পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ একটুখানি বাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়াছে, তাহার স্পর্শে জাগরণের ক্লাস্তি অতি সহজেই দূর হইয় গেল। নদী হইতে একটা ছোট খাড়ির মত আসিয়া অশ্বখগাছটির তলার কাছে শেষ হইয়া গিয়াছে, বাতাসে তাহার জল তরুতর করিয়া কঁাপিতেছে। নামিয়া গিয়া অশ্বখগাছটার জলতলচুৰী একটা শিকড়ের উপর বসিয়া সে ভাল করিয়া মুখ হাত ধুইল, তারপর কোচার কাপড়ে মুখ মুছিতে মুছিতে উপরে উঠিয়া আসিয়া অপরিসীম তৃপ্তিতে বুক ভরিয়া একটা নিঃশ্বাস লইল । পথ চলিতে চলিতে অনুভব করিল, আজিকার এই নিরুদ্দেশষাত্রা কি অপরূপ রূপ লইয়াই তাহাকে দেখা দিয়াছে। একদিকে অনন্তভূতপূৰ্ব্ব মাধুর্য্যের কুষ্ঠিত দুঃসহ গুরুভার সান্নিধ্য আর নাই ; অপরদিকে, যে অস্ফুট আনন্দের গ্রন্থি বন্ধনকে সে সঙ্গে করিয়া টানিয়া লইয়া চলিয়াছে, তাহাকে ফিরাইয়া লইয়া যাইবার সব ভার সেই গ্রন্থিসূত্রের উপর ন্যস্ত করিয়া পরিপূর্ণ নিলক্ষ্যতায় যতদূর খুশী সে চলিয়া যাইতে পারে। সব মিলাইয় নিজেকে সে সহসা অত্যন্ত বিস্ময়কর রকমের মুক্ত বলিয়া বোধ করিল। পুল বাহিয়া খাল পার হইবে স্থির ছিল, কিন্তু পুলের কাছাকাছি আসিয়া-পড়িয়া অকারণেই তাহার মতের বদল হইল। কাপড় গুটাইয়া পুলের নীচেকার, অগভীর জুল ভাঙিয়। সে খাল অতিক্রম করিল। ওপারে গিয়া তাহার চলার ছন্দে অলক্ষ্যে নৃত্যের তাল লাগিয়া গেল । মনের মধ্যে সেই তালের সঙ্গে তাল মিলাইয়া কোন একটা অত্যস্ত পরিচিত গানের স্বর গুঞ্জরিত হইতে লাগিল, কিন্তু কিছুতেই সেই গানের একটা কথাও তাহার মনে আসিল না । কিছুক্ষণ পরে ক্রমাগত একই পথ বাহিয়া চলায় অরুচি ধরিয়া যাওয়াতে অত্যন্ত অসংশয়িতরূপ অপথগুলি বাছিয়া বাছিয়া চলিতে লাগিল। শিশিরসিক্ত জুতাদুইটির তলা মরা ঘাসের টুকরা আর আর্দ্র বালির আস্তরণে ভার হইয়া উঠিতে লাগিল । পথে গুটি-দুইতিন শুগাল এবং একটি সজারুর সঙ্গে দেখা , হুইল, তাহাদিগকে প্রাণ ভরিয়া সে ভালবাসিল। একটা श्रृंद्यल $ፃ¢ এলাইয়া-পড়া কুচ্চির ঝাড়কে আবার তাহার সহকারসার্থীর আশ্রয় ধরাইয়া দিয়া গেল । প্রান্তর পার হইয়া যখন গ্রামের কাছাকাছি পৌছিল তখন পূৰ্ব্বদিগন্তে অস্ফুট রঙের আভাস চোখে পড়িতেছে। আমজাম-কাটাল-নারিকেলের বন ভরিয়া পার্থীর কুজন স্বরু হইয়াছে। বাতাসে উগ্র-মধুর নানাপ্রকারের পরিচিত-অপরিচিত গন্ধের সঞ্চার। যে-পথ এতক্ষণ কোমল ধূলিময় ছিল, তাহা ক্রমেই বেশী করিয়া শানের টুকরা এবং মৃৎপাত্রের ভগ্নাবশেযে আকীর্ণ হইয়৷ আসিতেছে । একবার ফিরিয়া দাড়াইয়া বহুদূরে, পূর্বদিগন্তের প্রায় কাছাকাছি জায়গায়, অশ্বথগাছটার আড়ালে করুগেটেড-টিনে ছাওয়া ক্ষুদ্র ষ্টেশনঘরটার দিকে সে চাহিয়৷ দেখিল । অতি সন্তপণে সমস্তকিছুর উপরে প্রত্যুষের আলো নামিয়া আসিতেছে। এতদূর হইতে কিছুই বোঝা গেল না, কিন্তু তাহার মনে হইল, সেখানেও যেন দু-একটি করিয়া মামুষের নড়াচড়া সুরু হইয়াছে। কল্পনা প্রখর হইয়া উঠিল, তাহার আলোকে স্পষ্ট দেখিতে পাইল, একটি স্বন্দর মুখ নদীর জলে প্রক্ষালিত ও উষার স্নিগ্ধ জ্যোতিতে মার্জিত হইয়৷ অপূৰ্ব্ব ঐ ধারণ " করিয়াছে। আজিকার প্রভাত যে চোখ মেলিয়াই সেই মুখটিকে দেখিতে পাইবে তাহ যেন সামান্য ঘটনা নহে, অসীমতা যেন তাহার আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া যাইবে । লজ-বিপন্নতার স্মৃতি স্নান হইয়া আসিতেছিল, মনে হইল কেন অনেক আগেই ফিরিয়া যায় নাই, একটি পরিপূর্ণ স্বৰ্য্যোদয় তাহার জীবনে ব্যর্থ হইল। মনে করিল, গ্রামের মধ্য দিয়া ঘুরিয়া গিয়া ভিন্নপথে ষ্টেশনে ফিরিবে, কতকগুলি ফুল কোথাও চোখে দেখিয়া যাওয়া চাই। তাহার জীবনে অলক্ষ্যে যে সৌন্দৰ্য্যলক্ষ্মীর আবির্ভাব হইয়াছে তাহার দুইখানি পায়ে সেইগুলির অর্থ্য মনে মনে সে বহন করিয়া লইয়া যাইবে । নানাজাতি গাছে ছাওয়া কতকগুলি উচু মাটির ঢিবি, একটু দূরে গাছের ভিড়ে প্রায় ঢাকাপড়া একটি বাড়ী। তারপর বেড়া-দেওয়া একটা ফলের বাগান, ছোট ডোবা, তারপর আবার একটি বাড়ী। নাটখদি দেশের ভিউ,