ফ্র্যাঙ্ক মনে একটা আঘাত পাইলেন। তিনি বন্ধর পিট চাপড়াইয়া দয়ার্দ কণ্ঠে আদরের সহিত বলিলেন—“বার্টি এখন যাও ঘুমাও গে। তোমার কোনো ভাবনা নেই—আমি তোমায় সাহায্য করবে ! কাল ভেবে চিন্তে সব দেখা যাবে।" বাটি যখন ঘরে একেল রহিল তখন সে নিজের চারিদিক একবার ভালো করিয়া দেখিয়া লইল । ঘরটি বেশ মনোরম ! বিছানাটি শুভ্র কোমল । শীত" নিবারণের যথেষ্ট আয়োজন রহিয়াছে। চারিদিক ' পরিস্কার - পরিচ্ছন্ন ! এই পরিচ্ছনতার মধ্যে দাড়াইয়া সে "নিজেকে অত্যন্ত অপরিস্কার মনে করিল। নিৰ্ম্মল থাকিবার স্বাভাবিক ইচ্ছাটা তখন তাহার মধ্যে জাগিয়া উঠিল। যদিও শীতে দাতে দাত লাগিতেছিল, তবুও সে আগাগোড়া সমস্ত শরীর ধুইয়া ফেলিল-সাবান ঘসিয়া ঘসিয়া গায়ের ময়লা উঠাইয়া ফেলিল—তথন তাহার দেহের স্বাভাবিক রক্তাভা বাহির হইয়া পড়িল এবং গায়ের দুর্গন্ধ দূৰ হইয়া সাবানের গন্ধ ভর ভর করিতে লাগিল। আয়ন দিয়া তখন সে নিজের চেহারা দেখিল—কতকটা তৃপ্তি বোধ করিল । কেবল ক্ষেীর-কৰ্ম্মট হইল না বলিয়া মনে মনে একটু আপশোস হইতে লাগিল। অবশেষে সে বিছানার মধ্যে প্রবেশ করিল-—কোমল স্নিগ্ধ কম্বলথানি মুড়ি দিল। তখনই সে ঘুমাইয় পড়িল না। অনেক দিনের পর পাওয়া আজকের এই আরামটা সে ভালো করিয়া উপভোগ করিতে লাগিল—ঘুমাইয়া পড়িয়া সেটা মাটি করিতে চাহিল না। এই কোমল শয্য, এই উত্তাপ, এই শতাবরণ, বহুদিনের পর আজকের তাহার দেহের এই পরিচ্ছন্নতা, জানালার মধ্যে দিয়া বাহিরের আকাশ হইতে একটু আলো, সে যেন চাথিয় চাথিয়া উপভোগ করিতেছিল। তারপর যখন ঘুমাইয়া পড়িল, তখন তাহার অধরকোণে একটু আনন্দ হাসির রেখা ফুটিয়া উঠিল— সংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র । -- ~-------- ○> সেখানে অপ্রসন্নতার চিহ্নমাত্র ঝুহল না! ভাবনা নাইমন আজ শূন্ত , ভবিষ্যতের চিন্তা, অদৃষ্টের কথা তাহার মনেই উঠিতেছে না। আজ সে যতটুকু পাইয়াছে সেইটুকুতেই সে আজকের মতো সম্পূর্ণ সুখী ! - দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, পর দিন সকাল হইতেই ভারি বরফ পড়িতে আরম্ভ হইয়াছে —ঘরের বাছির হয় কার সাধ্য। তাহার মধ্যাহ্নভোজন শেষ করিয়া বসিয়াছিলেন। বাট গল্প করিতেছিল—এই কয় বৎসর তাহার জীবনের উপর দিয়া যে ঝড় বহিয়া গিয়াছে সে তাহারই পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণন করিতেছিল। ফ্র্যাঙ্কের নাপিত তাহাকে কামাইয়া দিয়া গিয়াছে ; কেশ বিষ্ঠাস করিয়া ফ্র্যাঙ্কের পোষাক ও জুতা পরিয়া সে বসিয়া আছে—সে পোষাক তাহার গায়ে ঢলঢল করিতেছে এবং জুতা জোড়াটার মধ্যে তাহার পা দুখানি যে কোথায় আছে তাহ চট্‌ করিয়া বুঝা যাইতেছে না। শীতাৰ্ত্ত বিড়াল যেমন করিয়া চক্ষু মুদিয়া আরামে রৌদ্র পোহার, বাটিও তেমনি করিয়া আগুন পোহাইতেছে। বেশ আরামে পা দুটা সটান করিয়া কেদার হেলান দিয় বসিয়া আছে, চুরুট ফুকিতেছে এবং ছেলেবেলায় যেমন অসঙ্কোচে ও ঘনিষ্ঠভাবে ফ্র্যাঙ্কের সহিত কথা কহিত তেমনি ভাবে বাক্যালাপ করিতেছে। কথার স্বরে এখন আর কোনো প্রচ্ছন্ন কাতরতা ফুটিয়া বাহির হইতেছে না—বরঞ্চ তাহাতে বেশ একটা অখণ্ড তৃপ্তির আমেজ পাওয়া যাইতেছে। ফ্র্যাঙ্কের কানে তাহার কথাগুলি মন্দ শুনাইতেছিল না, তিনি তাহাকে তাহার নিজের মতে করিয়া সব কথা বলিবার জন্ত উৎসাহ দিতে ছিলেন। সে খুব সরল ভাবেই সব বলিতেছিল—তাহার দুরবস্থার কথা দারিদ্রের কথা এতটুকু গোপন করে নাই। তাহার অদৃষ্টে যাহা ঘটিয়াছে তাহাতে কাহারো কোনো হাত ছিল না, তেমন না হইয়া অন্ত রকম হওয়া অসম্ভব। সে কি করিবে ? ভাগ্যলক্ষ্মী তাহার প্রতি অপ্রসন্ন। সে যাহ। বলিতেছিল তাহার সার মৰ্ম্ম এই ! তার জানটা নিতান্ত কঠিন বলিয়াই সে এখনো টিকিয়া থাকিতে পারিয়াছে— অন্য কেহ হইলে কখনই গারিত না ! -