পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশ্বিন নরদেবতা ૧૭૧ রি কমলারঙের অস্ত-আভায় উদ্ভাসিত ; আর তথনও সমুদ্র দিগন্তপানে ছুটিয়া পালাইতেছে। যাহাই হোক, আসলে হামাগুচিকে খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করিতে হয় নাই । সৰ্ব্বপ্রথম একদল কৰ্ম্মঠ ও তংপর কৃষাণ যুবক আসিয়া উপস্থিত হইল এবং অবিলম্বে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়ার উদযোগ করিল। দেখিয়া হামাগুচি ই-ই করিয়া উঠিল, দুই হাত তুলিয়া তাহাদিগকে থামাইয়া দিল— আরে থামো ! থামো ! জলতে দাও । সমস্ত গ্রাম আমুক—সকলের অাস চাই । দারুণ বিপদ—“তইহেন wો’ সমস্ত গ্রামই আসিতেছিল। হামাগুচি গনিতে লাগিল । অচিরে গ্রামের সমস্ত যুবক ও বালকের। আসিয়া পৌছিল এবং শক্ত সমর্থ স্ত্রীলোক ও বালিকাও অনেকে আসিল , তারপর আসিল অধিকাংশ প্রাচীনেরা, আর জননীরা আসিল শিশুকে পিঠে বাধিয়। বালকবালিকারাও আসিল—কারণ তাহারাও হাতে হাতে জল আগাইয়া দিতে পারিবে। প্রাচীনদলের মধ্যে যারা দুৰ্ব্বলতাবশত প্রথম ধাক্কায় আসিয়া পৌছিতে পারে নাই, এখন দেখ গেল তার। চড়াই পথে অনেকট। উঠিয়া আসিয়াছে । ভিড় ক্রমেই বাড়িয়া উঠিল, কিন্তু তখনও কেহই কিছু জানে না, বিষণ্ণ বিস্ময়ে কেবল জলন্ত ক্ষেতের পানে আর মোড়লের স্থির উদাসীন মুখের পানে তাহারা চাহিয়া চাহিয়া দেথিতে লাগিল । ব্যাপার কি ?—বালক তাদাকে কেহ কেহ প্রশ্ন করিল। সে ফোপাইয় ফোপাইয়। কঁদে আর বলে—দাদু পাগল হয়েচে—দাছুকে আমার ভয় করে। নইলে ইচ্ছে ক’রে ধানে আগুন লাগালে কেন ? আমি দেখেচি আগুন লাগাতে । আমি দেখেচি ! হামাগুচি বলিল, ধানের কথা ও যা বলছে তা ঠিক । আমিই ধানে আগুন দিয়েছি ।---সবাই এল কি ? পরিবারের কৰ্ত্তারা আশেপাশে আর পাহাড়ের তলার দকে লক্ষ্য করিয়া উত্তর দিল—সকলেই উপস্থিত । ফু-একজন ষার বাকি আছে, এখনি এসে পড়বে. কিন্তু ব্যাপার ত কিছু বুঝছি না ! খোলা দিকটার পানে আণ্ডল বাড়াইয়া যথাসম্ভব উচ্চকণ্ঠে বুড় হাকিল—“কিতী—এসেছে ! বল এখন, আমি কি পাগল হয়েচি ? প্রদোষান্ধকারের মাঝ দিয়া সকলে পূৰ্ব্বদিকে দৃষ্টি ফিরাইল। কৃষ্ণাভ দিকৃসীমায় একটি সুদীর্ঘ শীর্ণ অস্পষ্ট রেখা চোখে পড়িল—কোনোকালে যেখানে তটভূমি ছিল না সেখানে তটভূমির আভাসের মত। দেখিতে দেখিতে সেই শীর্ণ রেখা স্থূল হইয়া উঠিতে লাগিল— তারাভিমুখে অগ্রসর হওয়ার কালে দর্শকের চোখের সামনে তটরেখা যেমন করিয়া ক্রমে ক্রমে সরু হইতে মোট হইয়া ওঠে। কেবল এক্ষেত্রে ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটিতেছে যে কিছুর সঙ্গে তার তুলনাই হয় না। কারণ সেই দূরবিলম্বিত কৃষ্ণরেখা আর কিছু নয়—সমুদ্রের প্রত্যাবর্তন ! গিরিশৃঙ্গের মত উত্তাল সমুদ্র যেন পাথ মেলিয়া শ্যেনের মত উড়িয়া আসিতেছে । ‘ৎসুনামি' *—জনতা আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল । তারপর সমস্ত আৰ্ত্তনাদ, সমস্ত শব্দ এবং শক শোনার সমস্ত শক্তি লুপ্ত হইল এমন একটা সজঘর্ষে যার নাম নাই, যা এমন গুরুভার যে শত বজ্রপাতও তার কাছে নগণ্য । পৰ্ব্বতপ্রমাণ জলোচ্ছ্বাস তটভূমির উপর আঘাত হানিল, সেই আঘাতে গিরিশ্ৰেণী শিহরিয়া উঠিল, আর বারিশীর্যে ফেনভঙ্গ তড়িতাস্তরণের মত ঝলসিয়া উঠিল । তারপর মুহূৰ্ত্তকাল কেবল দেখা গেল বারিশীকরের একটা ঝড় ঢালু বাহিয়া মেঘের মত উপরপানে ছুটিয়া আসিতেছে— ইহা ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না। কিন্তু সেইটুকুই যথেষ্ট-ভঙ্গী দেখিয়াই আতঙ্কে জনতা হুড়মুড় করিয়া পিছু হটিয়া গেল । তারপর আবার যখন দেখিল, তখন দেখিতে পাইল, যেখানে তাহাদের গৃহ ছিল সে-স্থানের উপর দিয়া সমূদ্রের শ্বেত বিভীষিকা উন্মাদের মত ছুটিতেছে। বারিরাশি হুহুঙ্কারে পিছাইয়া গেল, যাইবার সময় ধরিত্রীর অস্ত্র সবলে ছিড়িয়া লইল । দুইবার তিনবার পাচবার সমুদ্র আঘাত হানিল ও পিছু হটিল—তরঙ্গোচ্ছাস ক্রমেই খাটে হইতে লাগিল, অবশেষে সমুদ্র তার আদিম শয্যায় ফিরিয়া সেইখানেই রহিয়া গেল। গর্জন অবশ্য

  • সমুদ্রের আকস্মিক জলোচ্ছাস ( tidal wave) ।