পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ყათ থাকিবে ইহাতে আর বিচিত্র কি ? কাৰ্ত্তক যে তাহাদের দলে ঠিক তাহা নয় তবে তাহাদের সঙ্গে অসদ্ভাবও ছিল না । তাহদের কয়েক জনের সঙ্গে কাৰ্ত্তিক পরামর্শ করিল যে-দুইজন তাহাকে অপমান করিয়াছিল তাহাদিগকে জব্ব করিতে হইবে । যুবকের প্রথমে রাজি হয় না। দেওয়ানজীর কাছে যাহার আসে যায় তাহদের পিছনে লাগা অসম সাহসের কথা। জলে বাস করিয়া কি কুমীরের সঙ্গে বিবাদ করা চলে ? কাৰ্বিক বুঝাইল এ দুইটা বদমায়েস লোক, কোন কাজকৰ্ম্মে আসে না, হয়ত ঠকাইবার চেষ্টায় আসে । ইহার মধ্যে একদিন বনবিহারী আসিয়া ত্রিলোচনের সঙ্গে দেখা করিয়া গেল। "কান্তিক দূর হইতে তাহাকে দেখিল, কিন্তু নিকটে ঘেষিল না, তখনও তাহার দল ঠিক তৈয়ার হয় নাই। কিন্তু তাহার পর দিবসই কাৰ্ত্তিক এক নূতন ব্যাপার দেখিল । ত্রিলোচন যে-ঘরে বসিতেন তাহার বাহিরে দুই জন ভীমকায় খোটা দরোয়ান লাঠি হাতে করিয়া বেঞ্চে বসিয়া রহিয়াছে। সেই রকম আর দুই জন ত্রিলোচনের বাড়ির সদর দরজায় মোতায়েন হইয়াছে । কাত্তিক তাড়াতাড়ি দু-চার জন ডানপিটে যুবককে ডাকিয় সেই উষ্ণীযধারা লগুড়হস্ত রুদ্র মূৰ্ত্তি দেখাইল । আহলাদে বুক ফুলাইয়া বলিল,-দেখেচিল, আমি ঠিক বলেছিলাম কি-না ? একজন কথাটা ঠিক বুঝিতে ন পারিয়া বলিল,— কি বলেছিলি ? —সে দুটো লোক বদমায়েস । তাদের জন্যই বাব। এ সব দরোয়ান রেখেচে । —ত বেশ, তাহলে আর আমাদের কিছু করতে হবে না । —তবে ত সব বুঝলি ! বাবার ঘরে ওরা আর ঢুকতে পাবে না। আর আমাকে যে অপমান করেছিল তার কি হবে ? —এবার যখন আসবে কিছু উত্তম-মধ্যম দেওয়া যাবে। সেজন্য অধিক দিন অপেক্ষা করিতে হইল না। এক দিন বৈকাল ৰেল৷ কাৰ্ত্তিক কাছারী বাড়ি হইতে S99శు কিছু দূরে ছেলেদের খেলা দেখিতেছিল, যুবকেরাও সেখানে ছিল। সেখান হইতে রাস্ত একটু দূরে। কাত্তিক দেখিল তামাচরণ ছড়ি হাতে করিয়া কোন দিকে দৃকপাত না করিয়া হন হন করিয়া কাছারী বাড়ির দিকে যাইতেছে । কাত্তিক অমনি চুপি চুপি বলিল, দুই জনের মধ্যে ঐ এক জন ! তৎক্ষণাৎ কাত্তিক আর পীচ সাত জন শু্যামাচরণের অমৃবৰ্ত্তী হইল, ইচ্ছা দূর হইতে একটু রঙ্গ দেখিবে। কাৰ্ত্তিক আর তাহার সঙ্গীরা দেখিল হ্যামাচরণ সোজা ত্রিলোচনের ঘরে যাইতেছে । যুগল দ্বাররক্ষকের মধ্যে একজন হাকিল,—ও বাবু, কাহা যাত হয় ? শ্যামাচরণ তবু দাড়ায় না, সে জানে তাহার প্রবেশপথ অবারিত, কাহার সাধ্য তাহার পথ রোপ করে ? অমনি এক জন দরোয়ান উঠিয় তাহার সম্মুখে দাড়াইল, কহিল,—বাবু, তুম বহির হয়, কেয়া বোলা স্বনী নহি ? দরোয়ানের দৈর্ঘ্য প্রস্থ দেখিয় শ্যামাচরণ দাড়াইল বটে, কিন্তু তাহার মনে কোন শঙ্কা হইল না। কহিল,— দাওয়ানজীর সঙ্গে আমার কিছু কাজ আছে। —কেয়া কাম ? নাম বতাও, তব ইত্তলা হোগ। শ্যামাচরণ কহিল,—আমার নাম শ্যামাচরণ, গিয়ে বললেই হবে । দরোয়ান ভিতরে গিয়া তখনই ফিরিয়৷ আসিল, উগ্রভাবে কহিল,—যাও বাবু, মুলাকাত নহি হোগা। শ্যামাচরণ প্রথমে বিশ্বাসই করে না। বলিল,—কি, দেখা হবে না ? আমার নাম ঠিক বলেছিলে কি ? --নাম কেয়া ইয়াদ নহি রহত ? নাম শ্যামাচরণ বোলা । শ্যামাচরণ বজাহতের স্থায় দাড়াইয়া রহিল। দরোয়ান বলিল,–বাৰু, আওর এক বাত দেওয়ান সাহেব হুকুম দিয়া ফের কভি নহি আন । আনে সে গাণ্ড কে বাহার নিকাল দিয়া যায়গা । অগত্য শ্যামাচরণ ফিরিল। কিছু দূর গিয়া মুষ্টিবদ্ধ হস্ত উত্তোলন করিয়া শাসাইয়া বলিল,—আচ্ছা, দেখে নেব দেওয়ান সাহেবকে ! হাতে যখন হাতকড়ী পড়বে তখন দেওয়ানগিরি ঘুচে যাবে।