পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి8 বিছানা ছাড়িয়া উঠেন নাই। খাটের পাশে টিপয়ের উপর খাবার সাজান, চায়ের পেয়ালাটা শুধু খালি, আর কিছু তিনি স্পর্শও করেন নাই। আয়া মাথার কাছে দাড়াইয়া তাহার কপাল টিপিয়া দিতেছে। যামিনী চুকিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “ম, তোমার মাথা বেশী ধরেছে না কি ?” জ্ঞানদা বলিলেন, “বড় কষ্ট হচ্ছে । মাথাটায় কে যেন একতাল সাঁসে ঢুকিয়ে দিয়েছে, এমন ভার মনে হচ্ছে । চোখগুলোও কেমন যেন করছে। কিছু ত মুখেও দিতে পারলাম না। এগুলো ডুলিতে বন্ধ করে রেখে এস।” যামিনী ডুলির চাবি লইয়া ডিম, রুটি তুলিয়। রাখিতে চলিল। জ্ঞানদা বলিলেন, "চাকরদের চায়ের চিনি আর ফুধ বার ক’রে দিস।” যামিনী জিজ্ঞাসা করিল, “ভাড়ার কি বার করতে হবে ?” জ্ঞানদী বলিলেন, “ন, সে আমি কাল সন্ধ্যাতেই দিয়ে রেখেছি। তুমি চিনি দুধ দিয়ে গিয়ে পিয়ানো প্রাকৃটিস্ কর গে। আমি শুয়েছি ব’লে যেন ঘরের সব কাজ বিশৃঙ্খল না হয়। ও রকম কাণ্ড আমি দু-চক্ষে দেখতে পারি না । খোকাটা কি করছে ? উঠেছে, না এখনও নাক ডাকাচ্ছে ?” যামিনী বলিল, “ন, উঠে খেয়েছে।” জ্ঞানদা বলিলেন, “তাকেও পড়তে বসিয়ে দিগে ঘ । এ বেলা উঠতে পারব কিনা জানি না, কিন্তু স্কুলে যেন ঠিক সময়ে যায় । ভজুকে তাড়া দিয়ে রাখ। মাছ যদি ঠিক সময় মত না আসে, থোকাকে যেন একটা ডিম ভেজে দেয় ।” যামিনীর গৃহিণীপনা করিতে মন্দ লাগিত না, তবে তাহার অবসর তাহার ভাগ্যে কমই জুটিত । পড়াশুন, গানবাজন, চিত্রাঙ্কন শিক্ষা প্রভৃতির ফাকে যেটুকু সময় সে পাইত, নিজের প্রিয় বইগুলি লইয়া বসিত । ঘরের কাজ একটু-আধটু না শিখিলে চলে না, তাহা জ্ঞানদা মুখে স্বীকার করিতেন বটে, কিন্তু যামিনীকে সে-সব শিখাইবার কোনো ব্যবস্থা তিনি কোনো দিন করেন নাই । কবে কোন দিন আলু কুটিয়া যামিনীর চম্পকাঙ্গুলিতে কি একটা বাহির হইয়াছিল, ইহাতে তিনি ভয় পাইয়া তরকারী

  • S99āు

কোটা তাহার একেবারে বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। রান্নাবান্না একটু-আধটু সে মাঝে মাঝে করিত বটে, তবে এত সাবধানে যে, কেহ সে-দৃশ্ব দেখিলে চমৎকৃত হইত। চামচ দিয়া মশলা চুন তোল, হাতায় করিয়া কড়ায় কোট তরকারি ঢালা প্রভৃতি ব্যাপারে তাহার ক্লাস্তি ধরিয়া যাইত, কিন্তু মায়ের কাছে নিষ্কৃতি ছিল না। যামিনীর বড় ইচ্ছা করিত, পাশের গলির রায়দের বাড়ির বউয়ের মত সে খালি পায়ে আলত পরিয়া ঘুর-ঘুর করিয়া বেড়ায়, বটি পাতিয়া বসিয়া তরকারী কোটে, মাছ কোটে। এমন কি মশলা বাট, কয়লা ভাঙা প্রভৃতিও তাহার বৈচিত্র্যের খাতিরে মাঝে মাঝে করিয়া দেখিতে ইচ্ছা হইত। মেয়েটির কোমল আঙলে হলুদের দাগ, চুনখয়েরের দাগমৃদ্ধ তাহার ভাল লাগিত। কিন্তু জ্ঞানদার কাছে এ সবের নাম করিবার জো ছিল না। প্রথম জীবনে, সংসারচক্রের নিষ্পেষণে তাহার মনে যে বিরাগ জমা হইয়াছিল, কালের প্রভাবে তাহ কিছুমাত্র কমে নাই । যামিনীকে সকল দিক দিয়া নিজের আদর্শমতে গড়িয়া তুলিয়, তিনি নিজের বাল্য ও যৌবনের সকল ক্ষোভ মিটাইতে চাহিতেন। নিজে বিশেষ সুন্দরী কোনো দিনই ছিলেন না, কন্যা কপালগুণে রূপসীও হইয়াছে। সুতরাং সে যাহাতে পরকেও মুখী করে, এবং নিজেও সকল দিক দিয়া সুখে থাকে, তাহার ব্যবস্থা করিতে যামিনীর মা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইয়াছিলেন। যামিনী ভাড়ারের কােজ সারিয়া, ড্রয়িং-রুমে গিয়া ঢুকিল। পিয়ানোটি চাবি বন্ধ থাকে, মা-হইলে মিহির তাহার উপর যে তাণ্ডবের স্বষ্টি করে, তাহাতে বাড়ির লোকের কান এবং পিয়ানো দুইই অত্যন্ত বেশী রকম জখম হয়। চাবি খুলিয়া যামিনী বাজাইতে বসিয়া গেল। গান-বাজনায় তাহার অসাধারণ অনুরাগ ছিল, বাজাইতে বাজাইতে সে যেন নিজের স্বই স্বর-সাগরে নিজেই ডুবিয়া গেল। একেবারে আত্মহারা হইয়া বাজাইতে লাগিল । হঠাৎ তাহার কানের কাছে কে চীৎকার করিয়া উঠিল, “আমার শার্টের বোতাম কে লাগিয়ে দেবে শুনি ? যা ত চমৎকার ধোপা জুটিয়েছ, কাপড় পরিষ্কার যত করুত্ব