\o S99áు গড়খাই পার হইয়া বনের সামনে আসিয়৷ ঘোড়া দাড়াইল । একটা গাছের ডালে লাগাম বাধিয়া শঙ্কর আমিনদের সেই জঙ্গল-কাটা সঙ্কীর্ণ পথের উপর আসিল । প্রবেশ-মুখের দুইধারে দুইটি অতিবৃহৎ শিরীষ গাছ, বিকালে ভজহরির সঙ্গে কথায় কথায় এসব নজরে পড়ে নাই, এখন বোধ হইল মায়াপুরীর সিংহদ্বার উহার ! সেইখানে দাড়াইয়া কিছুক্ষণ সে সেই ছায়াময় নৈশ বনভূমি দেখিতে লাগিল । আর তাহার অকুমাত্র সন্দেহ রহিল না, মৃত্যুপারের গুপ্ত রহস্ত আজি প্রভাত হইবার পূৰ্ব্বে ঐখান হইতে নিশ্চয় আবিষ্কার করিতে পরিবে । আমাদের জন্মের বহুকাল আগে এই সুন্দরী পৃথিবীকে যারা ভোগ করিত বৰ্ত্তমান কালের দুঃসহ আলো হইতে তার সব তাদের অদ্ভুত রীতি-নীতি বীৰ্য ঐশ্বৰ্য্য প্রেম লইয়। সৌরালোকবিহীন ঐ বন-রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া আছে । আজ জনহীন মধ্য-রাত্রে যদি এই সিংহ-দ্বারে দাড়াইয় নাম ধরিয়া ধরিয়৷ ডাক দেওয়া যায় শতাব্দীপারের বিচিত্র মানুষেরা অন্ধকারের যবনিকা তুলিয়৷ নিশ্চয় চাহিয়া দেখিবে । কয়েক পা আগাইতে অসাবধান পায়ের নীচে শুকন ডালপালা মড়মড় করিয়া ভাঙিয়া যেন মৰ্ম্মস্থানে বড় ব্যথা পাইয়া বনভূমি আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। স্থির গম্ভীর অন্ধকারে নির্ণিরীক্ষ সাস্ত্রীগণ তাহাকে বাক্যহীন আদেশ করিল—জুতা খুলিয়; এস– শুকন পাতা খসখস করিতেছে, চারিপাশে কত লোকের আনাগোনা-জ্যোৎস্নার অালো হইতে আঁধারে আসিয়া শঙ্করের চোখ ধাধিয়া গিয়াছে বলিয়াই সে যেন কিছু দেখিতে পাইতেছে না । মনের ঔৎস্থক্যে উদ্বেগাকুল আনন্দে কম্পিতহস্তে পকেট হইতে তাড়াতাড়ি সে টচ বাহির করিয়া জালিল । জালিয়া চারিঞ্জিক ঘুরাইয়া ফিরাইয়া দেখে—শুন্য বন। বিশ্বাস হইল না, বারম্বার দেখিতে লাগিল ।--আর একটা দিনের ব্যাপার শঙ্করের মনে পড়ে। দুপুরবেলা, বিয়ের কয়েকট দিন পরেই স্থধারাণী ও আর কে-কে তার নুতন দামী লইয়া চুরি করিয়৷ খেলিতেছিল। তখন তার আর কি গ্রামে নিমন্ত্রণে যাইবার কথা, সন্ধ্যার আগে ফিরিবার সম্ভাবনা নাই । কিন্তু কি গতিকে যাওয়া হইল না । বাহির হইতে খেলুড়েদের খুব হৈ-চৈ শোন। যাইতেছিল ; কিন্তু ঘরে ঢুকিতে না ঢুকিতে সকলে কোন দিক দিয়া কি করিয়া যে পলাইয় গেল—শঙ্কর দেখিয়াছিল, কেবল তাসগুলি বিছানার উপর ছড়ানে। -- টর্চের আলোয় কাটাবনের ফঁাকে ফঁাকে সাবধানে দীঘির সোপানের কাছে গিয়া সে বসিল । চিক্চিক্ করিতেছে । আলো নি ভাইয় চুপটি করিয়। অনেকক্ষণ সে বসিয়া রহিল । ক্রমে চাদ পশ্চিমে হেলিয়া পড়িল । কোন দিকে কোন শক নাই, তবু অল্পভব হয়—তার চারপাশের বনবাসীক ক্রমশঃ অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছে । তাহার একটি অতি দরকারী নিত্যকৰ্ম্ম করিয়া থাকে, শঙ্কর যতক্ষণ এখানে থাকিবে ততক্ষণ তা’ হইবে ন!—কিন্তু তাড় বড় বেশ । জলে জ্যোৎস্ন: প্রতিদিন এই সময়ে নি:শব্দে ইহার তার চলিয়া যাওয়ার প্রতীক্ষা করিতেছে । হঠাৎ কোনদিক হইতে তুহু করিয়া হাওয়া বহিল, এক মুহুর্তে মৰ্ম্মরিত বনভূমি সচকিত হইয়। উঠিল । উংসবক্ষেত্রে নিমন্ত্রিতের! এইবার ধেন আসিয়া পড়িয়াছে, অথচ এদিকে কোন কিছুর জোগাড় নাই । চারিদিকে মহ সোরগোল পড়িয়া গেল। অন্ধকার রাত্রির পদধ্বনির মত সহস্ত্ৰে সহস্ৰে ছুটাছুটি করিতেছে। পাতার ফাকে ফঁাকে এখানেওখানে কম্পমান ক্ষীণ জ্যোৎস্না, সে যেন মহামহিমাণব যাহারা সব আসিয়াছে তাহদের সঙ্গের সিপাহীসৈন্যের বল্লমের সুতীক্ষু ফল । নিঃশব্দচারীর অঙ্গুলিসস্কেন্তে শঙ্করকে দেখাইয় দেখাইয়া পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিতে লাগিল—এ কে ? এ কোথাকার কে-চিনি না ত ? উৎকর্ণ হইয়া সমস্ত শ্রবণশক্তি দিয়া শঙ্কর আরও যেন শুনিতে লাগিল, কিছুদূরে সর্বশেষ সোপানের নীচে কে যেন গুমরিয়৷ গুমরিয়া কাদিতেছে । কণ্ঠ অনতিস্ফুট, কিন্তু চাপ কামার মধ্য দিয়া গলিয়৷ গলিয়া তার সমস্ত ব্যথা বনভূমির বাতাসের সঙ্গে চতুদিকে সঞ্চরণ করিয়া বেড়াইতে লাগিল। অন্ধকারলিপ্ত প্রেতের মত গাছের মুখে আঙ্গুল দিয়া তাহাকে বারঘর থামিতে ইসার করিতেছে-- $..
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬
অবয়ব