পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

بہاولا۹ S9Dāు টের পাইল সমূদ্রের গভীরাংশে অস্বাভাবিক কিছু ঘটিতেছে । দাড়াইয়া উঠিয়া সে সমূদ্রের পানে লক্ষ্য করিল—অকস্মাৎ তাহার মূৰ্ত্তি কালে করাল হইয়। উঠিয়াছে, এবং তাহার আচরণও অদ্ভুত, উহা যেন বাতাসের বিরুদ্ধে ছুটিতেছে—তীরভূমির বিপরীত দিকে যেন তাহীর গতি । অচিরে সেই অদ্ভুত ব্যাপার গ্রামের লোকেরাও লক্ষ্য করিল। মনে হইল ইতিপূর্বের ভূকম্পন কেহ ঠাহর করিতে পারে নাই, কিন্তু সমুদ্রের গতি দেখিয়া সকলেই অবাক হইয়াছে। ব্যাপারটা ভাল করিয়া দেখার জন্য তাহার কেবল বেলাভূমি পর্য্যস্ত নয়, বেলাভূমি অতিক্রম করিয়াও ছুটিয়া চলিয়াছে । স্থানীয় সমুদ্রতীরে এমন ধারা ভাটা কখনও দেখিয়াছে বলিয়া কোনো জীবিত মানুষের মনে পড়ে না। এ যে একেবারে অদৃশ্যপূৰ্ব্ব-ভৌতিক কাণ্ডের মত। হামাগুচির চোখের সম্মুখে সমুদ্রগর্ভের খাজকাটা অচেনা বালুবিথার ও আগাছায় ভরা শৈলমাল জাগিয়া উঠিতে লাগিল। নীচেকার গ্রামে কেহই সেই ভয়ানক ভাটার তাৎপর্ঘ্য অকুমান করিতে পারিতেছে বলিয়া মনে হইল না । হামাগুচি নিজেও ইতিপূৰ্ব্বে এমন ব্যাপার কখনও প্রত্যক্ষ করে নাই, তবে শৈশবে ঠাকুর্দার-মুখে-শোনা গল্প তার মনে পড়িল—স্থানীয় তীরভূমির কোনো কিংবদন্তীই হামাগুচির অজ্ঞাত নয়। সমুদ্র কি করিতে উদ্যত তাহা সে বেশ বুঝিতে পারিল । হয়ত সে ভাবিল, গ্রামে সংবাদ দিতে কতটা সময় লাগিবে, কিম্বা পাহাড়ের উপরকার বৌদ্ধ মন্দিরের পুরোহিতকে দিয়া সেখানকার বড় ঘণ্টা বাজানর ব্যবস্থা করিতেই বা কত সময় যাইবে...কিন্তু সে কি ভাবিয়াছিল, তাহ। বলিতে যতটা সময় লাগিবে, তার চেয়ে ঢের কম সময়ের মধ্যেই সে ভাবিয়া কৰ্ত্তব্য ঠিক করিয়া ফেলিল । নাতিকে ডাক দিয়া বলিল—তাদ ! ধী ক’রে একটা মশাল জালিয়ে দে দেখি । ঝড়ের রাতে বা কোনো কোনো শিস্তে উৎসবে ব্যবহারের জন্ত সমুদ্রতীরের অনেক গৃহে তাইমাৎস্থ বা বেদাঙ্কর মশাল তৈরি থাকে। বালক তখনই একটা মশাল জালাইয় ফুেলিল, বুড় সেটা হাতে করিয়া দ্রুতপদে ধানক্ষেতে গিয়া হাজির হইল। শত শত মরাই চালানী ধানে ঠাসা—বুড়ার মূলধনের প্রায় সবটাই সেই ধানের মধ্যে । ঢালুর প্রায় প্রাস্তে যেগুলো ছিল তাদের গায়ে সে টপ টপ করিয়া জলন্ত মশাল ছোয়াইয় দিল—দুৰ্ব্বল প্রাচীন পায়ে যত শীঘ্র সম্ভব ছুটিয়া ছুটিয়া সে একটার পর একটা মরাইয়ে আগুন দিতে লাগিল। রোদেপোড়া শুকনো খটখটে মরাইগুলো নিমেষে জলিয়। উঠিল। সমুদ্রের হাওয়ার তেজ ক্রমেই বাড়িতেছে, সেই হাওয়ার তাড়নে আগুন স্থলের দিকে জিভ মেলিল দেখিতে দেখিতে সারি সারি মরাই জলিয়া উঠিল— ধোয়ার থামগুলো আকাশপানে উঠিয়া মিলিয়া মিশিয়; একটা বিরাট মেঘের ঘূর্ণি রচনা করিল। বিস্ময়ে এবং ভয়ে বালক তাঁদ ঠাকুর্দার পিছু পিছু ছুটিতে ছুটিতে কেবল বলিতে লাগিল— দাদু ! কেন ? দাদু ! কেন ?—কেন ? কিন্তু দাদু জবাব দিল না। বুঝাইবার সময় নাই, চারশ’ মানুষের জীবন সঙ্কট-সে কেবল তাহাই ভাবিতেছিল । কিছুক্ষণ বালক সেই জলস্ত ধানের দিকে বিহ্বলচোখে চাহিয়া রহিল, তারপর র্কাদিয়া ফেলিল । নিশ্চয় দাদু পাগল হইয়াছে—ইহা ভাবিয়া সে ছুটিয়া বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিল। মরাইয়ের পর মরাইয়ে আগুন দিতে দিতে অবশেযে হামাগুচি ক্ষেতের প্রান্তে গিয়া পৌছিল। কৰ্ত্তব্য শেষ হইয়াছে, এইবার মশাল ফেলিয়া দিয়া সে স্থির হইয়া দাড়াইল । ওদিকে গিরি-মন্দিরের পূজারী অগ্নিকাণ্ড দেখিয়া অতিকায় ঘণ্টা বাঞ্জাইতে সুরু করিয়াছে। আগুন ও সেই ঘণ্টার মিলিত আহবানে গ্রামের লোকের অবিলম্বে সাড়া দিল। হামাগুচি দেখিতে পাইল, বেলাবালুর উপর দিয়া তটভূমি অতিক্রম করিয়া গ্রামের ভিতর দিয়া তাহারা দ্রুতগতি উঠিয়া আসিতেছে পিপড়ার সারির মত। মন বড় ব্যাকুল, তাই তার মনে হইল সকলে ভারি ধীরে ধীরে আসিতেছে—এক একটি মুহূৰ্ত্ত যেন এক এক যুগ স্বৰ্য্য অস্তমান। উপসাগরের বলিচিহ্নিত শয্যা এবং তাহারও পরে একটি বিপুল বিচিত্র পাণ্ডুর