পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ শোধ ᎼᎸ “কি রে ধৰ্ম্ম, তোর বাপের নাম কি ?” “বনমালী বিশ্বাস ।” “কোন বনমালা ? বাড়ি কোথায় ?” কানাই ধনার মূপের দিকে তাকাইল ! “চষ্ট্রীপুর ।” কথাটা শুনিয়াই কানাইয়ের মুখখন কঠিন হইয়া চোখ দুটি হিংস্রতায় জলিয়; উঠিল । ধন। সে মুখের দিকে তাকাইয় আড়ষ্ট | লক্ষ্মী তখন কানাইয়ের জন্য ঝারিতে জল ভরিতে আঙিনায় নামিয়াছে । কানাই তাহাকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, “এট। এ বাড়িতে কেন ? বনমালী আমার কি সধ্বনাশট করেছে জান না ?” জলভর। ঝারিট কfনাইয়ের পাশে রাখিতে রাপিতে লক্ষ্মা কহিল, “সবই জানি । আগে হাত-মুখ ধুয়ে মুখে কিছু নাওঁ । ঠাণ্ড হয়ে সব শুনোপন । কানাই ফিরিয়া দেপে ধন নাই । উঠিয় গিয়াছে । কোথায় গেল জানিতে ইচ্ছ। হইল না । কনাইয়েৰ হাতমুখ ধোয়। শেষ হইলে পাকশাল হইতে লক্ষ্মী একটি মাজ। কাসার বাটতে চারটি লাড়ু ও একটি ছোট খাটতে জল আনিয়। তাহার সম্মুখে রাখিয়া ঘরের ভিত চলিয়। গেল । ম{হার শেষে লক্ষ্মী কানাইযের হাতে জুটি পুনি আনিয়া দিলে সে গাঠরি খুলিয়া নিজেই তামুকটের ব্যবস্থা করিতে করিতে কহিল, “এইখানে বস লক্ষ্মি ।” "বসব কি এখন ? রামার জোগাড় আগে করি ।” “সে হবেখন” বলিয়৷ “লক্ষ্মীর একখানি হাতু ধরিয়৷ তাহাকে টানিয়া পাশে বসাইল । তারপর কহিল, “সাতদিনের ছুটি দেখতে দেখতে কেটে যাবে—” লক্ষ্মী বাহিরের অন্ধকারের দিকে তাকাইয়া ছোট একটি নিঃশ্বাস ফেলিল । কানাই কহিল, “বড় একলা ঠেকে, ন লক্ষ্মি ?” উত্তরে লক্ষ্মী একটু হাসিল মাত্র । “ঐ দেখ, আমি ভূলেই গেছি। গাঠরি থেকে সব বার কর ।” মুখে ঔদাসীন্যের আবরণ, টানিয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিগ “কি আছে ওতে ” কোন ফাকে চোখ টিপিয়া কানাই কহুিল, “দেখই” , স্বরটাও রহস্য ভর | লক্ষ্মী গাঠরি হইতে বাহির করিতে লাগিল, –নুতন ভূজোড়া সাডী, লাল টকটকে চওড়া পাড় যেন রক্তের ধারা : একখানি ঘন নীল রঙের আলোয়ান, ধারে ধারে সাদ ফুল, লতা, পতি , একপানি কালে রঙের মোট চিরুণী ; একশিশি আলতা, আপসেরটা চুন, সুপারী, পয়ের, পানের আরও নানা রকম মশল ও ছোট একখানি আয়না । এগুলির নীচে ছিল কম্বল, একজোড় পড়ম, কানাইয়ের ব্যবঙ্গত কাপড়, জাম প্রভৃতি । খুলিতে খুলিতে লক্ষ্মী কহিল, “ভালই হয়েছে । ছোড়াট শীতে কষ্ট পায় ।” “ও কি আমার বাড়িতেই থাকে ?” “কোথায় আর যাবে ?” “খবরদার বলছি, এ বাড়িতে ওর জায়গা নেই । আমার মাণিক রোগে শুধছে, ওর বাপ তখন জমিখান। নীলেম করে নিলে । তারই ছেলেকে---” বলিতে বলিতে লক্ষ্মীর হাত হইতে আলোয়ানখান টানিয়া লইয়। গায়ে জড়াইয়া দিল । নীল আলোয়ানের উপর লক্ষ্মীর মুন্দর মুখখানি ফুটিয়া রহিল যেন একটি পদ্ম । লক্ষ্মী তখন আপত্তি করিল না ; কানাইয়ের পাশ ঘেষিয়। বসিয়া কহিল, “সেই ও বছর তুমি যাবার পরই একদিন রাতে কি ঝড়-জল। সারারাত ঘুমোতে পারি না। গোয়ালে সৈরভী ছট্‌ফট্‌ করছে । মনে হ’ল, ঘরের দাওয়ায় কে যেন গুম্রে গুম্রে কাদছে। একবার ভাবলাম, দরজা খুলে দেখি ; কিন্তু ভয়ে পারলাম না। রাখাল ছোড়াটাও জরের জন্তে আসতে পারে নি। ভোরের দিকে ঝড়-জল থামলে বেরিয়ে দেখি, বারান্দার এক কোণে ছোড়াট। কুকুরের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে রয়েছে। সারারাতের জলের ঝাপটায় সব ভিজে, চোখ দু’টাে লাল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কথা কইতে পারে না । কে জানে কার বাছা। মনে হ’ল, আমার মাণিক থাকলে আজ এত বড়ই হ’ত । গায়ে হাত দিয়ে দেখি, আগুন । কোলে করে ঘরে শুইয়ে দিলাম। সাতদিন পরে ভুটা ছাড়ল, আলেfয়ানখানার ভাজ যখন

চোখ মেলে ভাকাল। আমায় বড় ভালবালে। আচ্ছা!