৭৫৬ তাহার সহিত দেখা করে নাই। শু্যামাচরণ কিছু টাকা পাইয়াছিল বটে, কিন্তু সে লক্ষ্মীছাড়া, দুশ্চরিত্র, টাকা রাখিতে জানিত না । কাজের মধ্যে মোটর চালাইতে জানিত, অগত্য চাকরির চেষ্টায় কলিকাতায় গেল। কিছুদিন ঘোরাঘুরি করিয়া একটা চাকরি জুটিল। চতুৰ্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ স্নবর্ণপুরে গঙ্গাধর ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করিয়া হরিনাথকে কহিল, সোনাপুর যাবে ? —কেন, সেখানে কি হবে ? —দেওয়ান ত্রিলোচন মজুমদারের সঙ্গে দেখা করবে । -সে আবার কে ? আর তুমি ও রকম সেজে এখন কোথায় গিয়েছিলে ? —না সাজলে সোনাপুরও জানতাম না, দেওয়ান ত্রিলোচনেরও নাম শোনা হ’ত না । গঙ্গাধর হরিনাথকে সকল কথা বলিল । বনবিহারী কিছু সন্দেহ করিয়াছে কি-না তাহ স্থির করা যায় না, কিন্তু গঙ্গাধরের টেলিগ্রাম সে দেখিয়াছিল। হয়ত ভাবিয়াছিল যাহার নামে টেলিগ্রাম তাহার সহিত সাক্ষাং হইলে টাকা পাইবার সুবিধা হইতে পারে। হয়ত হরিনাথ ও গঙ্গাধরের প্রতি তাহার অন্যরূপ সংশয় হইয়াছিল। বনবিহারীর চিঠির কথাও গঙ্গাধর বলিল । এই দেওয়ান কে আর বনবিহারীর মতন লোকের সহিত তাহার কি কাজ থাকিতে পারে ? আর কোন কাজ থাকিলেই বা বিচিত্র ফি ? দেওয়ানী অনেক ফিকিরের কাজ, নানা ফন্দীর প্রয়োজন হয়, সেজন্য সব রকম লোক নিযুক্ত করিতে হয় । সে রাত্রি সেখানে কাটাইয়া পর দিবস দুই বন্ধু স্ববর্ণপুরে যাত্রা করিল। বনবিহারী ত্রিলোচনকে যে পত্র লিখিয়াছিল তাহাতে এইটুকু লেখা ছিল, অপর লোক সন্ধান করিতেছে। সাক্ষাতু সকল কথা বলিব। S99āు পত্রে কাহারও স্বাক্ষর কিংবা কোন ঠিকানা ছিল ন, তথাপি ত্রিলোচনের বুঝিতে বাকি রহিল না যে, ইহা বনবিহারীর লেখা এবং ইহাতে বিশেষ আশঙ্কার কারণ আছে। যাহারা সন্ধান করিতেছে তাহার কে, কিসের সন্ধান করিতেছে ? জমিদারদের বাড়ি ছাড় অপর কেহ কেন সন্ধান করিবে, আর সন্ধান করিয়া জানিবার কি আছে ? করুণাময়ী ও প্রবোধচন্দ্র জলে ডুবিয়া মারা গিয়াছেন এ কথা ত সকলেই জানে, আর এমন লোক কে থাকিতে পারে যে, এ বিষয়ে আবার সন্ধান করিবে ? এক দিন সন্ধ্যার পর বনবিহারী আসিল । কাক্টিক দেখিল বনবিহারী তাহদের বাড়িতে আসিতেই ত্রিলোচন তাহাকে ডাকাইয়া পাঠাইলেন ও বৈঠকখানায় বসিয়া অনেকক্ষণ কথা কহিলেন । কাৰ্ত্তিকের ইচ্ছা ছিল গ্রামের যুবকদিগকে ডাকিয়৷ বনবিহারীকেও কিছু শিক্ষণ দেয়, কিন্তু ত্রিলোচন তাহার সহিত যেরূপ ভাবে গোপনে কথা কহিতেছিল তাহাতে কীৰ্ত্তিকের সাহস হইল না । বনবিহারী ফি মতলব আঁটিয়া আসিয়াছিল ত্রিলোচনের তাহা বুঝিবার কোন সম্ভাবনা ছিল না। ত্রিলোচন জানিতেন প্রবোধচন্দ্র ও করুণাময়ী দুই জনেরই মৃত্যু হইয়াছে, বনবিহারীর সংশয় ছিল এক জন রক্ষা পাইয়াছে, কিন্তু সে কথা ত্রিলোচনকে বলিবার সময় এখনও আসে নাই। এখন ত্রিলোচন একটু ভয় পাইলেই বনবিহারীর স্থবিধা হইবে। আর কাহারা কি সন্ধান করিতেছে সে কথাও তাহার মনে ছিল এবং সেখান হইতে কিছু পাইবে এমন আশাও হইয়াছিল। উপস্থিত ত্ৰিলোচনের কাছে কিছু পাওয়া যাইবে । দুই জনের কথাবার্তা অত্যন্ত মৃদুস্বরে হইতেছিল । ত্ৰিলোচন অত্যন্ত দুর্ভাবনায় পড়িয়াছিলেন। বলিতেছিলেন,- তোমার কথায় আমি শু্যামাচরণকে হাকিয়ে দিয়েছি, সেই অবধি আমার মনে হচ্চে সে একটা কিছু গোল করবে। বনবিহারী মাথা নাড়িল, বলিল,-সে আবার কি করবে ? একটি কথা প্রকাশ হ’লে সেই ত আগে ধরা পড়বে, বুঝলেন কি-না ? সে বড় বাড়াবাড়ি
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৬
অবয়ব