পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭২ কেমন তাহ ভাল করিয়া দেখিয়া লইবে, এই আশা প্রথম হইতেই তাহার মনে ছিল, কিন্তু চাদ উঠিতে বহু বিলম্ব আছে বুঝিতে পারির সে আর ততক্ষণ অপেক্ষ করে নাই। একসার তোরঙ সুটকেস খাবারেরটিন ও ইড়িপুটুলির প্রাচীরের ও-পারে অপরিচিত অস্পষ্টতার পায়ে তাহার তরুণ-মনের পূঞ্জ-নিবেদন প্রায় উজাড় করিয়াই ঢালিয়া দিয়াছে। জাহাজে যতক্ষণ আসিতেছিল, একবার তুলেও ভাবে নাই যে, মাধুর্য্যের অবলম্বন তাহার এত কাছাকাছি কোথাও কিছু অাছে। বাড়ী ছাড়িয়া আসিবার পূৰ্ব্বে বিলাত যাওয়া সম্পর্কে দুই দিন ধরিয়া বাবার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি করিয়া তাহার মন তিক্তবিরক্ত হইয়। ছিল, এমন অবস্থা তাহার ছিল না যে চতুষ্পার্থে বিস্তুত পল্লীপ্রকৃতির অজস্র অকুষ্ঠিত ঐশ্বৰ্য্য হইতে কণামাত্র নিজের মনের জন্য আহরণ করিতে পারে। কিন্তু কোন অপরিচিত রহস্তলোক হইতে এই যে সৌন্দয্যের-দূত আজ তাহার হৃদয়ে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে, এ ত বাহিরে দাড়াইয়া অকুমতির অপেক্ষ করে নাই, নিজের অধিকারকে প্রচার করিবার সঙ্গেসঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত করিয়া লইয়াছে । আর-কিছু ভাবিতে ইচ্ছা করিতেছে না, তবু বিগত-সন্ধ্যার সেই মহা-উত্তেজনার মুহূৰ্ত্ত-ক’টা পলায়নপর অজয়ের মনে পড়িয়া গেল । জাহাজের গতিবেগের স্পন্দনের সঙ্গে শিরায় শোণিত-স্রোতের স্পন্দন অলক্ষ্যে কখন সমতালে মিশিয়া গিয়াছে। সহসা কোথাও-কিছুনাই, প্রচণ্ড একটা ধাক্কা, সেইসঙ্গে জাহাজের গতি এবং শিরাতে রক্তগতি সমস্বরে একটা বিকট আৰ্ত্তনাদ করিয়া যেন আছড়াইয়া পড়িয়া থামিয়া গেল। তারপর বহুকষ্ঠের চীৎকার-চেঁচামেচি, “দুর্গে দুৰ্গতিনাশিনি, দুর্গে দুৰ্গতিনাশিনি,”.শিশুদের ক্ৰন্দন, নারীদের কোলাহল । ভয়াওঁ যাত্রীদের ক্ষিপ্ত চাঞ্চল্যকে কতকটা প্রশমিত করিবার উদ্দেশ্যে দোতলার ডেক হইতে একতলায় নামিবার সব-ক’টা সিড়িকে খালাসীরা কাছি জড়াইয়া বন্ধ করিয়া দিয়াছে। তারপর নিজেরা সারেঙের উচ্চকণ্ঠের নির্দেশ অনুযায়ী কখনও একতলায় কখনও Sకరీకరిఖీ দোতলায়, কখনও বা দোতলার ছাতে, কাছি-রেলিংরেলিঙের-থম বাহিয়, • লাফাইয়া, ঝুলিয়া, দ্রুতগডিতে ছুটিয়৷ ছিটকাইয় বেড়াইতেছে। সম্মুখে স্ত্রীপুরুষ-শিশুরুদ্ধ যে-ই পড়িতেছে তাহাকে কঠোরহস্তে ধাক্কা দিয়৷ সরাইয়া দিতেছে। অজয়ের গলার কাছটা শুকাইয়া উঠিডেছিল, কিন্তু সহজেই সমস্তকিছু হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়৷ লইয়। নির্লিপ্ত হইয়া যাইবার সঙ্কেত ছেলেবেলা হইতে তাহার আয়ত্ত ছিল বলিয়া কিছুই তাহার চোখ এড়াইয়া যাইতেছিল না । যে স্থূলদেহ প্রৌঢ়টিকে পরে সে তরুণীর সহযাত্রী বলিয়া বুঝিয়াছে তিনি অতি কাতরস্বরে ইষ্টনাম জপ করিতে করিতে সারেঙের পিছন পিছন ঘুরিতেছিলেন, বারবার তাহার পথে পড়িয় তাহার কাছে তাড়া থাইতেছিলেন, তবু তাহার সঙ্গ ছাড়িতেছিলেন না । তরুণীর সহযাক্রিণী রূপবর্তী ম:িলtটকে সে পলকের মত একবার প্রথমশ্রেণীর ডেকের রেলিঙের কাছে দেখিয়াছিল, মনে পড়িতেছে । তরুণী তখন কি করিতেছিল, কে জানে ? এমন আকস্মিক একটা দুর্ঘটনাও কি এক মুহূৰ্ত্ত তাহাকে চঞ্চল করে নাই ? কি ঘটিয়াছে সংবাদ লইবার জন্তু ও ত সে একবার বাহিরে আসিতে পারিত। তখন প্রচুর আলো ছিল, তাহার মুখখানি কেমন অত্যন্ত বিক্ষিপ্ততার মধ্যেও পলকের মত অজয় তাহা হইলে দেখিয়া লইতে পারিত । মজ্জিত বালুচরে ঠেকিয় জাহাজ প্রায় উল্টয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছিল যাত্রীদের বহুভাগ্যবলে মারাত্মক ক্ষতি কিছু হয় নাই, কেবল বিপরীত পথযাত্রী আর-একটা জাহাজের কয়েকঘণ্টাব্যাপী টানাটানির ফলে বালুচর ছাড়িয়া সে যখন গভীরতর জলে নামিয়া আসিল তখন দেখা গেল একদিককার চাকা দুমড়াইয়া ভাঙিয়া সে-যাত্রার মত সে প্রায় চলচ্ছক্তিরহিত হইয়া পড়িয়াছে। তাহা ছাড়া কলকব্জাও কোথাও কোথাও বিগড়াইয়াছে। নিকটতম ষ্টেশন পর্য্যন্ত কোনোগতিক্ষে জল কাটিয়া আসিয়া যাত্রীদের সে নামাইয়া দিয়া গেল, তারপর কাং-হইয়া-পড়া বিপুলাকার দেহটাৰে টানিী