পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏬᏑe So99శు বৃদ্ধার চোখ দুটি অকস্মাৎ উজ্জল হইয়া উঠিল, “তবে দেখ তো ভাই, আদেষ্টে তীখ আছে কি-না ?” বলিয়া কাতর উৎসুক দৃষ্টিতে বৃদ্ধ আমার দিকে চাহিলেন । কি বলিতে হইবে যুবকটির কথার আঁচে আমি পূর্বেই বুঝিয়াছিলাম ; বুদ্ধার করতলের দিকে ক্ষণকাল তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চাহিয়া বিস্ময়ের ভাণ করিয়া কহিলাম, “উঃ ! বিস্তর তীর্থ দেখছি!” বুদ্ধার মুখখানি প্রসন্ন হইয়া উঠিল, আমার ডান হাতখানি মুঠা করিয়া ধরিয়া তিনি কহিলেন, “মিছে কথা বলছিস্নে তো ভাই?” অসস্কোচে কহিলাম, “মোটেই না, হাতের চার দিকেই তীর্থ, তবে সব দরজা বন্ধ বলে যেতে পারেন নি। এইবার দরজা খুলবে।” মনে মনে কহিলাম, “দক্ষিণ দুয়ার ” আগ্রহভরে রোগিণী বালিশে ভর দিয়া উঠিতে চেষ্টা করিয়া পড়িয়া গেলেন । আমি কহিলাম, “ব্যস্ত হ’লে তো হবে না, সেরে উঠন আগে ।” বৃদ্ধ চোখ না মেলিয়াই কহিলেন, “ধনে পুত্রে লক্ষ্মীশ্বর হও ভাই ।” তারপর নীরবে তাহার ডান হাতখানি তুলিলেন, বুঝিলাম আশীৰ্ব্বাদ করিলেন। পরিচয্য ও পথ্য সম্বন্ধে যুবকটিকে দুই একটি উপদেশ দিয়া বৃদ্ধ ভদ্রলোকটির সহিত বাহির হইয় আসিলাম । পথে আসিতে আমার সঙ্গীর কাছে বৃদ্ধার জীবনের কাহিনী শুনিলাম। বুদ্ধার নাম দাথি ঠাকুরাণী । ভাল নাম দক্ষজা, অথবা দাক্ষায়ণী, – যে-কোনটি হইতে পারে । দাখিঠাকুরাণীর বিবাহ হইয়াছিল সাত বৎসর বয়সে এবং বৎসর ন! ঘুরিতেই বিধবা হইয়াছিলেন । সে বহুদিনের কথা । তারপর এই সত্তর বৎসর কাল দাখিঠাকুরাণী তাহার স্বামীর বাস্তুভিটায় একখানা একচালা ঘর ও কাঠা দেড়েক জমির সুপারীর বাগানখানি আশ্রয় করিয়া কাটাইয়াছেন । অনাহূত যৌবন দাথিঠাকুরাণীর দেহকেও আক্রমণ করিয়াছিল, সেই সঙ্গে সঙ্গে কিশোর যুবক ও প্রৌঢ় নানাবয়সের নর-সৈনিকেরাও অভিযান সুরু করিয়াছিলেন । কিন্তু একটি শীর্যহীন সম্মার্জনীর সহায়ে দাখিঠাকুরাণী তাহাদিগকে পরাজিত করিয়াছিলেন । সেই সঙ্গে মাথ৷ নেড়া করিয়া ও স্বহস্তে ডালের কাটা দিয়া মুখখানিকে ক্ষত বিক্ষত করিয়া, কাচা তেঁতুল থাইয়া সমস্ত দিন পান o পুকুরে স্বান করিয়া জর ডাকিয়া আনিয়া যৌবনকেও প্রতিহভ করিবার নিফুল চেষ্টা করিয়াছিলেন । । দাখিঠাকুরাণীর শেষ অবলম্বন বৃদ্ধ অন্ধ শাশুড়ী একদিন প্রাতঃকালে সজ্ঞানে গঙ্গালাভ করিলেন ; তখনও যৌবন সগৌরবে দাখিঠাকুরাণীর দেহে রাজত্ব করিতেছিল। ঠাকুরাণী অত্যন্ত কাদিলেন এবং বুড় ঘোষাল মহাশয়ের কাছে গিয়া কাদিয়া জানাইলেন যে, তাহাকে তীর্থে রাখিয়া আসা হোক। একক তীর্থবাসের বয়স হয় নাই বলিয়া মাতব্বর ঘোষাল মহাশয় তাহাকে নিরস্ত করিলেন । সে আজ পঞ্চাশ বৎসর আগেকার কথা । সেই দিন হইতে আজ পর্য্যন্ত প্রত্যহ দাথিঠাকুরাণ তীর্থযাত্র, তীর্থবাস ও তীর্থমৃত্যু কামনা করিয়া আসিতে ছিলেন । শেষে এমন অবস্থা হইয়াছিল যে গ্রামের কেত তীর্থ করিতে গেলে তাহকে শ্বশুরবাড়ী যাইতেছি এবং শ্বশুরবাড়ী না থাকিলে কোন কল্পিত কুটুম্ববাড়ীর নাম করিয়া বাহির হইতে হইত। নতুবা দাখিঠাকুরাণীর উপদ্রবের অন্ত থাকিত না ? তিনি আহারনিদ্রা ত্যাগ করিয়া তীৰ্থকামীর দরজায় ধরনা দিয়া পড়িয়৷ থাকিতেন । এ জন্য দুর্ভোগও র্তাহাকে কম ভুগিতে হয় নাই । গত বৎসর বৃন্দাবন ঠাকুর চৈত্র মাসে তীর্থে লইয়া যাইবেন আশ্বাস দিলেন। ঠাকুরাণ ত বৈশাখ হইতে আরম্ভ করিয়া চৈত্র পর্যান্ত বৃন্দাবন ঠাকুরের পত্নীর সেবা, গোয়াল পরিষ্কার, কাথা সেলাই, নারায়ণের ভোগ পাক ইত্যাদি বিচিত্র কাজ অমানবদনে করিয়া গেলেন। চৈত্র মাস্থেতেইশে তারিখে বৃন্দাবন ঠাকুর পাজি খুলিয়া ੋਸ਼ তুলিয়া কহিলেন, “রামঃ ! সেই দিন বাড়ী আসিয়া দাথি ঠাকুরাণী শয্যা লইলেন এবং মাস খানেকের মধ্যে বিছানা ছাড়িয়া উঠিলেন না। তাহার পরেই এই ব্যাধি । এই পর্যন্ত বলিয়াই বুদ্ধ হাসিয়া কহিলেন, “তীর্থ-ব্যাধি আর কি ?” কেন জানি না আমি হাসিতে পারিলাম না। পরদিন আবার ডাক আসিল । মামীম কহিলেন, “ওই তেখ-পাগল বুড়ীর কাছে যাচ্ছিস আবার । জালিয়ে ; মারবে যে !” অকাল দেখছি যে, তীর্থ তো নেই এ বছর । ,