পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

لیۓ o -- - S. প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭। ১০ম ভাগ । কিয়ৎক্ষণ কাটিল। দুরে মুলের ঝুম্ ঝুম্ শব্দ উখিত “তোর কাকার বিয়ের কথা কি তোর পক্ষে রঙ্গ হইল। মোহিতলাল একবার মাত্র সে দিকে দৃষ্টিপাত করিল। দেখিল তাহার ভ্রাতুপুত্রী কিরণবালা আসিতেছে। দেখিয়া, সে পাঠে মনোনিবেশ করিল। কিরণ আসিয়া দূিৰ্ব্বাক পুন্তলীর মত নতনেত্রে কাছে দাড়াইল। ক্রমে মোহিতলাল পুস্তক হইতে মুখ উঠাইয়৷ বলিল--"কেন রে কিরণ ?” o কিরণ বলিল—“কাকা, একবার বাড়ী আসুন, বাবা ডাকছেন। “কেন ডাকছেন ?” “চুটি লোক এসেছেন।” - “কে তারা ?” “তাত জানিনে,—বৈঠকখানায় বসে আছেন।" মোহিতলাল মনে মনে বলিল “হু !” বালিকার নৈতিক পরীক্ষাগ্ৰহণ মানসে অবশেষে জিজ্ঞাসা করিল—“লোক দুটি কোথা থেকে এসেচেন ?” “কলকাতা থেকে।" "কেন ?” বালিকা দ্বিধামাত্র না করিয়া বলিল—“আপনাকে দেখতে।”—বিনোদচন্দ্রের লাঞ্ছনার বিষয় সে অনবগত ছিল না। ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া মোহিত বলিল—“কেন, দেখবে কি ? আমি বাঘ না ভালুক ?” ঈষৎ হাসিয়া কিরণ বলিল—“আপনার বিয়ের সম্বন্ধ করতে এসেছেন।” কিরণের এই হাসি দেখিয়া মোহিতলালের মনে দাবানল জলিয়া উঠিল। গুরুজনের সম্মুখে কিরণের এ লঘুতা, খৃষ্টতা, চপলতা একেবারে অমার্জনীয়। তাই সে চক্ষু লাল করিয়া কৰ্কশ কণ্ঠে বলিল—“কিরণ। কাকার ভাবভঙ্গি দেখিয়া হতবুদ্ধি কিরণ তাহার প্রতি সভয় দৃষ্টিপাত করিল। “কিরণ, তুই হাসলি যে ?” বালিকা তথাপি নীরব—কিন্তু তাহার চক্ষু দুইটি বিষঃ • ইয়া আসিল । - মোদ্ভুিতলাল তখন গম্ভীরভাবে বুলিয়া যাইতে লাগিল— তামাসার বিষয় ? গুরুজনের সাক্ষাতে কি রকম ব্যবহার করতে হয়, তা কি তুই আজও জানি না ? তোর মা কি এ সম্বন্ধে তোকে কোন শিক্ষাই দেন নি ? মাঝে মাঝে তুই রামায়ণ মহাভারত খুলে পড়িস দেখতে পাই। কি উপদেশ তুই সংগ্রহ করলি রামায়ণ মহাভারত থেকে ?— ধিক্ ।” - কিরণের ডাগর চক্ষু দুইটিতে জল ভরিয়া আসিল । ক্ষীণ কম্পিত স্বরে সে কহিল—“আমি ত আপনার বিয়ের কথায় হাসিনি।" "কি কথায় হাসলি তবে ?” "আপনি যে বল্লেন আমি বাঘ না ভালুক, সে কথা শুনে আমার মনে হল,—বাঘ ভালুকে কখনো চশমা চোখে দিয়ে রামায়ণ পড়ে? তাই আমার হাসি পেয়েছিল।" বলিতে বলিতে কিরণের চক্ষু দিয়া টল্‌ টল্‌ করিয়া জ পড়িতে লাগিল । -- বালিকার অবস্থা দেখিয়া মোহিতলালের পাষাণ হৃদয়ও যেন একটু গলিল। ক্ৰোধ সংহরণ করিয়া, আবার সে রামায়ণ খানির পৃষ্ঠায় দৃষ্টিবদ্ধ করিল। কিরণ কিন্তু গেল না, দাড়াইয়া রহিল। আচল দিয়া চোখ মুখ মুছিয়া, চুপটি করিয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল। তাহাকে নাছোড়বান্দা দেখিয় মোহিতলাল বলিল— “যা না—দাড়িয়ে রইলি কেন ?”–এবার তাহার স্বর পূর্কের মত কর্কশ নহে। কিরণ বলিল—“চলুন কাকা।" | "বিরক্ত করিস্ কেন ?” “আপনার পায়ে পড়ি কাকা ।” "দেখ, আমি বার বার করে সকলকে বলেছি, আমি বিয়ে করবনা। আমায় কেন দেখতে এসেছে ?” বলিয়৷ মোহিত পুস্তকে মনঃসংযোগ করিতে বৃথা যত্ন করিতে লাগিল । * . কিরণ বলিল—“ত আমি জানিনে কাকা । যা বলবার তা বাবাকে বলবেন এখন। আমুন।" “গিয়ে কি করব ? কি ফলটা হবে শুনি ?" "কাকা—আসুন।” আপনার ১ম সংখ্যা । ] মোহিত তখন চশমা পানি খুলিয়া পকেটে লইল । নন্তের ডিবা হইতে কিঞ্চিং নস্ত লইয়া, বহিখানি বগলে করিয়া, আসন খানি হাতে ঝুলাইয়া, অপ্রসন্ন মুখে কিরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ী আসিতে লাগিল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ। ভ্ৰাতৃবিচ্ছেদের স্বত্রপাত । বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়দের বৈঠকখানাটি আজ বেশ গুলজার। কলিকাতা হইতে যে দুইটি বাবু পাত্ৰ দেখিতে আসিয়াছেন, তাহদের মধ্যে একজন, কস্তার খুল্লতাত— নাম বীরেশ্বর বাবু।. সঙ্গে যিনি আসিয়াছেন, তিনি ইহাদের কোনও আত্মীয় নহেন, বন্ধুমাত্র। ইহার নাম হামাচরণ বাৰু-কলিকাতার কোনও বেসরকারী কলেঞ্জে অধ্যাপকের কৰ্ম্ম করিয়া থাকেন। পূৰ্ব্বে যখন অপ্রাপ্তবয়ঃ পাত্রের বিবাহ হইত, তখন দেখিতে আসিয়া তাহার একটা মোটামুটি পরীক্ষা লওয়ার প্রথা ছিল। যদিও এক্ষেত্রে কন্যাপক্ষ জানিতেন, ছেলেটি এম, এ, বি, এল, পাস করিয়াছে এবং তাহ সরকারী গেজেটে পর্যন্ত ছাপা হইয়া গিয়াছে, পরীক্ষা লওয়ার কোনও আবণ্ডক নাই এবং পরীক্ষক খ জিয়া পাওয়াও শক্ত, তথাপি সঙ্গে একজন निवनि ८लोकरक श्रा?ाहेब cनख्या শ্ৰেয়স্কর বিবেচনা করিয়াছেন। বীরেশ্বর বাবু ও খামাচরণ বাবু বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন। গোপীকান্ত বাবু তাহাদের নিকট বসিয়া গল্প করিতেছেন। পাড়ার দুই চারিজন মাতব্বর লোকও আসিয়া জুটিয়াছেন। দুইটি বাধা ছক রাশি রাশি সুগন্ধি ধূম উগিরণ করিয়া সেই কক্ষটিকে অন্ধকারপ্রায় করিয়া তুলিয়াছে। গল্প খুব জমিয়া উঠিয়াছে। সকলেরই মুখে তুবড়ী ফুটিতেছে, কেবল অধ্যাপক বাবুটি চুপ করিয়া আছেন। তিনি মাঝে মাঝে নন্ত লইতেছেন, এবং অন্তের খোসগল্প শুনিয়া সরল হাস্তে কক্ষখানি ভরিয়া ফৈলিতেছেন। বেলা হইল, এখনও মোহিতলাল আসিল না দেখিয়া গোপীবাবু স্বয়ং উঠিয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন। অঙ্গনে প্রবেশ করিয়াই দেখিলেন, অগ্রে অগ্রে তাহার নবীন সন্ন্যাসী । a SSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSSMSSS কষ্ট, কিরণবাল, পশ্চাৎ পশ্চাৎ বহি বগলে কুশাসন হস্তে মোহিতলাল প্রবেশ করিতেছে। ভাইকে দেখি রাই গোপীবাবু বলিলেন—“এতক্ষণ কোথা ছিলে বল দেখি ? একবার বৈঠকখানায় এস। এত ডাকাডাকি করছি, লোকের উপর লোক পাঠাচ্ছি—তোর কি হল হয় না ?” আজ প্রাতঃকাল অবধি—যখন হইতে শুনিয়াছে যে তাহাকে “দেখিবার” জীন্ত কলিকাতা হইতে লোক আসিতেছে—মোহিতলালের মনটা খিচড়াইয়াছিল। মনের বিরক্তি যথাসম্ভব গোপন করিয়া, বিনীতভাবে বলিল“দাদা, বৈঠকখানায় যাবার তেমন কি বিশেষ কোনও আবগুক আছে ?” “হ্যা–কলিকাতা থেকে দুটি ভদ্রলোক এসেছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করবে এস।” "তারা কি আমার বিয়ের জন্তে এসেছেন?” একটু নীরব থাকিয় গোপীবাবু বলিলেন—“স্থা।” "আমি ত বলেছি আমি বিবাহ করব না, তবে কেন অামায়—” বাধা দিয়া গোপীবাবু বলিলেন—“কি মুস্কিল! তোমাকে তারা দেখলেই যে বিয়ে হোয়ে গেল, তা ত নয়। এখন শুধু তোমায় দেখতে এসেছে। তাদের প্রতিজ্ঞ, পাত্র দেখতে খুব স্বত্র হলে তবে তারা বিবাহ দেবে। টাকার পরোয়া তারা করে না।” এই কথা শুনিয়া মোহিতের বিমুখ মন আরও বিমুখ হইয়া গেল। ধনগৰ্ব্বী মদোদ্ধত পিতা তাহাকে যাচাই করিয়া দেখিতে আসিয়াছে, পছন্দ হয় ত কস্তার জন্ত কিনিবে, যত টাকাই লাওক। পছন্দ না হয়, অবজ্ঞাভরে ভূড়ি দুলাইয়া চলিয়া যাইবে। ভ্রাতাকে নীরব দেখিয়া, গোপীকান্ত বলিলেন"তারা খুব বড় লোক আমাদের মত সাতটা জমিদারকে একদিনে কিনে ফেলতে পারে। যদি তারা তোমায় পছন্দ করে ত জেনো যে কপাল ফিরে গেল। কলকেতায় বড় বড় এটর্নিরা তাদের হাত ধরা। বলেছে, কলকেতায় তোমায় নিয়ে গিয়ে চৌরঙ্গিতে একখানি তিনতালা বাড়ী । দেবে। জুড়ি গাড়ী দেবে। হাইকেটে যাতে ছমাসের মধ্যে তোমার বিলক্ষণ পসার জমে যায়, তার বন্দোবস্ত